মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানে মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলের শ্রম অধিদপ্তরে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহা পরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনায় বসে আন্দোলন স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার দূপুর ১২টার দিকে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুর রহমান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা সহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী জানান, শ্রমিকদের দাবিদাওয়া শুনেন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য চা শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ করেন। চায়ের এই ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ৮ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে চা বাগান মালিকদের। ৩০০ মজুরীর বিষয়ে তিনি বাগান মালিকদের সঙ্গে আগামী ২৩ আগষ্ট ঢাকায় মন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে চা শ্রমিকদের মজুরীর বিষয়ে কথা বলবেন।
তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন জানান, তারা যে পর্যায়ে আছেন সেখান থেকে ফেরা সম্ভব না। তারা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সেখান থেকে মজুরী বৃদ্ধির ঘোষণা আসা ছাড়া ফেরা সম্ভব নয়। শুধু তারা শোকের মাসের কথা বিবেচনা করে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত রাজপথ অবরোধে চা শ্রমিকরা যাবেনা। বাগানের ভেতর অন্যান্য কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন গত ৯ আগষ্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট ২ ঘন্ট করে পালন করা হয়। এর পর ১৩ আগষ্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস চা শ্রমিক ধর্মঘট পালন করে। ১৪ ও ১৫ আগষ্ট ২ দিন স্থগিত থাকার পর আজ ১৬ আগষ্ট পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করে ও বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের সাথে সমজতার বৈঠক হয়। দেশের ১৬৭ টি চাবাগানের ন্যায় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকরা অংশ নিচ্ছে এই ধর্মঘটে।
চা শ্রমিকরা জানান, তাদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে প্রতি বছর চা শিল্পে রেকর্ড চা উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালে দেশের ইতিহাসে চাযের রেকড পরিমান উৎপাদন ৯৬ মিলিয়ন কেজি চা হয়েছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন আজও হয়নি। চা শ্র্রমকদের মজুরী বৃদ্ধির দুটি চুক্তি বাস্তবায়ন করা হলেও বারবার মার খাচ্ছেন চা শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, চলমান আন্দোলনের মধ্যে সর্বশেষ সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা সহ বিভিন্ন ভ্যালীর চা শ্রমিক নেতারা। কর্মসূচি অনুযায়ী সারা দেশে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন আজও চলছে। গত রোববার সাপ্তাহিক ছুটি ও সোমবার জাতীয় শোক দিবসের ছুটিতে আমাদের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালীর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, বর্তমান সময়ে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা একাধিক সময়ে বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করছি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী মজুরী বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তি ভঙ্গ করছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির এ দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে চা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। বর্তমানে শোকের মাসের কথা বিবেচনা করে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত রাজপথ অবরোধে চা শ্রমিকরা যাবেনা। বাগানের ভেতর তাদেও ধর্মঘটের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন