শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিজিটাল সূত্র ‘ডাহা মিথ্যা কথা’

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

আর্কিমিডিসের সুত্র হলো ‘কোনো বস্তুকে স্থির তরল অথবা বায়বীয় পদার্থে আংশিক বা সম্পূর্ণ ডুবালে বস্তুটি কিছু ওজন হারায় বলে মনে হয়। এই হারানো ওজন বস্তুটির দ্বারা অপসারিত তরল বা বায়বীয় পদার্থের ওজনের সমান।’ খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গ্রিক দার্শনিক আর্কিমিডিস এ সূত্র আবিষ্কার করেন। এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ‘সত্য-মিথ্যার’ নিয়ে ডিজিটাল সুত্র আবিস্কার করেছেন। তার আবিস্কৃত সূত্র হচ্ছে ‘কারো বক্তব্য নিয়ে যদি অধিক বিতর্ক করা হয় এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি প্রতিবাদ ও বিতর্কের ঝড় উঠে তাহলে আপনাআপনি ওই বক্তব্য বিপরীতরুপ (ডাহা মিথ্যা) ধারণ করে।

রসায়নের শিক্ষার্থীদের মতোই ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজের নতুন আবিস্কৃত ডিজিটাল সূত্রে ফেলে গতকাল সচিবালয়ে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি তার ধারে কাছেও নেই। এটি ডাহা মিথ্যা। ভারতের কাছে শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে, এমন কোনো অনুরোধ জানাননি’। বাস্তবে দেখা যায় ইউিিটউবগুলোতে তার বক্তব্যের রেকর্ড রয়েছে। যে কেউ গুগলে গিয়ে ইউটিউবে ‘গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানের দেয়া তার বক্তব্য শুনতে পারেন।

গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি ডাহা মিথ্যা। নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলিনি। তাহলে কি বলেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্লোবাল কনটেস্ট যে অস্থিতিশীল অবস্থা তার প্রেক্ষিতে স্থিতিশীলতার কথা বলেছি।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারত সরকারকে সেটা করার অনুরোধ করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারত সরকারকে সেটা করার অনুরোধ করেছি।’

‘ভারতের সহায়তা চাওয়া’ বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের মুখে পরের দিন নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি জেনে বুঝেই ভারতের কাছে সহায়তার চাওয়ার কথা বলেছি। আমি আমার বক্তব্য থেকে সরছি না। আমি ভুল কিছু বলিনি। আমরা স্থিতিশীলতা চাই। আমাদের বন্ধুরাও তা চান। সে জন্য আমার যা যা বলা দরকার বলেছি। কোনো কিছু ভুল বলিনি। নাথিং রং ইট। আমি আরও বলব। তাদের সহযোগিতা আমাদের দরকার।’

দেশের জনগণের ভোটের বদলে নির্বাচনে ভারতের সহায়তা চাওয়া এই বক্তব্যের পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ভারতের সহায়তায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বিরোধী দলগুলোর এ দাবির যৌক্তিকতার প্রমাণ মেলে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ‘বোমা ফাঁটানো’ বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তা দেশের জন্য অসম্মানজনক।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ভারতকে অনুরোধ করার জন্য শেখ হাসিনা এমন কাউকে দায়িত্ব দেননি। ওই বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজের’। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নন। দলে তার কোনো পদ-পদবিও নেই। তিনি সরকারের মন্ত্রী। কাজেই তিনি যা বলবেন সেটা কোনোভাবেই দলের বক্তব্য হতে পারে না।’ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য। কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিদেশে গিয়ে কিছু বলা, সে দায়িত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউকে দেয়নি, ওনাকেও দেয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করলেও জিএম কাদের, আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, রুহুল কবির রিজভী, ড. রেজা কিবরিয়া, নুরুল হক নূর, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ শত শত নেতা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তুলে মামলা দায়েরের দাবি করেন।

এ কে আবদুল মোমেনের বক্তব্যে শপথ ভঙ্গ হয়েছে অভিযোগ করে তার পদত্যাগ চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এরশাদ হোসেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে গত রোববার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়, ‘নোটিশ প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’

এর আগে ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ বক্তব্য দিয়ে তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সাংবাদিকদের ওপর এর দায় চাপিয়ে বলেছিলেন, আপনারা (সাংবাদিক) আমাকে খেয়ে ফেললেন? সেই ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ বক্তব্যের মতোই গতকাল তিনি গ্রিক দার্শনিক আর্কিমিডিসের মতোই নতুন সুত্র ‘ডিজিটাল মিথ্যা’ আবিস্কার করে প্রবাদের ‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে আভিযোগ আমি এই অভিযোগের ধারে কাছেও নেই।’ প্রশ্ন হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কথার ধারের কাছে নেই হয়ে থাকেন তাহলে ইউটিউবে কার কণ্ঠ শোনা যায়? তাহলে যারা বিতর্ক করছেন তারাই মিথ্যা বলছেন? এতো রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের দুইবিঘা জমি কবিতার মতোই ঘটনা। ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আমি আজ চোর বটে’। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Huda ২৩ আগস্ট, ২০২২, ১০:০০ এএম says : 0
নকল জান্নাতের(পৃথিবীর) সেরা মিথ্যা বাদী। নকল জান্নাত বাসীরা এমনই হয়, একটা সত্য লুকানোর জন্য হাজার কুটি মিথ্যা বলে যাচ্ছে, প্রতিটি কথার জন্য দিতে হবে, যত বড় মন্ত্রী হও আল্লাহর বিচারে মিথ্যা বলার কোনো সুযোগ নেই. সেদিন শরীরীরে প্রতিটি অঙ্গ সাক্ষী দিবে, নকল জান্নাতীরা তোমরা নকল জান্নাত নিয়ে থাকো। ..
Total Reply(0)
Saidur Shohagrana ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:১২ এএম says : 0
বিবেকের তাড়নায় বলে পেলেছেন.... আবার এটা একটা বড় দলিল যারা স্বাধীন দেশকে ক্ষমতার লোভে সিকিম বানিয়ে পেলেছে। যারা এদেশকে অন্যদেশের অঙ্গরাজ্যে পরিনত করেছে... তাদের বিরুদ্ধে বস্তুত, আমরা আর স্বাধীন রাষ্ট্র নাই, আমরা কিছুটা জুম্মু কাশ্মীরের মতই চলতেছি
Total Reply(0)
Iqbal Faruki ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:০৯ এএম says : 0
জাতীয় মিথ্যা বাদী উপাধি দেয়া হোক।
Total Reply(0)
Md Atik ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:০৯ এএম says : 0
মতিভ্রম হলে ওরকমই বলে !
Total Reply(0)
Soman Paul ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:০৯ এএম says : 0
পৃথিবীর সেরা মিথ্যা বাদী
Total Reply(0)
H M Mizan ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:০৯ এএম says : 0
আমার কাছে বড় ভিডিওটি রয়েছে আসলে তিনি যা বলেন সবি মিথ্যা! যেমন এইটা, হেইটা ও সেইটা।
Total Reply(0)
Mahabub Rahman ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:১০ এএম says : 0
আফসোস হয়,বৈধ হোক অবৈধ হোক একটি সরকার ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়তে পারেনি! ক্ষমতায় থাকার জন্য অন্য একটি দেশকে আহবান করে নিজ দেশে হস্তক্ষেপ করার জন্য! এটা জাতি হিসেবে আমাদের কাছে খুবই লজ্জার ব্যাপার! আমি নিজেও লজ্জিত আমি এই স্বাধীন দেশের নাগরিক!
Total Reply(0)
Zahir Uddin Mohammad Babar ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:১১ এএম says : 0
আমি মনে করি লোকটা ভালো সব সত্য প্রকাশ করে দেয়।নির্বাচন আসার আগে এগুলো দেশের মানুষের জানা দরকার তাই নিতি ভিতরের খবর প্রকাশ করে দিতেছে।
Total Reply(0)
Sourendro Halder ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:১১ এএম says : 0
যতই বেফাস কথা বলুক,মন্ত্রীত্ব যাওয়ার কোন ভয় নাই,মন্ত্রী,এমপিরা এরকম কথা বলেই চলেছে,তারপরেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন