শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের নেপথ্যে টেন্ডার ও চাঁদাবাজি!

জবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

মাত্র ছয় মাসের মাথায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি স্থগিতের স্পষ্ট কোন কারণ উল্লেখ না করলেও মূলত টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগ নেত্রীকে কু প্রস্তাব, কমিটির পদধারী নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করে রাখাসহ অনেক অভিযোগ সামনে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পরে বিশ্ববদ্যালয়ের মসজিদের দ্বিতীয় তলা টিন সেড বিল্ডিং, ডরমেটরি ভবন মেরামত, মনোবিজ্ঞান ভবনের ছাদ মেরামতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সংস্কার, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ক্রয়, ল্যাবরেটরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা, ক্যালেন্ডার ও ডায়েরী তৈরির প্রায় দেড় কোটি টাকার টেন্ডার হয়। সব কয়টি টেন্ডার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও এস এম আকতার হোসেনের নির্দেশিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়।

এসব টেন্ডারের বাজেট থেকে ১৫ শতাংশ এ দুই ছাত্র নেতার পকেটে ঢুকত। তবে শীর্ষ এ দুই নেতার পুরনো ঢাকার ক্যাম্পাসের টেন্ডারবাজি ছাপিয়ে আলোচনায় কেরাণীগঞ্জের নতুন ক্যাম্পাসের টেন্ডার। নতুন ক্যাম্পাস নির্মানে সীমানা প্রাচীরের ৩৩ কোটি ও মাস্টারপ্লানের ৫ কোটি টাকার টেন্ডার পায় সরকারের স্থানীয় এক প্রতিমন্ত্রী আর উপজেলা চেয়ারম্যানের পছন্দের কোম্পানী কিংডম বিল্ডার্স আর আরবানা লিমিটেড। কিন্তু শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পরে নতুন ক্যাম্পাসের ২৭ কোটি টাকায় লেক নির্মাণ ও ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লানিং দপ্তরের ৬২ কোটি টাকার টেন্ডারে বাগড়া দেন এ শীর্ষ নেতারা। এ ঘটনায় স্থানীয় এ প্রতিমন্ত্রী শাখা ছাত্রলীগের প্রতি মনক্ষুন্ন হন।

শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীকে কুপ্রস্তাব: কমিটি স্থগিতের পর পরই শাখা ছাত্রলীগের নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া আক্তার প্রিয়ন্তি জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে নানান সময়ে কুপ্রস্তাব ও আবদার মেটাতে চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। জবি ছাত্রলীগের এই নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া আক্তার প্রিয়ন্তি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতারের রাজনীতি করি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের হওয়ার পরে আকতারের চরিত্র বদলে যায়। নানান সময়ে সে আমাকে তার নানান চাহিদা ও আবদার পূরণ করতে কুপ্রস্তাব দেয়। তার এইসব কুপ্রস্তাবের কারণেই আমি রাজনীতির মাঠ থেকে সরে আসতে বাধ্য হই। আকতার বিভিন্ন সময় বলত তার কথা না শুনলে ছাত্রী হলের কমিটিতেও কেউ পদ পাবে না। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিয়ে পোস্ট করলে আকতার আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে জবি ছাত্রলীগের একাধিক পদধারী নেতা জানান, বর্তমান কমিটি হওয়ার পরই দুই নেতার অনুসারীরা ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করে। এছাড়াও বর্তমান কমিটির পদধারী নেতাদেরকে কোনঠাসা করে রাখতে জুনিয়রদের সামনে অপমান অপদস্ত করতে থাকেন। সভাপতি-সম্পাদক ক্যাম্পাসে আসলে ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তর আর প্রশাসনিক দপ্তরে যাওয়া আসা ছাড়া আর কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগে কমিটি স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলেন, ইব্রাহীম ও আকতারকে সভাপতি-সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকায় লুকিয়ে তারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিসিটিভির ফুটেজ তো সবার কাছেই আছে।

পপুলারের ঘটনায় জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত সাঈদ বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চাঁদাবাজির পর তাকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মালিক ফোন দেয়। কিন্তু পরে সিসিটিভি ফুটেজে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী সাঈদুল ইসলাম সাঈদ ও মাসুদ রানাকে চাঁদাবাজির করতে দেখা যায়। এ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বিচার দিলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এছাড়াও, আড়াই লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় গত ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এফ আর হিমাচল পরিবহনের একটি বাস পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকা থেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে আটকে রাখে আকতার হোসাইনের অনুসারী ও দর্শন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।
জানা যায়, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলা বাসগুলোর মালিকদের মাসিক কয়েকালক্ষ টাকা মাশোয়ারা দিতে হয় জবি ছাত্রলীগকে।

ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের বিপরীতে টিএসসি সংস্কারের নামে মাসে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত জুনে ইসলামপুরের এক ব্যবসায়ীকে বিচারের সিদ্ধান্ত না মানায় তুলে আনার অভিযোগ আছে শাখা ছাত্রলীগের এ দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। ৫০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় সদরঘাটের গ্রেটওয়ালের এক ব্যবসায়ীর ছেলেকে তুলে আনা সহ স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে বাড়িতে গিয়ে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও, গত ১১ মার্চ নবীন শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দলে ভিড়ানোকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। মালিটোলা পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও টিএসসি এলাকায় এসব সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়।
সর্বশেষ গত রোববার ওয়ারীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে জবি শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের ছেলের গাড়িচালককে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। সোমবার সন্ধ্যায় ওয়ারী থানায় কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কিছু নির্দেশনা ছিল কিন্তু দীর্ঘদিনেও তারা সেটি পালন করেনি। এছাড়াও তাদের নামে একাধিক অভিযোগ আসে কেন্দ্রে। এ প্রেক্ষিতে শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক এস এস আকতারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন