রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ তৈরী করছে পুলিশ। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শহরের প্রত্যেকটি থানায় সন্দেহজনক, উচ্ছৃঙ্খল কিশোরদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। পুলিশের এ উদ্যোগটি শুরু হয়েছে দক্ষিণখান থানা থেকে। এ থানায় এখন পর্যন্ত ৪৫০ জন কিশোর গ্যাং সদস্যের তালিকা তৈরী করা হয়েছে।
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসব তথ্য জানান ডিএমপির দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মামুনুর রহমান। সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, আত্মহত্যা প্রতিরোধসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ওসি।
এ সময় এলাকার মাদক-সন্ত্রাস নির্মূল, কিশোর গেংয়ের দৌরাত্ম, অবৈধ দখলযজ্ঞ, চাঁদাবাজি, জুয়া ও ইভটিজিং সহ নানা অপরাধ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক আলী আজম, দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক ইয়াছিন রানা, নিউজ২৪ টেলিভিশনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম, দৈনিক নয়া শতাব্দীর সাংবাদিক ইদ্রিছ আলম, ভোরের পাতার সাংবাদিক যোবায়ের হোসাইন, দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণখান থানা এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করে মানুষের নিরাপত্তা অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণখান থানার ওসি মুহাম্মদ মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের কারণে নানামুখী অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। কিশোরদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে তাদের সহজে চিহ্নিত করাও যায় না। আর এদের বেশিরভাগ ভাসমান, হয়তো আজ এই এলাকায় ভাড়া থাকে, আবার অন্য এলাকায় চলে যায়। তাই সন্দেহজনক, অপরাধপ্রবন এবং অপরাধের সাথে জড়িত এমন কিশোরদের তালিকা শুরু করেছি। তাদের বাবা, মা, আত্মীয়দের নাম, মোবাইল নাম্বার, ফেসবুক আইডি, টিকটক আইডিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেগুলো ব্যবহার করে সেটার আইডির তথ্য সংগ্রহ করছি। এছাড়া থানায় তাদের বাবা-মা বা স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে এনে তাদের সন্তানদের বিষয়ে জানাচ্ছি। এতে করে কিশোরদের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করে এবং শোধরানোর সুযোগ পাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে অপরাধে কম জড়াচ্ছে কিশোররা।
ওসি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সন্তান কী করে তা অভিভাবক জানেই না, আমাদের জানানোর পর তারা সন্তানদের শাসন করতে পারছেন। অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে রাস্তার পাশে বসে সিগারেট খায়। তাদের অভিভাবকসহ থানায় ডেকে এনে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজের কাজ দক্ষিণখান থানা থেকেই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৫০ জন কিশোরের তালিকা করেছি ছবিসহ। আমাদের থানার পর ডিএমপি থেকে অন্যান্য থানাতেও কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশের আত্মহত্যা বিরোধী প্রচারণার কারণে আত্মহত্যা কমে আসছে। আমরা স্কুল কলেজ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আত্মহত্যা বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছি।
ওসি মামুন বলেন, গত এক বছরে দক্ষিণখান থানায় ৪৫২ জন মাদকের আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ২৬ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেছি। ভিক্টিম উদ্ধার করা হয়েছে ৯৪ জন, গাড়ি উদ্ধার ১৫টি। মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৭৭টি, মামলা রুজু হয়েছে ৫৯৬টি, গ্রেফতারি পরোয়ানা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০২৩টি। আসামী গ্রেফতার হয়েছে ১৬৭৭ জন।
ওসি আরও বলেন, এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ নানা অপরাধ ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সাংবাদিক ও পুলিশের সমন্বয় খুবই জরুরী। তবে শুধু পুলিশ ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ের ভিত্তিতে থানা এলাকায় নানা অপরাধ প্রতিরোধ ও নির্মূল করা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন