গত ১ জুন থেকে ৩ মাসের জন্য সুন্দরবনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। বনবিভাগের এ নিষেধাজ্ঞা আগামী ১ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এরই মধ্যে প্রায় দু’মাস পর্যটকবিহীন থাকায় সুন্দরবন যেন হারানো সবুজ সতেজ যৌবন ফিরে পেয়েছে। নিরাপদ শব্দহীন নিশ্চিন্ত পরিবেশ পেয়ে বন্যপ্রাণিরা অবাধে সারা বন ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছে হলেই পানি খেতে নামছে নদী-খালে। স্বাভাবিক সময়ে পর্যটন স্পটগুলোর কাছে আসতে ভয় পেলেও এখন তারা আগের মত আর ভয় পাচ্ছে না। হরিণ শাবকগুলো ছোটাছুটি করছে যত্রতত্র। সুন্দরি, বাইন, গড়ানের ডালে ডালে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। ডাঙায় কুমিরের দেখা যেমন মিলছে, বনের ভিতর থেকে হঠাৎ বাঘের গর্জনও শোনা যাচ্ছে। বন মোরগের ডানার ঝাপটার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে সন্ধ্যা নামতেই।
সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মোহাম্মদ আজাদ জানান, প্রায় সারাবছরই সুন্দরবনে পর্যটকেরা আসেন। নিষেধ করার পরও পর্যটকদের অনেকেই বনের হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণিকে উত্যক্ত করেন। বানরকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন। বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, ওয়ান টাইম প্লেট ফেলে বনের পরিবেশ নষ্ট করেন। বন্যপ্রাণিরা স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকদের ভয় পায়। তাই তারা যথাসম্ভব বনের গভীরে থাকার চেষ্টা করে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন বণ্যপ্রাণিরা একটু একটু করে সাহস সঞ্চয় করেছে। তারা পর্যটন স্পটগুলোর কাছে দল বেঁধে চলে আসছে। যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে, তখন খুব সহজেই হরিণের ঝাঁক, বানরের দল, বিভিন্ন পাখি, সরিসৃপ মুক্তভাবে ঘুড়ে বেড়ায়। এমনকি বাঘও ঘন বন ছেড়ে অপেক্ষাকৃত খোলা জায়গায় চলে আসে। নিশ্চিন্তে হরিণগুলো নদী ও খালে পানি খায়। এ সময় সুন্দরবনের যে কোন খালে ঢুকলে কাছাকাছি দূরত্বে অসংখ্য বন্যপ্রাণি দেখা যায়। নিষেধাজ্ঞা থাকাতে গত দু’মাসে সুন্দরবনে মানুষ ঢোকেনি। তাই গাছপালাও আকারে বেশ বেড়েছে। লবনাক্ত গুল্মজাতীয় উদ্ভিদগুলোও সতেজভাবে বেড়ে উঠেছে। অন্যদিকে, মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় নদী-খালগুলোতে চিংড়ি, লইট্ট্যা, লাক্ষাসহ নানা প্রজাতির মাছের পরিমাণ বেড়েছে। যান্ত্রিক নৌ-যান চলাচল বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে খালগুলোর পানির দূষণ কমেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সুন্দরবনে ভ্রমণ ও মাছ শিকারে গত ১ জুন থেকে টানা তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এ বছর মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সুন্দরবন অনেকটাই ঘুড়ে দাঁড়ায়, মানুষ সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়।
এদিকে, সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকায় বনজীবীরা বেশ দুরবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের খাল ও নদীতে মাছ ধরে যারা জীবন জীবিকা চালান তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ সময় সাহায্য সহযোগিতা করা হয়, কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্ধ লক্ষ মানুষকে নিষেধাজ্ঞার সময়টুকু বলতে গেলে কর্মহীন হয়ে থাকতে হয়। অন্যদিকে, এবার ঈদের ছুটিতে অনেক পর্যটকই সুন্দরবনে এসে ঢুকতে না পেরে ফিরে গেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন