সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় মাঠজুড়ে শীতের সবজির সবুজ বিপ্লব ঘটেছে। ক্ষেত জুড়ে শীতের সবজির ফলন। কেউ সবজি তুলছেন, কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরোপুরি শীত নামলে সবজিতে ভরপুর হয়ে উঠবে কাঁচাবাজার। তবে এখনো বাজারগুলোতে শীতের শাক-সবজি প্রচুর উঠলেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাতের কারণে বেশি দামে সবজি কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার সবজি চাষীরাও ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বছর কার্তিক মাসের শেষেরদিকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজি চাষীরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। কিন্তু কুমিল্লা অঞ্চলে কার্তিকের প্রতিকূল আবহাওয়া ক্ষেতের সবজির তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। অগ্রহায়ণের শুরুতেই কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চান্দিনা, দেবিদ্বারের উঁচু এলাকায় চাষকৃত সবজি ক্ষেত থেকে উঠিয়ে এখানকার সর্ববৃহৎ সবজি বাজার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন নিমসারের আড়তে নিচ্ছেন চাষীরা। এসব সবজি যেমন কুমিল্লার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে স্থান পাচ্ছে তেমনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বি-বাড়িয়া, চাঁদপুর জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদাও মেটাচ্ছে। অপরদিকে কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবি ইউনিয়নের চানপুর, সূবর্ণপুর, জালুয়াপাড়া, শাহাপুর, গোলাবাড়ি, আমড়াতলী ইউনিয়নের শিমপুর, জামবাড়ি, বাশমঙ্গল এবং সদর দক্ষিণের লালমাই, বিজয়পুর, ভুশ্চিসহ অন্যান্য গ্রামে উৎপাদিত তরতাজা শীতের সবজি সরাসরি কুমিল্লা নগরীর বাজারগুলোতে আসছে। যোগাযোগের সহজ ব্যবস্থার কারণে ভ্যান, মিনি ট্রাকযোগে কুমিল্লা শহরের বাজারগুলোতে প্রতিদিন ভোরে পৌঁছে যাচ্ছে শীতের সবজি।
এদিকে প্রতি বছর শীতকালীন সবজির ব্যাপক ফলন হয় কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া, জয়দেবপুর, গড়ামারা, গণিপুর, ছায়কোট, শ্রীমন্তপুর, চিলোড়া, বাড়েরা, খিরাসার, বরকইট ও তুলাতলীতে। এসব এলাকায় দিন দিন শীতের সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। এসব এলাকার মাটি সবজি চাষের জন্য বেশ উর্বর এবং উপযোগী। তবে যেসব নিচু এলাকা রয়েছে সেখানে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে সবজি চারা রোপণ কাজ শুরু হয়েছে। মাধাইয়া এলাকায় এখনো শীতের সবজির রোপণ কাজ চলছে। কোনো কোনো এলাকায় ভোরের কুয়াশায় ক্ষেতে গিয়ে দিনভর সবজি পরিচর্যায় শ্রম দিচ্ছেন চাষীরা। পৌষের মাঝামাঝি সময়ে এসব এলাকায় উৎপাদিত সবজি বাজারে উঠবে। এখানকার উৎপাদিত সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, মুলা, বেগুন, গাজর, শিম, বরবটি, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, চালকুমড়া, বেগুন, করলা, ঝিঙ্গা, উস্তা উল্লেখযোগ্য। শাকের মধ্যে রয়েছে পুঁই, পালং ও লাল শাক। পুরো বছরেই ধানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষকরা সবজি চাষ করে থাকেন। এছাড়াও কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবি ও আমড়াতলী ইউনিয়নে সারা বছরই ঋতুভিত্তিক সবজি, ফসল উৎপাদন করে থাকে ওইসব এলাকার সবজি চাষী ও কৃষকরা। কুমিল্লা সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে উৎপাদিত সবজি বাজারে মিলছে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এবারে কুমিল্লায় শীতের শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। যা সবুজ বিপ্লব বলা যেতে পারে। মুনাফা পাওয়ায় অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উন্নত ফলনের বিষয়ে সবজি চাষীদের মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে কুমিল্লার বাজারে এবারে শুরু থেকেই শীতের সবজির দাম বেশি। টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শীম, নতুন আলু, লাউ, ঝিঙ্গা, বরবটি, পালং, পুঁইসহ সব ধরনের শাক-সবজির দাম গত বারের তুলনায় দ্বিগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে অধিক দাম দিয়ে শীতের সবজি কেনাটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সবজির পাইকারি বাজারে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের উৎপাতে শীতের শাক-সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন