শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

যানবাহনের বাড়তি চাপ বহনে সক্ষম নয় খুলনা

পদ্মা সেতুর সুফল পেতে আরো দু’বছর : অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনাতেই আটকা

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ২৫ জুন। অধীর আগ্রহে দিনটির অপেক্ষা করছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ। আশা করা হচ্ছে পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আরো গতি আসবে। স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাটের কাটাখালি, খুলনা-মংলা, খুলনা-যশোর ও খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এসকল সড়ক-মহাসড়কে যেমন ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বাড়বে, তেমনি বাড়বে মংলা বন্দর ও সিমেন্ট এবং এলপিজি কেন্দ্রীক কন্টেইনার ক্যারিয়ারসহ বড় যানবাহন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাড়তি যানবাহনের চাপ সামলাতে কতটুকু প্রস্তুত সড়ক ও মহাসড়কগুলো।
জানা গেছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ৪ ও ৬ লেনে উন্নীতকরণের বিষয় এখনো পরিকল্পনা আকারে রয়েছে। কোনো কোনো সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ নানা কারণে থমকে রয়েছে। কোনো সড়কের সংস্কারে এখনো টেন্ডারই আহ্বান করা হয়নি। যদিও সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন পদ্মা সেতুর বিষয়টি মাথায় রেখে গত দু’বছর ধরেই নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে এবং সে লক্ষ্যে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলেছে। বাস্তবে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর সুফল পেতে অবকাঠামোগত যে কাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন ছিল, তার সবই পরিকল্পনার মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা-জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণের কাজ এক প্রকার থমকে রয়েছে। ২০২০ এর ৮ এপ্রিল একাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এবছর ৭ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গায় বালু ও পাথর ফেলে রাখা হয়েছে। এবছরও লেগে যেতে পারে কাজ শেষ হতে। কারণ সড়ক ও জনপথের তথ্যমতে এ পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজ মাত্র ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ও সময় বাড়ানোর আবেদন করে মূল সড়কের কাজ বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খুলনার সাথে রূপসা হয়ে মংলা বন্দরের কানেক্টিং এ সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সুফল থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হবে এ অঞ্চলের মানুষ। রাস্তার মধ্যে ওয়াসার লাইন, বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরসহ নানা কারণে মূল কাজ শুরুতে দেরি হয়েছে বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রকিব উদ্দিন।
অন্যদিকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে জিরো পয়েন্টে ইন্টারসেকশন নির্মাণ কাজও এখনো পরিকল্পনা আকারেই রয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে যানবাহনগুলি জিরো পয়েন্ট হয়ে খুলনা-সাতক্ষীরা এবং চুকনগরে প্রবেশ করবে। জিরো পয়েন্টে ইন্টারসেকশন নির্মিত না হলে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আসবে না।
খুলনার ফেরিঘাট থেকে আফিল গেট পর্যন্ত সড়ক ৪ অথবা ৬ লেনে উন্নীতকরণ করা হবে, এমন কথা শোনা যাচ্ছে গত ৩ বছর ধরে। এ সড়ক ধরেই খুলনা থেকে যাত্রীবাহি পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাক নওয়াপাড়া-যশোর অভিমুখে চলাচল করে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, এ প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি এবং ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে। এরপর অনুমোদন, ভূমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার আহ্বানসহ আরো বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে, খুলনা-যশোর রোডের রাজঘাট থেকে আফিলগেট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক তৈরি করা হবে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজামান মাসুদ জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা খুলনাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে গত ২ বছর ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি এবং সেই আলোকে প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ময়লাপোতা-জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুলনার জেলখানা খেয়াঘাটে ব্রিজ বা টানেল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে।
একই সঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় খুলনা রেলস্টেশন পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা হাইওয়ের গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত ৪ লেন সড়কটি নির্মিত হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব আনুমানিক আরো ৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে। ঢাকা থেকে খুলনায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া যাবে। এছাড়া তেরখাদা উপজেলা খুলনা জেলা শহরের সাথে যুক্ত হবে। তেরখাদা এলাকার পরিত্যক্ত বিলে শিল্পায়নের ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও বরিশালের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। আকাশপথের চেয়ে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত হবে। ভৈরব নদের উপর ব্রিজের কাজ চলছে।
তিনি আরো জানান, দৌলতদিয়া-ফরিদপুর-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা-মংলা সড়কের আফিলগেট থেকে পাওয়ার হাউজ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনা শহর বাইপাস এবং গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের সাচিবুনিয়া নামক স্থানে ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হবে। গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ২৮তম কি.মি.-এ চুনকুড়ি নদীর উপর পোদ্দারগঞ্জ ফেরিঘাটে চুনকুড়ি সেতু এবং একইভাবে গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ২১তম কি.মি.-এ ঝপঝপিয়া নদীর উপর পানখালী ফেরিঘাটে ঝমঝপিয়া সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । সেতু দুটি নির্মিত হলে এ অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে পারবে। সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
এছাড়া খুলনা সিটি বাইপাস সড়ক শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক জোনে গমনের জন্য নতুন চার লেন সড়ক ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ওভারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলে পরিবহনের বাড়তি চাপের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে খুলনা জোনের আওতাধীন মহাসড়কে ৫ টি বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন কংক্রিট সেতু ও বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন