যুক্তরাষ্ট্রে গত ৯ জুলাই শনিবার উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা। করোনামুক্ত বিশ্ব সহ মানবতার কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম এ উৎসবটি পালন করা হয় । চমৎকার আবহাওয়া থাকায় অনেক মসজিদের ব্যবস্থাপনায় খোলা মাঠে ও মসজিদে ঈদ জামাতে মানুষের ঢল নেমেছিল। করোনার স্থাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ত্যাগের মহিমা নিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে বসবাসরত মুসলমানগণ এদিন পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। যুদ্ধবিগ্রহ ও করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, বাংলাদেশের বন্যার্ত, মুসলিম বিশ্বসহ সমগ্র মানবতার কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে প্রদত্ত শুভেচ্ছা বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনী ব্লিঙ্কেন মুসলিম আমেরিকানসহ বিশ্বের মুসলমানদের উষ্ণ অভিনন্দন সহ ‘ঈদ মুবারক’ জানিয়েছেন। অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন শুভেচ্ছা বার্তায় উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমি বিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানাই। যারা নিরাপদে এবং উৎসবের আমেজে দিবসটি উদযাপন করছেন তাদের ঈদ মুবারক।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বত্রই ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার অধিকাংশ ঈদ জামায়াত সকাল ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাললাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মসজিদ ও ঈদগাহ প্রাঙ্গণ।
নিউইয়র্কে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার, বাংলাবাজার জামে মসজিদ, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটস মোহাম্মদী সেন্টার, পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, মসজিদ আল আমান, আল আমিন মসজিদ, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, আসসাফা ইসলামিক সেন্টার, বায়তুল জান্নাহ মসজিদ, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার এন্ড মসজিদ, সানিসাইড মসজিদ, মসজিদ আবু হুরায়রা, দারুস সুন্নাহ জামে মসজিদ, আল ফোরকান জামে মসজিদ, আমেরিকান মুসলিম সেন্টার, শাহজালাল মসজিদ, গাউছিয়া মসজিদ, পার্কচেস্টার ইসলামিক সেন্টার, ব্রঙ্কস মুসলিম সেন্টার সহ অন্যান্য মসজিদের ব্যবস্থাপনায় ঈদের বৃহৎ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের পরিচালনায় সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কুইন্সে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে। টমাস এডিসন হাই স্কুল মাঠে সকাল ৮ টার এ জামাতে মূলধারার রাজনীতিক এবং স্টেট ও সিটি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঈদ জামাতে এসে ঈদ মুবারক জানিয়েছেন। ঈদ জামাতে ইমামতি এবং বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব ও ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ।
নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদের উদ্যোগে খোলা মাঠে পবিত্র ঈদুল আজহার দু’টি বিশাল জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদের নিকটবর্তী খোলা মাঠে (পিএস ১০৬, ২১২০ সেইন্ট রেমন্ডস এভিনিউ, ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক ১০৪৬২।) শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা এবং সকাল সাড়ে ৮টায় জামায়াত দু’টি অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল মুসল্লী এই ঈদ জামাতে অংশ নেন।
প্রথম নামাজে জামায়াতে ইমামতি করেন বাংলাবাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়া। দ্বিতীয় জামায়াতে ইমামতি করেন হাফিজ বদরুল আলম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মসজিদের সভাপতি ডা. আবদুস সবুর এবং ফান্ডরেজিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এন মজুমদার। তারা বাংলাবাজার জামে মসজিদের বহুতল ভবণ তৈরীর লক্ষে মসজিদের জন্য ১.৫ মিলিয়ন ডলারের জায়গা ক্রয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মসজিদ কমিটির সহ সভাপতি আলহাজ্ব ইলিয়াস আলী, মো. আহসান রাসুল নাসির, সহ সাধারণ সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ হোসেন তুষার, কোষাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন, সহ কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু সাঈদ, কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ বখতিয়ার খোকন, শামিম উদ্দিন, ওয়ালিউর রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, সোহেল চৌধুরী ও আক্তার খান রাজু।
উল্লেখ্য, কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক লালন আহমেদ বর্তমানে পবিত্র হজ পালনে সৌদী আরবে অবস্থান করছেন।
নামাজে বাংলাবাজার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিনের আত্মার মাগফেরাত, বিশ্ব মানবতার শান্তি কামনা সহ বাংলাদেশের বন্যার্তদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।
নিউইয়র্কে নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদের উদ্যোগে শনিবার সকাল ৯টায় মসজিদ নিকটবর্তী ওভাল পার্কের খোলা মাঠে বিশাল ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল মুসল্লী এই ঈদ জামাতে অংশ নেন।
নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতীব হাফিজ মুসাদ্দেক আহমেদ। এসময় ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মসজিদ কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা সৈয়দ জুবায়ের আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।
সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি সৈয়দ জামিন আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক শাহ জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুব হুসেইন, সহ কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহ আলম, কার্যকরী সদস্য সৈয়দ বসারত আলী, মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা মোস্তফা কামাল, সৈয়দ রাহুল ইসলাম সহ কমিটির সদস্যবৃন্দ।
নামাজ শেষে মুসলিম বিশ্বসহ সমগ্র মানবতার কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফিজ মুসাদ্দেক আহমেদ।
নিউইয়র্ক ঈদগাহ এর ১১ বছর পুর্তি উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটস মোহাম্মদী সেন্টার এবারের ঈদুল আদহাতে ৫টি জামায়াতের আয়োজন করেছিল। সকাল সাড়ে ৬টায়, সাড়ে ৭ টা, সাড়ে ৮ টা, সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১০টার জামাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুসল্লির সমাগম ঘটে। নিউইয়র্ক ঈদগার পক্ষ থেকে ইমাম কাজী কায়্যূম ৫টি জামায়াতে আগত মুসল্লিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। জ্যাকসন হাইটস মুসলিম কমিউনিটি ও নিউইয়র্ক ঈদগাহর সার্বিক সহযোগিতার জন্য নিউইয়র্ক ঈদগাহর পরিচালক ইমাম কাজী কায়্যূম স্থানীয় ১১৫ পুলিশ প্রিসিঙ্কটের ক্যাপ্টেইন আততাহিরীকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিটি জামাতের খুতবা শেষে বিশ্ব মানবতার কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদে সকাল ৮ টা ও সকাল ৯ টায় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জামাতে মহিলাদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল।
প্রথম জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা জুবাইর রাশিদ। দ্বিতীয় জামায়াতে ইমামতি করেন মৌলভী নূরুল ইসলাম।
এছাড়া ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদ, আন নূর ইসলামিক সেন্টার, কুইন্সের এস্টোরিয়ায় আল আমিন মসজিদ, জ্যামাইকার মসজিদ আল আলাফা (আরাফা ইসলামিক সেন্টার), ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ’ নামে পরিচিত মসজিদ মিশন ও দারুস সালাম মসজিদ, ওজোনপার্কে আল আমান মসজিদ, ব্রুকলীনে বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার এবং ব্রঙ্কস এলাকায় বড় ধরনের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৮ শতাধিক মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশি¬ষ্ট সিটির পক্ষ থেকে প্রতিটি ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা ছিল বলে জানা গেছে।
প্রবাসীদের অনেকে গরু ও খাশী কুরবানী দেন। কিন্তু দেশের মতো পশু কিনে নিজ বাড়িতে নিয়ে কুরবানী করার সুযোগ না থাকায় অধিকাংশ প্রবাসী অবশ্য আগে থেকেই স্থানীয় গ্রোসারী ও হালাল পল্ট্রি ফার্মে কুরবানীর অর্ডার দিয়ে রাখেন। সুবিধামত সময়ে গ্রোসারী ও পল্ট্রি ফার্ম থেকে প্রবাসীরা তাদের পশু কুরবানীর মাংস নিয়ে যান। বেশ কিছু গ্রোসারী ও পল্ট্রি ফার্ম কুরবানীর মাংস সরবরাহ করে ঈদের পরদিন। নামাজ শেষে অনেকে ছুটে যান পশু খামারে। দূরবর্তী স্থানের পশু খামারে গিয়ে পছন্দের গরু, খাশী অথবা ভেড়া কুরবানী দেন। অনেকে বাংলাদেশি গ্রোসারি/সুপার মার্কেট এর মাধ্যমে কুরবানী দেন। বাংলাদেশি গ্রোসারি/সুপার মার্কেট সূত্রে জানা গেছে, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসলিভেনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেটস, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, মিশিগান, জর্জিয়া, ইলিনয়, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ক্যানসাস, আরিজোনা প্রভৃতি স্টেটে প্রায় ৫০ হাজার পশু কোরবানি দিয়েছেন বাংলাদেশিরা।
ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, জর্জিয়ার বিভিন্ন স্থানে খোলা ময়দানে পশু কুরবানীর পর নারী-পুরুষ মিলে মাংস প্রসেসিং করেন বলে জানা গেছে।
বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি দেশে কুরবানী দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনেকে নামাজ শেষে কাজে যান। কেউ কেউ ঘনিষ্টজন আর বন্ধুদের বাসায় গিয়েও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নামাজ শেষে অনেকেই বাংলাদেশে স্বজনদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির ব্যবস্থাপনা এবং সিটি প্রশাসনের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল উল্লেখ করার মত। জামাতের আশপাশেই ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং থাকায় দূর দূরান্ত থেকে নির্বিঘ্নে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লী সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন