প্রেম-বিয়ের প্রতিশ্রুতি প্রলোভনে দিয়ে এক ছাত্রীর সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান নোবেলের বিরুদ্ধে। এসময় তিনি ঐ ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন এবং সম্পর্ক চলাকালীন একই সময়ে আরও একাধিক ছাত্রীর সাথে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিভাগটির ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে বিভাগীয় প্রধানের কাছে একটি অভিযোগ দেন ঐ ছাত্রী। এসময়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারে নোবেলের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একাধিক ছাত্রীর কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়লে তার সূত্র ধরে এসব বিষয় জানা যায়।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, শাহরিয়ার খান নোবেল সম্পর্কের শুরু থেকেই ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। এ সময়ে অনেকবারই ভুক্তভোগীকে শারিরীকভাবেও লাঞ্চিত করার চেষ্টা করেন নোবেল। তবে সম্পর্কের স্বার্থে এসব মেনে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সে (নোবেল) সম্পর্ক থেকে সরে আসার কথা লোকসম্মুখে প্রচার করলেও আমার সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায় ও নানাভাবে আশ্বাস দিয়ে যায়। তার সাথে যোগাযোগের কথা অন্যদের জানাতে নিষেধ করে। আমি যোগাযোগ না করলে সে নানাভাবে ইমোশনাল বø্যাকমেইল করে এবং যোগাযোগ করলে সে আমাকে অপমান করে।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ বলা হয়, ‘সম্প্রতি একই বিভাগের আরও কিছু মেয়ের নিকট আমার (অভিযোগকারী) অগোচরে আমার সাথে সম্পর্ক নেই বুঝিয়ে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে নোবেল। আমি জেনে যাওয়ায় সে আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালায় এবং আমাকে দোষারোপ করে।’
এছাড়া অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে আমার (অভিযোগকারীর) পরিবার থেকে বিয়ের চাপ দেয়া হয়। তখন আমি আমার ক্যারিয়ার ও তার সাথে সম্পর্কের কথা চিন্তা করে বাসা থেকে চলে আসি। এবং তৎকালীন বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভ‚ইঁয়া ও প্রভাষক কাজী এম আনিছুল ইসলামকে জানাই। তখন আনিছ স্যারের উপস্থিতিতে সে আমার দায়িত্ব নিবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়।
তবে এ বিষয়ে কিছু মনে নেই বলে মন্তব্য করেন শিক্ষক মাহবুবুল হক ভ‚ইঁয়া। তিনি বলেন, ‘আমার এ ধরনের কোনো কিছু মনে পড়ছে না। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
আবার অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) কাজী এম আনিছুল ইসলাম। এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা কনফিডেন্সিয়াল। একজনের বিষয়েতো আমি এভাবে বলতে পারি না। আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। এটা সল্যিউশন হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কমেন্ট করতে পারছি না। আপাতত নো কমেন্ট।’
তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কয়েকজন সহপাঠী জানান, অভিযুক্তকে ভুক্তভোগীর সংগে সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনা দিয়েই বিচারকার্য সম্পন্ন করেছে বিভাগ। এমনকি বিচারের সিদ্ধান্ত অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকে ভিন্ন সময়ে জানানো হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
বিষয়টি কাজী আনিছুল ইসলামকে জানানো হলে আবারও ‘নো কমেন্ট’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিয়ে আপাতত কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
কোনো চাপের কারণে মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না এ বিষয় নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হোক বা আর কিছু হোক।’
অভিযুক্ত শাহরিয়ার খান নোবেল বলেন, ‘আমার সাথে এক সময় একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক এখন শেষ হয়ে গেছে। সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে কথাবার্তা হয়েছে। এখন মানসিক হেনস্থার কি অভিযোগ আসছে আমি জানি না। আমি অবগত না।’
বিভাগ থেকে কী বলা হয়েছে- এমন প্রশ্নে নোবেল বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট বলেছে (যদি) সম্পর্ক না রাখতে চাও, তাহলে সম্পর্ক বাদ দাও।’
বিষয়টি নিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা ও সহকারী অধ্যাপক আলি আহসান বলেন, ‘আমরা দু’জনের সাথে কথা বলে কাউন্সিলিং করার চেষ্টা করেছি। আইনি পদক্ষেপ বা শাস্তি দেওয়ার কোন পদক্ষেপ বিভাগের থাকে না।’
আলি আহসান আরও বলেন, ‘আমি ও বিভাগের আরেকজন শিক্ষক মিলে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের কথা শুনেছি। যেভাবে কাউন্সিলিং করে সেভাবে কাউন্সিলিং করেছি। আমরা মনে করেছি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে অভিযোগটা সমাধান করা সম্ভব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন