সম্প্রতি ইতালির ভেনিসে এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন একজন বাংলাদেশি। ইতালির মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে ভেনিসের মেয়র অফিসে অনুমতি চেয়েছেন তিনি।
যদিও এখনো তিনি অনুমতি পাননি। তবে তার পরিকল্পিত বিনিয়োগের অঙ্কটি বড় হওয়ায় ইতিমধ্যেই তাকে নিয়ে ইতালির গণমাধ্যমে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এই বিনিয়োগকারীর নাম মোঃ ডাবলু চৌধুরী। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। পড়াশোনা করেছেন সুইজারল্যান্ডে। বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেরও নাগরিকত্ব রয়েছে চৌধুরীর। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তার গাড়ির ব্যবসা রয়েছে।
বিবিসিকে চৌধুরী বলেছেন, তার কয়েকজন ব্যবসায়িক অংশীদারের সাথে মিলে এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে এপসিলন মোটরস ইনকর্পোরেশন নামে একটি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এখন এই প্রতিষ্ঠানের জন্য ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাণের কারখানা তৈরির জন্য তারা ভেনিসে বিনিয়োগ করার আবেদন করেছেন। ভেনিসের পোর্তো মারঘেরা নামক বন্দর নগরী, যেটি মূলত একটি শিল্পাঞ্চল, সেখানে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে এতে প্রায় এক হাজার কর্মীর চাকরির ব্যবস্থা হবে।
চৌধুরী বলেছেন, এপসিলন মোটরস ইনকর্পোরেশনের উদ্যোক্তাদের বড় অংশ বাংলাদেশি, এবং তাদের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের বড় অংশই এক সময় জার্মানি এবং চীনে জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জের কারখানায় কাজ করতেন। অনুমতি পেলে ২০২৩ ভেনিসে এ কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। যদিও কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা সে বিষয়ে এখুনি ধারণা দিতে পারেননি তিনি।
তবে এই বিদ্যুৎচালিত গাড়ির কারখানার পাশাপাশি লিথিনিয়াম ব্যাটারি তৈরির কারখানা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে মূল পরিকল্পনায়। চৌধুরী বলেছেন, “ব্যতিক্রমী এবং সাসটেইনেবল কিছু করার জন্য আমরা এপসিলন মোটরস করেছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে যদি এমন কিছু করা যায় ভবিষ্যতে যার ব্যাপক চাহিদা হবে এবং যেটি পরিবেশবান্ধব হবে তাহলে আমাদের কাজটি সাসটেইনেবল হবে।” সে কারণে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। তিনি বলেছেন, পরিকল্পিত কারখানার জন্য বিনিয়োগ আসবে যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের একদল ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের কাছ থেকে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বলতে সাধারণত বড় বিনিয়োগকারী, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত বিনিয়োগকে বোঝানো হয়, যারা সম্ভাবনাময় এবং ভবিষ্যতে লাভজনক হতে পারে এমন স্টার্টআপ বা ছোট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে। তিনি বলছিলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো রাজ্যে, ইংল্যান্ডে এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রাধান্য থাকবে। “এবং এজন্য চীনসহ বিভিন্ন দেশের সরকার এখন যারা ইলেকট্রিক গাড়ি বানাচ্ছে এবং বিক্রি করছে তাদের ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) দিচ্ছে,” বলেন তিনি। “এখন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা টাকা বিনিয়োগ করবে, আর আমাদের হচ্ছে প্রযুক্তি এবং কারিগরি দিক, এই দুই মিলে আমরা এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি,” চৌধুরী বলেছেন।
ইতালিতে বিনিয়োগের প্রস্তাবটি মার্কিন কোম্পানি হিসেবে দেয়া হয়েছে, কিন্তু এপসিলন মোটরসের প্রধান এবং একজন বাংলাদেশি হিসেবে তিনি বাংলাদেশি দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছেন। মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এমজেএইচ জাবেদ বিবিসিকে বলেছেন, মূলত তার মাধ্যমে চৌধুরী ভেনিসে কারখানা খোলার অনুমতি চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। জাবেদ বলেছেন, কিছুদিন আগে চৌধুরী মিলানে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কার্যালয়ে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে উপযুক্ত জমির খোঁজ এবং অনুমতির জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছিলেন।
এরপর ভেনিস কমিউনের অ্যাসেসরি কমার্সিও মানে বাণিজ্য দপ্তর, যার প্রধান ডেপুটি মেয়র সিবাস্টিয়ান কস্টালোঙ্গার, তার কাছে চৌধুরীর হাতে লেখা একটি চিঠি যেখানে তিনি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, সেটি পৌঁছে দিয়েছেন জাবেদ। কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা চিঠিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯২০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাবেদ। এক হাজার মিলিয়নে এক বিলিয়ন হয়।
জাবেদ বলেছেন, “বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিনিয়োগের প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য তিনি আমাদের সাহায্য চেয়েছিলেন। আমি নিজে যখন ভেনিসে গেছি সেসময় আমি নিজ হাতেই তার আবেদনপত্রটি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।” ভেনিসের মেয়র কার্যালয় এখন সেটি পর্যালোচনা করছে। বুধবার কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন চৌধুরী। জাবেদ বলেছেন, এই কারখানা হলে ইতালিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে, এমন বিবেচনায় তারা মি. ডাবলু চৌধুরীকে সাহায্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভেনিসে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি চাকরি-পড়াশুনার সূত্রে বসবাস করছেন। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন