দুই অধিনায়ককে নিয়ে মিনিট দুয়েকের মতো কথা বললেন দুই আম্পায়ার। নিকোলাস পুরানকেই বেশি কথা বলতে দেখা গেলো। খানিক পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফিরে যাওয়ার পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কের মধ্যে হতাশার একটা প্রকাশ ঘটতেও দেখা যায়। পা দিয়ে শূন্যে হয়তো লাথি মারতে চাইলেন! পুরানের এই হতাশার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে চালকের আসনে ছিল তো ক্যারিবিয়ানই। কিন্তু জেতার সুযোগই তো পাওয়া হয়নি তাদের। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে ম্যাচটি।
গত রোববার ডমিনিকায় বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে টস হয়েছে অনেক দেরিতে, নির্ধারিত সময়েরও পৌঁনে ২ ঘণ্টা পর। ফলে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ১৬ ওভারে। খেলা চলাকালীন বৃষ্টির বাধায় আরও ২ ওভার কমে। ১৪ ওভার সামনে রেখেই ব্যাট করে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ১৩তম ওভার শেষে আবারও বৃষ্টি নামছে আর মাঠে ফেরা হয়নি খেলোয়াড়দের। ম্যাচ শেষ করার মতো সময় না থাকায় দুই আম্পায়ার দুই অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে ইতি টেনে দেন খেলার। বাংলাদেশ এজন্য বৃষ্টিতে ধন্যবাদ দিতেই পারে! আবারও যে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবেছে সফরকারীরা। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে ১৩ ওভারে ৮ উইকেট করতে পারে ১০৫ রান। যেখানে দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন মাত্র তিনজন!
টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ফল নিষ্পত্তির জন্য রান তাড়া করা দলের কমপক্ষে ৫ ওভারের দরকার। অর্থাৎ, ৫ ওভারের লক্ষ্য দেওয়া হয়। কিন্তু ডমিনিকার উইন্ডসর স্টেডিয়ামের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫ ওভার খেলার মতো পর্যাপ্ত সময়ও ছিল না। শেষের বৃষ্টি ২০ মিনিট খেয়ে নেওয়ায় আসে ম্যাচ পরিত্যক্তের ঘোষণা।
শুরুতেই ফিরে যান মুনিম শাহরিয়ার। তাতে আরেকবার টপ অর্ডারের ব্যর্থতার শঙ্কা জেগে ওঠে। টেস্টের দুর্দশা তাহলে টি-টোয়েন্টিতেও কাটছে না! তবে ৭ বছর পর কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ফেরা এনামুল হক ও অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান মিলে আগ্রাসী ব্যাটিং করলেন। বাংলাদেশের রান উঠলো টি-টোয়েন্টির হিসাব মেনেই। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতনে আবার আশঙ্কার মেঘের ওড়াওড়ি। ওই জায়গা থেকে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মিডল কিংবা লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা।
বৃষ্টির কারণে পিচ ঢাকা ছিল। আউটফিল্ড ছিল ভেজা। তাই টস জিতে ফিল্ডিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। তার এই সিদ্ধান্তের ফল দ্রæতই পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথম ওভারেই, তৃতীয় বলে উইকেট পেয়ে যান আকিল হোসেইন। এই বাঁহাতি স্পিনারের বাঁক খাওয়া বল ওপেনার মুনিমের ব্যাট ছুঁয়ে গেলে গøাভবন্দি করতে ভুল করেননি ডেভন থমাস। মাত্র ২ রান করে বিদায় নেন মুনিম। তার সঙ্গে ইনিংস শুরু করা এনামুল ও ওয়ান ডাউনে নামা সাকিব মিলে পাল্টা জবাব দিয়েছেন। দ্রæত উইকেট হারালেও তারা চড়াও হন ক্যারিবিয়ান বোলারদের ওপর। যদিও এনামুল বেশিদূর যেতে পারেননি। ওবেড ম্যাকয়ের বলে এলবিডবিøউ হয়ে ফেরেন ১০ বলে ১৬ রান করে। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি এই ওপেনার।
এরপর চারে নামেন লিটন দাস। ধীর গতির শুরুতে লিটনকে ঠিক চেনা রূপে পাওয়া যায়নি। অস্বস্তিতে ভোগা এই ব্যাটার বেশিক্ষণ থাকতেও পারেননি ক্রিজে। ১৪ বলে ২ চারে মাত্র ৯ রান করে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। সাকিব অবশ্য নিজের খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্যপ্রান্তে উইকেট হারালেও তার শাসন চলেছে। চার-ছক্কায় বাড়তি উত্তেজনা যোগ করেন ডোনিমিকার স্টেডিয়ামটিতে। যদিও ইনিংস খুব বেশি লম্বা হয়নি তার। তবে ১৫ বলে খেলে যান ঝড়ো ২৯ রানের ইনিংস, যাতে ছিল ২ চারের সঙ্গে সমান ছক্কার মার। তার বিদায়ের পরপরই বৃষ্টি শুরু হলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হতেই আউট আফিফ হোসেন। এই ব্যাটার রানের খাতাই খুলতে পারেননি। হেইডেন ওয়ালশের ঘূর্ণিতে ব্রেন্ডন কিংসের হাতে ধরা পড়েন। চাপে পড়া বাংলাদেশ খানিক পর হারায় মাহমুদউল্লাহকে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক অবশ্য বিদায় নেন ওয়ালশের দারুণ ক্যাচে। রোমারিও শেফার্ডের বলে পয়েন্টে নিচু ক্যাচ নেন তিনি। তাতে শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর ৮ রানের ইনিংস। শেখ মেহেদী হাসান (১) তো এসেই বিদায় নেন ওই শেফার্ডের শিকার হয়েই।
৭৭ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশের রান যে ১০০ ছাড়িয়েছে, তার পুরো কৃতিত্ব নুরুল হাসান সোহানের। চাপের মধ্যে এই উইকেটকিপার ব্যাটার দারুণ কিছু শট খেলে তিন অঙ্কের ঘরে নেন স্কোর। ওডিন স্মিথের বলে আউট হওয়ার আগে ১৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় খেলেন ২৫ রানের ইনিংস। তার বিদায়ের পরপরই নামে বৃষ্টি। এরপর আর মাঠে ফেরা হয়নি। ম্যাচ পরিত্যক্তের সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। নাসুম আহমেদ অপরাজিত ছিলেন ৭ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল বোলার শেফার্ড। এই পেসার ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। হেইডেন ওয়ালশ ৩ ওভারে ২৪ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছে দু’দল। পাঠক যখন প্রথম ম্যাচের রিপোর্ট পড়ছেন ততক্ষণে দ্বিতীয় ম্যাচের ভাগ্যে কি ঘটেলো সেটিও নিশ্চয়ই জেনে গেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন