হত্যার পর লাশ গুম করা মামলা হয় সালথা থানায়। অতঃপর ৩৫ দিন পর তাকে জীবিত উদ্ধার করেছেন থানা পুলিশ।
সালথায় আত্মগোপনে থাকা ৩৫ দিন পর নুর ইসলাম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মামলায় অভিযোগ ছিল তাকে অপহরণের পর মরদেহ গুম করা হয়েছে। এ অভিযোগে মামলাও করেন গুম হওয়া ব্যাক্তি নুর ইসলামের স্ত্রী।
রোববার (২১ আগস্ট) সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাে. শেখ সাদিক গনমমাধ্যম কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গত শক্রবার (১৯ আগষ্ট) রাত তিনটায় বগুড়া জেলা সদর হতে তাকে উদ্বার করা হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই সালথা উপজেলার সােনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয় নুর ইসলাম। ২৭ জুলাই, ১৪ জনকে আসামি করে ফরিদপুরে কোর্টে একটি মামলা করেন তার স্ত্রী আন্না বেগম।
আদালত মামলাটি সালথা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটির তদন্তভারের দ্বায়িত্ব পান উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ফরহাদ হােসেনকে।
মামলার আসামি করা হয় উপজেলার রাঙ্গারদিয়া গ্রামের মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বর, সানােয়ার মাতুব্বর, মুনছুর মুন্সী, হাবিব শেখ, আনিছ শেখ, হাসান শেখ, বাবলু মােল্যা, রাকিব শেখ, দবির শেখ, কবির শেখ, ইসমাইল মােল্যা, হিলাল শেখ ও হিমায়েত শেখকে।
নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগম মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা ও গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে বিরােধ চলছিল। তার স্বামী একজন দরিদ্র কৃষক। কিছুদিন আগে গাছ কাটা নিয়ে মামলার এক আসামি আনিচের সঙ্গে তার স্বামীর বিরােধ হয়। গত ১৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে নুর ইসলাম স্থানীয় স্লুইসগেট এলাকায় চা পান করতে যান। রাত ১১টার পরও তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। মােবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
আন্না ব্গেম আরও উল্লেখ করেন, ‘মামলার আরেক আসামি ছিদ্দিক আমাদের বাড়িতে এসে আমার শ্বশুরকে বলেন, তােমার ছেলে কােথায়?। আমরা বলি, তিনি বাজারে চা পান করতে গেছেন। তখন ছিদ্দিক আমার শ্বশুরকে বলেন, তােমার ছেলের লাশ রাঙ্গারদিয়া কুমার নদীতে ভাসছে। যাও, গিয়ে লাশ নিয়ে আসাে। পরে আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে খোঁজ করে তার সন্ধান না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসি।’
‘পরের দিন সকাল ৯টার দিকে আমার ছেলে তার ফেসবুকে আইডিতে ঢুকে একটি ভিডিও পোস্ট দেখে। সেখানে দেখা যায়, আসামিরা আমার স্বামীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করছেন। তারপর থেকে তার আর খোঁজ নেই। এতে আমাদের সন্দেহ ও আশঙ্কা করছি যে, আমার স্বামীকে অপহরণের পর হত্যা করে তার লাশ গুম করেছেন আসামিরা।’
এ বিষয়ে মান্নান মাতুব্বর, সিদ্দিক মাতুব্বর ও সানােয়ার মাতুব্বর অভিযােগ করে গনমমাধ্যম কে বলেন, ‘আমাদের নামে এত বড় মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে এলাকা ছাড়া করে রেখেছেন নুর ইসলামের স্ত্রী। মিথ্যা মামলা দেওয়ায় আমরা তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করবাে। সঠিক তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটন করায় সালথা থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালথা থানার এসআই ফরহাদ হােসেন বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শুরুর পর অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেও বেশ কিছু তথ্য পাই। এসব তথ্যের সূত্র ধরেই নুর ইসলামকে উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘মামলার আসামিদের একজনের বোনের সঙ্গে পরকীয়া ছিল নুর ইসলামের। ঘটনার রাতে আসামির বোনের সঙ্গে পরকীয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম।’
‘মারধরের শিকার হওয়ার পর পরিবারের পরামর্শে নুর ইসলামকে ওই রাতেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন নুর ইসলাম বগুড়া সদরে গিয়ে তার শ্যালক ওমর ফারুকের কাছে আশ্রয় নেন। সেখান তিনি আফরিন জুটমিলে চাকরি নেয়। পরে তার স্ত্রী আন্না বেগম আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন। বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পর সঙ্গীয় পুলিশ দিয়ে বগুড়া সদরে গিয়ে প্রথমে তার শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নুর ইসলামকে উদ্ধার করা হয়’, যোগ করেন এসআই ফরহাদ হোসেন।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাে. শেখ সাদিক গনমমাধ্যম কে বলেন, নুর ইসলামকে লুকিয় রেখে তার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেন। আমরা তাকে জীবিত উদ্ধার করে শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠাই। আদালত তার পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন। এখন আমরা নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগমকে খুঁজছি। মিথ্যা মামলা করায় তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার গনমমাধ্যম কে বলেন, ‘পরকীয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঘটনা। ওই লোকটি নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন