খুলনার বণিকপাড়া থেকে প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ রহিমা খাতুনকে (৫২) শনিবার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি এতোদিন স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে ছিলেন। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক বলছে পুলিশ। এদিকে তার নিখোঁজের ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে, যারা এখনো কারাগারে রয়েছেন। গত শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার একটি লাশকে মায়ের মরদেহ বলে দাবি করেছিলেন রহিমা খাতুনের কন্যা মরিয়ম মান্নান।
সূত্র জানায়, খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) একটি টিম শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী গ্রাম থেকে রহিমা খাতুনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, দৌলতপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে খুলনা থেকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী গ্রামে যায়। তারা রহিমা খাতুনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।
রহিমা খাতুন ‘আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি করেছেন মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার এসআই লুৎফুল হায়দার। তিনি বলেন, ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধারের পর দাফন হওয়া এক নারীর লাশকে নিখোঁজ রহিমার বলে দাবি করেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। লাশ শনাক্তের জন্য শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় পৌঁছান। এরপর উদ্ধারকৃত নারীর পোশাক ও আলামত দেখে কন্যা দাবি করেন লাশটি তার মায়ের। ওই দিন ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পোশাক ও অন্যান্য আলামত দেখে মরিয়ম মান্নান দাবি করেছেন লাশটি তার মায়ের। তবে ডিএনএ পরীক্ষা না করে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) আদালতে ডিএনএ টেস্ট এর আবেদন করার কথা ছিল।
প্রসংগত, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা বেগম (৫২)। ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সকল স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান নি। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফ। এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে প্রেরণের আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং একই সাথে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। রহিমা খাতুনের সাথে জমি নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ ও মামলা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন