মৌসুমি কাজের ভিসায় পাঁচ বছর মেয়াদে মোট ১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেবে গ্রিস। দুই দেশের মধ্যে আগেই সই হওয়া এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে গ্রিসের পার্লামেন্ট। গত কয়েক মাস ধরেই গ্রিসে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। এর অংশ হিসেবে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমঝোতা স্মারক সই করে ঢাকা ও এথেন্সের সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়। সেই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বছরে ১৫ হাজার মৌসুমি কর্মী নিতে রাজি হয় গ্রিস।
তবে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নির্ভর করছিল দেশটির পার্লামেন্টের অনুমোদনের ওপর। গত ২০ জুলাই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিতে পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। দেশটির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি এক টুইটার বার্তায় এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এ উদ্যোগের কারণে অবৈধ অভিবাসন সমস্যা কমে আসবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ফেব্রুয়ারির সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী গ্রিস সরকার বাংলাদেশিদের প্রতি বছর কৃষিখাতে চার হাজার মৌসুমি কাজের ভিসা দেবে। আগামী পাঁচ বছরে সর্বমোট ১৫ হাজার বাংলাদেশিকে এই ভিসা দেবে গ্রিস। মৌসুমি ভিসা নিয়ে আসা বাংলাদেশিরা নির্দিষ্ট কাজ নিয়ে গ্রিসে যাবেন এবং বছরে ৯ মাস গ্রিসে বসবাস ও কাজের সুযোগ পাবেন। কৃষিখাতে ভিসা পাওয়া প্রত্যেককে নয় মাস পর দেশে ফিরতে হবে, যা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ সরকার। একজন ব্যক্তি এভাবে বছরে নয় মাস করে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর গ্রিসে বৈধ অভিবাসী হিসেবে কাজ করা যাবে। সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কোনো ব্যক্তি এই ভিসা নিয়ে গ্রিসে কাজ করলেও তিনি নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
গ্রিসের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈধ অনুমতি নিয়ে দেশটিতে বসবাস করা বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। এর বাইরেও অনেকে রয়েছেন যাদের বসবাসের অনুমতি নেই বা আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে। অবৈধ উপায়ে গ্রিসে প্রবেশ ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি সম্প্রতি এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও তৎপর হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ১৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় এথেন্স। সেই সময় গ্রিসের মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি জানান, বাংলাদেশের সরকারের সহযোগিতায় পাঁচ বছর পর অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আওতায় যারা নেই, তাদেরকে ফেরত পাঠাচ্ছে গ্রিস। অনিয়মিত অভিবাসী ফেরত নিতে ঢাকা সহযোগিতা করায় বৈধপথে বাংলাদেশ থেকে গ্রিসে মৌসুমি কর্মী আনার সুযোগ তৈরি হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
দুই দেশের চুক্তিতেও ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আরও জোরদারের কথা বলা হয়েছে। সমঝোতা চুক্তির পর গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই ও অবৈধভাবে যারা বসবাস করছে, তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। পাচারচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গ্রিসের অবস্থান পরিস্কার। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদও এই বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সম্পূর্ণ নিয়োগকারীদের ব্যয়ে গ্রিসে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি যেন কোনোভাবে কোনো দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন