প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খোদ রাজধানীতেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে। একটি ইংরেজি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব না থাকলেও কেবলমাত্র সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় সেবাবঞ্চিত থাকছে রোগীরা। ডাক্তারের অবর্তমানে ওয়ার্ডবয় আর নার্সদের গাফিলতিতে আয়ারা হয়ে ওঠে সর্বেসর্বা। এর বাইরে রয়েছে দালালদের উৎপাত। হাসপাতালে ভর্তি করতে দালাল, ওয়ার্ডে বেড পাওয়া নিশ্চিত করতে এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও দালালদের সাহায্য নেয়া ছাড়া উপায় নেই। এমন অভিযোগও রয়েছে সরকারি কোন কোন হাসপাতালে রোগীর জন্য ট্রলি ব্যবহার করতেও টাকা গুনতে হয় স্বজনদের। বলা হচ্ছে, রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ট্রলি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাড়তি টাকা কামাচ্ছে বহিরাগতরা। ছুটির দিনে আর রাতের বেলায় হাসপাতালগুলোর চেহারা আমূল পাল্টে যায়। বহু খোঁজাখুঁজি করেও ডিউটি ডাক্তারদের পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। দরজা আটকে বিশ্রামে থাকা নার্সদের ডাকলে রীতিমত রক্তচক্ষু দেখতে হয়। অনেক হাসপাতালের আঙিনাসহ চারপাশে ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। কোন কোন হাসপাতাল ঘিরে রয়েছে ঝুপড়ি বস্তি আদলে ঘরবাড়ি। কোথাও কোথাও দোকান-পাটের জঞ্জালে ঠাঁসা। কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালের আঙিনা নেশাখোর ভবঘুরেদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর বেহালদশায় চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে দিনদিনই রোগী ভোগান্তি বাড়ছে। রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গের অবস্থা করুণ। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখনো দিনের পর দিন পরীক্ষাধীন লাশগুলো পড়ে থাকছে হাসপাতালের মর্গের ফ্লোরে। এসব লাশের অভিভাবকরা আক্ষেপ করে বলেছেন, মরেও ভোগান্তির অবসান হলো না।
নিতান্ত নিরূপায় না হলে কেউ সরকারি হাসপাতালে যেতে চায় না। দেশের সামর্থ্যবানরা সাধারণত বেসরকারি হাসপাতালে সেবা গ্রহণ করে থাকে। দেশের বাইরে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বলাবাহুল্য, স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের একটি বিরাট অংশ ব্যয় হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রায় উঠে গেছে। কমবেশি যাই হোক, একপ্রকার অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের সরকারি হাসপাতাল ছাড়া যাবার জায়গা কম। দেশের চিকিৎসা খাতের অবস্থা এমন যে অনেককেই দেখা যায় যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার পরও প্রয়োজনীয় ওষুধ বাইরে থেকে কিনছেন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তা পাওয়া যায় না। একথা অস্বীকার করা যাবে না দেশে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি হাসপাতাল অপ্রতুল। হাসপাতালগুলোতে প্রায়শঃই দেখাযায় রোগীদের উপচেপড়া ভিড়, এর উপর রয়েছে নানা অনিয়ম। ক’দিন আগে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসাকে কেন্দ্রকরে মর্মান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে এই বিশেষ দালালদের কারণেই রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। আবার সংশ্লিষ্টদের সন্তুষ্ট করতে পারলে সরকারি হাসপাতালে হয় না এমন কোন কাজ নেই। অপরদিকে, হাসপাতালে এদের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ডবয়-আয়াদের অপারেশন ব্যান্ডেজ করার সচিত্র প্রতিবেদনও ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। খোদ রাজধানীতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে ধরনের অব্যবস্থাপনার খবর প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় রাজধানীর বাইরের হাসপাতালগুলোর অবস্থা কতটা নাজুক। কেন কর্তব্যরত ডাক্তার ও সংশ্লিষ্টরা দায়িত্ব পালন করছে না তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
সরকারি হাসপাতালে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা কোন বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হাসপাতাল চত্বর দালাল ও মস্তানদের দখলে থাকা অনাকাক্সিক্ষত। কেন এবং কোন অঘোষিত নীতিতে এটা হচ্ছে বা হতে পারছে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দেখা যায় কোনো বিষয় নিয়ে মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে দু’একদিন সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন, তারপর আবার যা তাই হয়। স্থায়ী কোনো সমাধান হয় না। যাদের জন্য যাদের সেবার নামে সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তারা যাতে প্রয়েজনীয় ও পর্যাপ্ত সেবা পেতে পারেন তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। কেবল কথার ফুলঝুরি না ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সবাই আন্তরিক হবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন