মরক্কোর সময় শুক্রবার ১৮ নভেম্বর মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলন। এটা ছিল ২২তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। এর আগে মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় সম্মেলনের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা। সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের ৫৪টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ। ১২০টি দেশের মন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিগণও এতে যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
পৃথিবীর জলবায়ু বা আবহাওয়া আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও সমুদ্রের পানির ক্রমবর্ধমান উচ্চতা অনেক দেশেই রাষ্ট্রনায়কদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপরাষ্ট্রের অস্তিত্ব মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন। সমুদ্র্রের পানির উচ্চতা বর্তমানের চেয়ে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশকেও হারাতে হবে সমুদ্র উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। পৃথিবীর আবহাওয়া প্রতি বছর ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে থাকলে আবহাওয়ায় আসবে মারাত্মক পরিবর্তন। খরার কবলে পড়বে বহু দেশ। ঝড়-বৃষ্টির ব্যাপকতা বাড়বে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী হচ্ছে শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত জ্বালানি ও কয়েকশ কোটি যানবাহন থেকে নিঃসরিত কার্বন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট খরা, বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাস্তচ্যুত জনগণের ক্ষতি ও সমস্যার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিতে সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে যারা বাস্তুচ্যুত হবে, তাদের সমস্যার সমাধান ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যাবে না। শেখ হাসিনা আরো বলেন, পানির ব্যবহার বিষয়ে নতুন একটি বিশ্ব-তহবিল গড়ে তুলতে হবে। এই তহবিল দিয়ে পানির ওপর গবেষণা, নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও সেগুলো বাস্তবায়নে সম্ভাব্য কৌশল হস্তান্তর ছাড়া বিশ্বের পানি ব্যবস্থাপনা সঠিক ও প্রয়োজন অনুযায়ী করা সম্ভব নয়। বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, পানি বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলে বাংলাদেশ সরকার গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা সমর্থন করে। বাংলাদেশ পানি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী গত বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের উল্লেখ করে বলেন, ওই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল। এখন ওই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় ওই সিদ্ধান্তকে কাজে পরিণত করার সময়। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বকে আরো নিরাপদ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরো নিশ্চিন্ত স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, জলবায়ু চুক্তিতে অনুস্বাক্ষরের মাধ্যমে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারির। সম্মেলনের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শুরু হওয়ার আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান বি মুন তার বক্তব্যে ধনী দেশগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের প্রতিশ্রুত এক হাজার কোটি ডলার দ্রুত পরিশোধের আহ্বান জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ওই তহবিলের সাহায্য নিয়ে যাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কাজ করতে পারে তিনি এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশ্বে সকল ভারী কারখানা ও যান্ত্রিক যানবাহন যে কার্বন নিঃসরণ করে, তার শতকরা ৮০ ভাগই হচ্ছে উন্নত ও ধনী দেশগুলোর দ্বারা। কিন্তু বিশ্বের সকল রাষ্ট্রই তার দ্বারা আক্রান্ত। নিঃসরিত কার্বন বায়ু প্রবাহের দ্বারা সকল দেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। কাজেই কার্বন নিঃসরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর সাহায্যে ধনী দেশগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে এই যে, প্যারিস সম্মেলনে গত বছর ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও পুরোপুরি রক্ষিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশেও সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপালে কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হবে, তার ফলে সুন্দরবনের প্রাণীবৈচিত্র্য ও বৃক্ষরাজি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এক সময় সুন্দরবনের অস্তিত্ব থাকবে না বলে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছে তেল, খনি, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সরকার এ বিষয়ে সকল যুক্তি ও প্রতিবাদ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত বিশেষ করে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের মতামত অগ্রাহ্য করে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ও নিজের দেশে তার দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্ত পরস্পরবিরোধী।
মারাকাশ সম্মেলনে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেনসহ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন ৫৮ জন। ১৬ নভেম্বর বুধবার বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের গৃহীত চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ধীরগতির কথা উল্লেখ করে এতে হতাশা ব্যক্ত করা হয়। মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ এ বিষয়ক সংস্থা ‘জলবায়ু প্রযুক্তি যোগাযোগ কেন্দ্র ও নেটওয়ার্কে’ পাঁচটি প্রকল্প জমা দেয়। সংস্থা দুটি প্রকল্পে সহায়তাদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন বলা হচ্ছে, অর্থের স্বল্পতার জন্য কিছুই করা যাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের দাবি হচ্ছে, ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ যথাশীঘ্র পরিশোধ করুক। শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে এ খাতে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী এ বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথা থাকলেও এখনও তা গঠন করা হয়নি।’
শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলোর ভারী শিল্প ও লাখ লাখ যানবাহনের দ্বারা নিঃসরিত কার্বনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পৃথিবীর সকল দেশ। যে কোনো বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সকল সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্য পরিকল্পনার অর্থায়ন তাদেরই করা উচিত। কিন্তু সমস্যার ভয়াবহতা দৃশ্যমান থাকলেও এবং জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বিশ্বের তাপমাত্রা প্রতি বছর বেড়ে চললেও তাদের সদিচ্ছার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণকে সন্দেহ করেছেন। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যে তহবিল বরাদ্দ দেবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বর্তমান ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মারাকাশ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানের সময়ে আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান করবে।
মারাকাশে বারো দিনব্যাপী ২২তম জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনায় আশাব্যঞ্জক কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে সমালোচনা করেছে বিশ্বের অধিকাংশ জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন। ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ফ্রেন্ডস অব দি আর্থ, গ্রিনপিস, ক্লাইমেট জাস্টিসÑ যারা দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এসব প্রতিষ্ঠানও প্যারিস সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে ধীরগতির নিন্দা করেছে।
সম্মেলনের শেষে একটি ঘোষণা দেয়ার নিয়ম রক্ষা করে শুক্রবার ১৮ নভেম্বর মারাকাশ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। যেহেতু এরকম ঘোষণায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধি দলের নেতা বা উপনেতারা এ রকম ঘোষণায় স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন, তাই প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে যত শীঘ্র সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ধনী দেশগুলোও স্বাক্ষর দিয়েছে, সেহেতু পুনরায় আশা করা যায় যে, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ পাওয়া যাবে। কিন্তু তা না পাওয়া পর্যন্ত প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি বিধিমালা প্রণয়নের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবুও মারাকাশ ঘোষণা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদীরা। এই সন্দেহের কারণ হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের কোনো ঘোষণা দেয়নি ধনী দেশগুলো। অর্থায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারেও পরিবেশবাদীদের বক্তব্য হচ্ছে, বেসরকারি সূত্র থেকে জলবায়ু সমস্যার মোকাবেলায় অর্থায়ন কোনো মতেই সরকারি অর্থায়নের গুরুত্ব হ্রাস করতে পারে না ও সরকারি অর্থায়নের বিকল্প হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। তবে এই প্রথম জলবায়ু খাতে সরকার, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার পাওয়া গেছে।
মারাকাশ সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিদের উদ্বেগের বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন, আবহাওয়ার পরিবর্তনে ঝড়, অতি-বৃষ্টি, খরা ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মোকাবেলা করা। যেহেতু ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর নিঃসরিত কার্বনই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ, সেহেতু পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো যাদের কর্মকর্তাগণও অধিকাংশই ধনী ও উন্নত দেশগুলোর বাসিন্দা, তারা নিজেদের দেশের সরকারকে জলবায়ু তহবিলে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের জন্য বিবৃতি, সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি দ্বারা চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কর্মকর্তাদের উপলব্ধি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু সংখ্যক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উন্নত বিশ্বকেও তার জন্য পরিণামে খেসারত দিতে হবে। সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তাই আগামী জানুয়ারি মাসে ক্ষমতায় সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার অধিষ্ঠিত হলে তাদেরকে এই খাতে পূর্ববর্তী ওবামা সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রুত অর্থ দেয়ার জন্য অনুরোধ রেখেছেন। সম্মেলনের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের পূর্ববর্তী দিনগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য রাখায় উন্নত দেশগুলোর সরকারি প্রতিনিধিগণ জলবায়ু তহবিলে তাদের দেশ কর্তৃক প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের জন্য কোনো ইতিবাচক বক্তব্য না রাখায় মনে করা হয়েছিল যে, মারাকাশ সম্মেলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কিন্তু সম্মেলনের শেষে যাতে ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক একটি ঘোষণা দেয়া যায় সে জন্য পর্দার অন্তরালে মরক্কো সরকার কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার ফলে মারাকাশ সম্মেলনের ঘোষণায় ধনী ও উন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিগণ ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলে মারাকাশ সম্মেলন একটি ইতিবাচক ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে শেষ হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় ধনী ও উন্নত দেশগুলো তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এ পর্যন্ত সম্মেলনের পর সম্মেলনে যোগ দিলেও তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের সংস্থার নির্বাহী সচিব প্যাট্রিসিয়া স্পেপানিশা বলেছেন যে, মারাকাশ সম্মেলনের সাফল্য হচ্ছে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের অপরিহার্যতার প্রতি সকলের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান ও উন্নয়ন যাতে টেকসই হয় তার সন্ধান পাবে বিশ্ব। তিনি আরও বলেন যে, উন্নত দেশগুলো ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি তা যাতে বাস্তবে রূপলাভ করে সে জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। জলবায়ু তহবিলে কোনো অর্থায়নের বড় ঘোষণা না এলেও কিছু সংখ্যক দেশ অ্যাডোপটেশন ফান্ডে ৮১ মিলিয়ন ডলার এবং ক্লাইমেট ফান্ডে ২৩ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া সম্মেলনে জানানো হয় যে, ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় যে, ২০১৭ সালে পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক হবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজি। তবে এত বড় সম্মেলনের আয়োজন করার অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় তারা জার্মানির সহায়তায় বন শহরে সম্মেলনের আয়োজন করবে। আগামী এক বছরে উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের কতটুকু ছাড় দেয় সেটাই হয়তো প্রাধান্য পাবে বন শহরের সম্মেলনে।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন