শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

৩৭ বছরে ইনকিলাব

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

আলহামদুলিল্লাহ। নানা প্রতিকূলতা ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব আজ ৪ জুন ৩৬ বছর পূর্ণ করে ৩৭ বছরে পদার্পণ করলো। এ জন্য আমরা মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত মুহম্মদ (স.)-এর প্রতি পেশ করছি দরুদ ও সালাম। ৩৬ বছর আগে দেশ ও জনগণের পক্ষে কথা বলার বলিষ্ঠ অঙ্গীকার নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান সংস্কারক, দার্শনিক ও রাজনীতিক হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। এ উপলক্ষে আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে স্মরণ করছি। কোনো সংবাদপত্রের তিন যুগ অতিক্রম করা দেশের সংবাদপত্র জগতে এক বিরল ঘটনা। ৩৬ বছর আগে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে ইনকিলাব ধ্রুবতারা হয়ে আবির্ভূত হয়। প্রথাগত সংবাদপত্রের ধ্যান-ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করে ইনকিলাব। সংবাদপত্রে মানবিক ধ্যান-ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইনকিলাবের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। প্রক্রিয়াগত দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারির পত্রিকার সমগোত্রীয় হলেও অর্থনৈতিক সামর্থের দিক থেকে ইনকিলাব অনেক পিছিয়ে। ইনকিলাব তার জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে ধারণ করে এক ব্যতিক্রধর্মী ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, চেতনা অক্ষুন্ন রাখতে ইনকিলাব আন্তরিক ও সচেষ্ট। স্বাধীনতার মৌলিক বিষয়Ñঅর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র রক্ষায় সে অবিচল। এদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতিকে ধারণ করে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে আছে ইনকিলাব।

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং যেকোনো আগ্রাসী শক্তির বিপক্ষে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আপোসহীন ভূমিকা পালন করে চলেছে ইনকিলাব। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে ইনকিলাব সব সময়ই অবিচল। ইনকিলাবের ৩৬ বছরের পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। হুমকি-ধমকি, বাধা-বিপত্তি হামলা-মামলা ও ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রসহ নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি একাধিকবার প্রকাশনা বন্ধেরও মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও ইনকিলাব তার আদর্শ ও নীতি থেকে একচুল বিচ্যুত হয়নি। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অটল-অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অসত্য ও অন্যায়ের সঙ্গে কখনো সমঝোতা করেনি। ইনকিলাব শুধু একটি দৈনিক পত্রিকা নয়, একটি আদর্শ ও দর্শন। দেশের সংবাদমাধ্যম জগতে ইনকিলাব ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। সংবাদপত্র শিল্পে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। পত্রিকার পাতায় পাতায় এনেছে আধুনিকতা ও নতুনত্ব। ইনকিলাব অন্যদের কাছ থেকে কিছু নেয়নি; বরং দিয়েছে। ইনকিলাব এমন অনেক ট্রেন্ড সৃষ্টি করেছে, যা এখন অন্যরা অনুসরণ করছে। ইনকিলাবই একমাত্র পত্রিকা যা নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশ ও মানুষের স্বার্থে সত্যিকার সংবাদপত্রের দায়বোধ থেকে এর সূচনা হয়েছে। ইনকিলাব যে ধারার সূচনা করেছে, তা বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ইনকিলাব সাংবাদিক গড়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে চলেছে। তাছাড়া, ইনকিলাব লেখক ও সাহিত্যিক তৈরিতেও ভূমিকা রেখেছে। জনগণের মুখপাত্র হিসেবে যেমন, তেমনি রাষ্ট্র ও সমাজের নীতিনির্ধারকদের সহায়ক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সুদীর্ঘ ৩৬ বছরের পথপরিক্রমায় দেশে ও বিদেশে নানা ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, ইনকিলাব তা গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করেছে এবং জনগণের সামনে নির্মোহভাবে তুলে ধরেছে। দেশের রাজনীতির পালাবদল, বিবর্তন ও পরিবর্তনে জনগণের পক্ষে ইনকিলাব রাডারের ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমান রাজনীতির ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এক ধরনের বিরাজনীতিকরণ ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষাপট কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়। ইনকিলাব সব সময়ই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে এবং তা এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করে আসছে। অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপকে ইনকিলাব যেমন স্বাগত জানিয়েছে, তেমনি দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী এবং এ সংক্রান্ত দুর্নীতির গঠনমূলক সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে ইনকিলাব ধারণ করে। এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে থেকে তরুণ প্রজন্ম ও যুবসমাজকে গড়ে তুলতে এবং সে অনুযায়ী দিক নির্দেশনা দিতে ইনকিলাব নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন এবং তা প্রতিরোধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলার কাজও ইনকিলাব করে যাচ্ছে। কারো সাথে শত্রুতা নয়, পার¯পরিক সমমর্যাদাপূর্ণ বন্ধুত্বের পররাষ্ট্রনীতিকে ইনকিলাব দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ পররাষ্ট্রনীতির প্রায়ই ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাবশালী দেশের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। এটা যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে দেশের বেশিরভাগ প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নীরবতা পালন করলেও ইনকিলাব বরাবরই এই বৈষম্যমূলক ও আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদ কঠোরভাবে করেছে এবং করে চলেছে।


ইনকিলাব বরাবরই বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনার কথা বলে আসছে এবং এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে আসছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের অর্জন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, মানবিক উন্নয়নের অগ্রগতি তুলে ধরেছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত রেখে নিজস্ব জাতীয়তাবোধের মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, মানবিক এবং আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা তুলে ধরাই ইনকিলাবের মিশন। ইনকিলাবের এই মিশন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনেও ইনকিলাব তার স্বকীয়তা বজায় রেখে সামনের দিকে আপন গতিতে এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, ইসলামী মূল্যবোধ, মুসলমান ও মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সংরক্ষণের সপক্ষে যেমন কাজ করবে, তেমনি সন্ত্রাস, অনিয়ম, দুর্নীতি, বৈষম্য ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। এমন এক সময় এবার ইনকিলাব ৩৭ বছরে পদার্পণ করেছে যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার মধ্যে পরাশক্তির দেশগুলোর চাপিয়ে দেয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন। বাংলাদেশেও এর তীব্র প্রভাব পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইনকিলাবও মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। ফলে তার উন্নয়ন, প্রসার ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যেও প্রযুক্তি এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ইনকিলাবের অত্যাধুনিক অনলাইন ভার্ষণ চালু আছে, যা দেশ-বিদেশের প্রতি মুহূর্তের এক্সক্লুসিভ এবং বস্তুনিষ্ঠ খবর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইনকিলাবের এই দুঃসময় কেটে যাবে, সুদিন আসবে। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। আমরা আজকের দিনে বিশ্বজগতের প্রভূ ও প্রতিপালক আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা জানাই, তিনি যেন বাংলাদেশ ও তার জনগণকে সুরক্ষা দেন। ইনকিলাবকে হেফাজত করেন। পরিশেষে আমরা পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা এবং মোবারকবাদ জানাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
সেলিম উদ্দিন ৪ জুন, ২০২২, ৬:০১ এএম says : 0
ইনকিলাব অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবার নয়, ইনকিলাব আমাদের অস্তিত্বের সারথী, ইনকিলাব একটি বটবৃক্ষ, বটবৃক্ষ বেঁচে থাকলেই কেবল আমরা তার ছায়া তলে বেঁচে থাকতে পারবো। শুভ কামনা।
Total Reply(0)
জাহিদুল ইসলাম ৪ জুন, ২০২২, ৬:০১ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। ইনকিলাব যতদিন তার নীতি নৈতিকতায় অটল থাকবে, ততদিন এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ তাদের পাশে থাকবে।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৪ জুন, ২০২২, ৬:০২ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাব অতীতের ন্যায় আগামী দিনেও ইসলাম ও দেশ-জাতির স্বার্থে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাবে। ইনকিলাবের উত্তরোত্তর কল্যাণ কামনা করি।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৪ জুন, ২০২২, ৬:০২ এএম says : 0
এদেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষও সব সময় ইনকিলাবের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ। ইনকিলাব কোন নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে নয়, পত্রিকাটি কথা বলে দেশ, দেশের মানুষ ও ইসলামের পক্ষে। তাই ইনকিলাবকে মন থেকে ভালোবাসি।
Total Reply(0)
তারেক আজিজ ৪ জুন, ২০২২, ৬:০২ এএম says : 0
গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ইনকিলাব পূর্বাপর যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তা খুবই প্রসংশনীয়। এই সব সফলতার পিছনে রয়েছে দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা, নীতির প্রতি নিষ্ঠতা ও নির্ভীক সাংবাদিকতা, যা বর্তমানে সচরাচর অনুপস্থিত। আশা করি, ভবিষ্যতে এই দৈনিক উত্তরে উত্তর উন্নতি লাভ করবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন