শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সাত মাসে শনাক্ত ৪২

সীমান্তবর্তী খুলনা অঞ্চলের জেলায় বাড়ছে এইডস রোগী

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২২, ১২:০৪ এএম

গড় হিসাবে প্রতি মাসে ৬ জন আক্রান্ত : ৩ জনের মৃত্যু : আক্রান্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক : ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাই প্রতিরোধের প্রধান উপায়
ভারত সীমান্তবর্তী বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও নড়াইল জেলায় নীরবে মরণব্যাধি এইচআইভি এইডস এর সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গত সাত মাসে এই চার জেলায় ৪২ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে আক্রান্ত হচ্ছেন ছয়জন। মারা গেছেন তিনজন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আক্রান্তদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। নারীরা অধিক সংখ্যায় আক্রান্ত হলে তা দ্রæত বিস্তারের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের এআরটি সেন্টার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) এর তথ্য মতে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত সাত মাসে চার জেলায় ৫১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে ৪২ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে এআরটি সেন্টার থেকে এক হাজার ২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এইডস শনাক্ত হয়েছিল ২৮ জনের। এর মধ্যে খুলনায় আক্রান্ত ছিল ১৮ জন। এ সময়ের মধ্যে এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাতজন। মৃতদের মধ্যে খুলনার ছিলেন চারজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খুলনাঞ্চলে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে- এ অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নানা কারণে ভারতে প্রায়ই যাতায়াত করেন। বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতের ট্রাক অহরহ প্রবেশ করছে। এর চালক ও সহকারীদের মাধ্যমে বিস্তার ঘটছে। পাচারের শিকার হয়ে ভারতে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া নারীদের একটি বড় অংশ খুলনাঞ্চলের। তারা ও এ রোগ বিস্তারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে সমকামিতা ও অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ায় এ রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

২০১৯ সালে বেসরকারি সংগঠন আশার আলো খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোর জেলার এক হাজার ২৫৮ জন বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের মাঝে একটি জরিপ করেছিল। শতকরা ১৭ ভাগ নারী পুরুষ সমকামিতায় আসক্ত বলে জরিপে উঠে এসেছিল। একই জরিপে শতকরা ২১ ভাগ নারী ও পুরুষ একাধিক শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকার তথ্যও পাওয়া গিয়েছিল।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করলে যেকোন সময় বাংলাদেশে এইডস বাড়তে পারে। কারণ প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারে প্রচুর সংখ্যায় এইডস রোগী রয়েছে। এইডস টেষ্ট বা স্ক্রিনিং টেস্টে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রোগী শনাক্তে স্ক্রিনিং টেস্ট বাড়াতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকা ও বিদেশ গমনকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে এইচআইভি/এইডস পরীক্ষা করাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, অভিবাসী, পুশব্যাক হওয়া জনগণ এবং বেশি আক্রান্ত পাওয়া এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। বেশিরভাগ মানুষই জানেন না তাদের এইডস হয়েছে। আর জানলেও বিভিন্ন কারণে গোপন রাখেন। এইডস দুইভাবে ছড়ায়- শারীরিক মিলন ও রক্তের মাধ্যমে। দেশে এতদিন পর্যন্ত যতজন নারী আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কেউই সরাসরি হননি। প্রত্যেকেই আক্রান্ত হয়েছে শারীরিক মিলনের মাধ্যমে।
খুমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর কাম এডমিনেষ্ট্রেটর দিবেশ ওঝা বলেন, এইডস শনাক্তের মধ্যে গত নভেম্বর মাসে আটজন, ডিসেম্বর মাসে একজন, জানুয়ারিতে দশজন, ফেব্রæয়ারিতে তিনজন, মার্চে ছয়জন, এপ্রিলে নয়জন এবং মে মাসে পাঁচজনের এইডস শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের বেশিরভাগই বিদেশ ফেরত বা বিদেশে যাতায়াত বেশি। প্রবাসীদের যখন এইডস হয়, তখন তারা নিজেরাও জানে না। বেশির ভাগ প্রবাসীই বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করেন ও সন্তান নেন। সেখান থেকেই মায়েদের এবং সন্তানের শরীরে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে শনাক্তের মধ্যে রয়েছে সমকামীরা।

খুলনার চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, এইচআইভি প্রতিরোধের মূল উপাদান হল- শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাই এইডস প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। যারা শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নেন, তাদের বেলায় উৎকৃষ্ট উপায় হল- ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ না নেওয়া। শরীরে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে সে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এইচআইভি রয়েছে কী না।

যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কারো যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে দ্রæত চিকিৎসা করাতে হবে। এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। যেসব মায়েরা প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ৮৫ ভাগ। জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন