শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাড়তি খরচ গুনছে ভোক্তা

বিদ্যুতে মানা হচ্ছে না ইকোনমিক মেরিট অর্ডার

মো. জাহিদুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিদ্যুৎতের যে কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কম সেই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ প্রথমে গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এভাবে দৈনিক চাহিদার ভিত্তিতে কম দাম থেকে বাড়তি দামের বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবির) অধীনস্থ লোড ডেসপাস সেন্টারকে (এনএলডিসি) প্রতিদিন সেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা দেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের বিষয় বিবেচনা করে দেয়া এই আদেশই ইকোনমিক মেরিট অর্ডার। এনএলডিসি এই আদেশ মানতে বাধ্য হলেও তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিদ্যুৎতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর বাড়তি খরচ ঘুরেফিরে চাপবে ভোক্তার কাঁধেই।

পিডিবি বলছে, জোনভিত্তিক দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা এবং ওইসব এলাকায় কোনও কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনক্ষম আছে-সেই বিবেচনায় ইকোনমিক মেরিট অর্ডার তৈরি করা হয়। এনএলডিসি এই আদেশ মানতে বাধ্য। এটি পরিবর্তনের সুযোগও তাদের নেই। সম্প্রতি মেরিট অর্ডার না মানার অভিযোগটি তুলেছেন দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর শামসুল আলম।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে তিনি জানতে চান, পিডিবি কখনও ইকোনমিক মেরিট অর্ডার পরিবর্তন করে কিনা। পিডিবির তরফ থেকে জানানো হয়, কেউ এটি করে না। তখন এনএলডিসির এক কর্মকর্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে শামসুল আলম তখন তার কাছে থাকা নথিপত্রের বরাত দিয়ে বলেন, এনএলডিসির কন্ট্রোল রুম থেকে ভোলা পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, তোমরা কেন্দ্র বন্ধ করো। বরিশালের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হবে। বক্তব্যটির সত্যতা নিয়ে এনএলডিসির ওই কর্মকর্তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হলে চ্যালেঞ্জ নিতে চাননি তিনি। অর্থাৎ এলএনডিসি এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে জানাতে চায়নি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভোলায় গ্যাসের সংকট নেই। গ্রিড লাইন না থাকায় ভোলার গ্যাস দেশের অন্য এলাকায় সঞ্চালন করা সম্ভব নয়। সেখানে স্থানীয় কেন্দ্রে সরবরাহ করে বাড়তি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৩৮ ভাগ প্লান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অর্থাৎ কেন্দ্রটি যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম তার মাত্র ৩৮ ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ১৫ পয়সা। কেন্দ্রটি যদি ৭২ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে উৎপাদন করতো তাহলে খরচ নেমে দাঁড়াতো ইউনিট প্রতি ২ টাকা ৫৮ পয়সায়।

পিডিবির বিবিয়ানা (দক্ষিণ) ও সিলেটের বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটিতে ৬৯ ভাগ ও ৬৮ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ টাকা ১৮ পয়সা এবং ২ টাকা ৬১ পয়সায়। ভোলায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আইপিপি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রেই ৭৫ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালালে উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৩ টাকা ২৬ পয়সা। বলা হচ্ছে, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যদি বেশি প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানো যায় তবে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমবে। আবার একইসঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাড়তি দামের কেন্দ্রগুলো চালাতে হবে না। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ সাশ্রয় হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, আমরা এই ধরনের অভিযোগ শুনেছি। মেরিট অর্ডার ভাঙা হয় ঠিকই, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হয় না। প্রয়োজনের খাতিরেই করা হয়। কোনও ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে এই মেরিট অর্ডার ভাঙা হয় জ্বালানির কারণে। অনেক সময় ডিজেলচালিত প্ল্যান্টগুলো চালাতে হয়। আবার অনেক জায়গায় জ্বালানি সংকটের কারণেও মেরিট অর্ডার ভাঙতে হয়।

কিন্তু ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম এ ব্যাপারে একমত নন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা যেসব প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করলে দাম বাড়াতে হতো না। ইকোনমিক মেরিট অর্ডার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি অহরহ ঘটছে বলেই অভিযোগ তুলেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন