উত্তর : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ঈমানদারদের খুব উঁচু গুন। এই গুন অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ ওয়ালা হওয়া যায়। আল্লাহ ওয়ালা হওয়ার জন্য ইমান ও তাকওয়া এ দুটি গুনের মাধ্যমে সাধিত হয়। এই দুটিই অন্তরের মনিকোঠায় স্থান লাভ করে। মনে যদি তাকওয়া বা আল্লাহভীতি স্থান দখল করতে পারে, তবে বাহ্যিকতায় তা ফুটে উঠবে। মনে যদি তাকওয়া পোষন না করে তবে তার লৌকিকতায় ভাড়ামি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। একদিন না একদিন তার এই ভাড়ামি নামক মুনাফিকি লোক সমাজে ধরা পরবেই। তাকওয়াবানদের তাকওয়া কথায় কাজে, চলন বলনে, আচরনে প্রকাশ পাবেই। কথায় আছে আকাশের সৌন্দর্য তারকারাজি আর জমিনের সৌন্দর্য তাকওয়াবান ব্যক্তি। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিই তাকওয়াবান, তবে তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
কোরআনকে মহান রব তাকওয়াবানদের জন্য পথের দিশা, গাইড লাইন বানিয়েছেন। পুরো কোরআনকেই তাকওয়ার জন্য সাজিয়েছেন। কোরআনের পুরো আলোচনায় কেবল তাকওয়া অর্জনের জন্য। কোরআনে একটু পরপরই তাকওয়ার আলোচনা এসেছে। মহান রবের নিকট তাকওয়াবানরাই সম্মানের পাত্র। তাকওয়া ছাড়া রবের কাছে আর কোনটিরই মূল্য নেই। তাকওয়া ছাড়া কোন ইবাদাতই গ্রহনযোগ্য হয় না। তাকওয়াই সেরা গুন। সেরা চাবিকাঠি। মহা সফলতা।
আজকের সমাজে তাকওয়ার সাজ আছে, তাকওয়ার ভাব আছে। মনের মনিকোঠায় তাকওয়ার রাজ অনেকাংশে অনুপস্থিত। তাকওয়া সেরা গুন। সেরা গুন অর্জনের জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম। সেই পরিশ্রমের ফুসরত কই? শিক্ষার জন্য পরিশ্রম করি। অর্থের জন্য পরিশ্রম করি। পদ পদবীর জন্য পরিশ্রম করি। যষ খ্যাতির জন্য পরিশ্রম করি সাথে ধান্ধা ও করি। তাকওয়ার জন্য পরিশ্রমের সময় ও চিন্তা কোনটিই নেই। ভাবছি এমনিতেই তাকওয়া চলে আসবে। জীবন পথে হারাম কামাই করছি, হারাম খাচ্ছি খাওয়াচ্ছি, হারাম বলছি, হারাম শুনছি আবার তাকওয়াবানও সাজতে চাচ্ছি। কী এক অদ্ভতু ব্যাপার!
তাকওয়া জীবন আলোকিত করে। আল্লাহ ছাড়া সব কিছুর ভয় আর ক্ষতির আশংকা দূর করে। দুনিয়া পাওয়া না পাওয়ার দুশ্চিন্তা দূর করে। আরশের মালিকের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তখন দুনিয়ার লোভ লালসা, কামনা বাসনা, চাওয়া পাওয়া সব কিছু তার সামনে মূল্যহীন হয়ে যায়। আল্লাহর আদেশ মানাই তার মূল কাজ হয়ে যায়। হারামতো দূরের কথা এমনকি সামান্য সন্দেহজনক কাজ থেকেও সে বহু দূরে থাকে। মহান রব নিজেই তার পরিচয় ও পুরস্কার তুলে ধরছেন। সুরা নাজিয়াতে তিনি বলেন, যে নিজ রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনা থেকে নিজেকে বিরত রাখে নিশ্চয়ই জান্নাত ই হবে তার ঠিকানা।
তাকওয়ার মানে হল সকল হারাম বর্জন করা এবং সাথে সাথে সন্দেহমূলক সকল কিছু থেকে দূরে থাকা। কেউ যদি সন্দেহজনক জিনিস থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা না করে তবে তার পক্ষে যেকোন সময় হারামে জড়িয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। যে ব্যক্তি ছগিরা গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে না সে কবিরা গুনাহ থেকেও বাঁচতে পারে না। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহঃ বলেন, ওয়াজিব বা মুস্তাহাব মানার মাধ্যমে জুহুদ ও তাকওয়া অর্জিত হয় না। জুহুদ বা তাকওয়া অর্জন করা যায় হারাম ও মাকরূহ জিনিসগুলো থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে। আজ আমাদের সামনে মজা আর স্বার্থ এসে হাজির হলে সন্দেহ দূরে থাক হারামেরও খবর থাকে না। বরং হারামকে বিভিন্ন যুক্তি আর তর্কের মাধ্যমে হালালের রঙ দিয়ে দেই।
আগেকার ঈমানদারগন বেশিরভাই ছিলেন তাকওয়াবান আল্লাহ ওয়ালা। তারাও কোরআন পড়তেন, হাদিস পড়তেন, ইলম অর্জন করতেন, কামাই রোজগার করতেন, ব্যবসা বানিজ্য করতেন, সরকারী বিভিন্ন পদে চাকুরী করতেন, ক্ষেত খামারে ফসল ফলাতেন, বাজার সওদা করতেন। তাদের প্রত্যেকটি কাজ ছিল তাকওয়ার নূরে আলোকিত। হারাম ও সন্দেহ বর্জিত। প্রত্যেক কাজে তারা সৎ সততা, তাকওয়া ঈমানদারী চিন্তা করতেন। আমাদের কাছে এখন আর তাকওয়া ঈমানদারী প্রাধান্য পায় না। আগে স্বার্থ পরে ঈমানদারী তাকওয়া। কেউ আমাকে কোন কাজ করতে কোরআন হাদিসের দলিল দিয়ে নিষেধ করলে আগে আমার স্বার্থটা দেখি। স্বার্থ ঠিক থাকলে মেনে নেই। স্বার্থের বিপরিত হলে বিভিন্ন খোরা যুক্তি দিয়ে নিজের স্বার্থকে ঠিক রাখার চেষ্টা করি। এই যদি হয় আমার অবস্থা তাহলে দুনিয়ার স্বার্থ, ক্ষমতা, পদ পদবী, বিশাল অট্টালিকা, ধন-স¤পদ যাই থাকুক না কেন, পরকাল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
তাকওয়াহীন সমাজে শান্তির প্রত্যাশা অবান্তর। ধন সম্পদ, পদ পদবী মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। শান্তির জন্য যদি এ দুটি জিনিসই মূল হতো তবে পৃথিবীর বুকে ধনী ও পদ পদবীধারীরা শান্তিতে থাকত। কই দেখুনতো তাদের শান্তি কোথায়! মুমিনের জীবন হবে তাকওয়ায় ভরপুর সাজানো জীবন। আল্লাহর ভয় ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি বিনীত ভাব তার সফলতা তথা মুক্তির গ্যারান্টি। মহান মালিক সুরা মুমিনুনের প্রথমে তার এই সফলতার ঘোষনা দিয়েছেন। আমাদেরও মুক্তি চাইলে এই গুন অর্জন করতে হবে। অন্যথায় দুনিয়ার জীবনে সামান্য সফলতা দেখলেও পরকালে শুধু ব্যর্থতা, দুঃখ, যন্ত্রনাই আমাদের পাওনা হবে।
উত্তর দিচ্ছেন : মুন্সি আব্দুল কাদির, শিক্ষাবিদ, গবেষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন