ঝিনাইগাতীতে শাক-সবজি আবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কীটনাশক ও অতিরিক্ত সার। চাষিরা বেশী ফলনের আশায় এটি ব্যবহার করছেন। ফলে শাক-সবজি স্বাদ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি এটি মানবদেহে। বিশেষজ্ঞদের মতে সাথারণত কৃষকরা স্প্রে করার পরদিনই ক্ষেত থেকে ফসল তুলে বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে বেগুন। অথচ স্প্রে করার কমপক্ষে ৭ দিন পর ক্ষেত থেকে ফসল তোলার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। ফলে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য।
জানা যায়, গত ক’বছর ধরে কৃষকরা ধান চাষে আশানুরূপ দাম না পেয়ে, ধানের বিকল্প আবাদ হিসেবে শাক-সবজি ও র আবাদের দিকে বেশী করে ঝুঁকে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিজ্ঞ কৃষক জানান, কীটনাশক ও হরমন ব্যবহার করে ৬০/৭০ দিনে ফলনযোগ্য অনেক সবজি মাত্র ৩৫/৪০ দিনেই উৎপাদন করা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগাম ফলনে দাম পাওয়া যায় অনেক বেশী। তিনি আরো জানান, যারা আগাম সবজি উৎপাদন করতে পারে তারা প্রথমেই দাম পায় ভাল। বিশেষ করে শীতকালে আগাম আলু প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। বাজারে চড়া মূল্য পেতে চাষিরা আলু চাষে ব্যবহার করে কীটনাশক থিয়োভিট, ফ্লোরা এবং আলু নামার জন্য হরমুন অকোজিম।
কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, তারা স্থানীয় কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শ না পাওয়ায়, বেশী ফলনের আশায় বেশী বেশী কীটনাশকও সার ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কৃষি অফিসের জনৈক কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ কৃষক ফসলে কীটনাশক ও সার ব্যবহারে তাদের কোন পরামর্শই নিতে চান না।
পরামর্শ নেন, কীটনাশক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে। তবে দ্রæত এবং অধিক ফলনের আশায় সবজিতে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়। জৈব সার প্রয়োগ এবং ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। বারোমাসী ফুলকপি, পাতাকপি, বেগুন, টমেটো, সিম, বরবটি, ঢেরস, ঝিঙে, কদু, চিচিঙ্গা, কাকরোল, গাজর, লাউ, পালং শাকও মূলাশাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজি আগাম উৎপাদন ও ফলন বৃদ্ধির জন্য সবজি চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কীটনাশক। অপর দিকে ঝিনাইগাতীতে কৃষকদের অজ্ঞতার কারণে সবজি ক্ষেতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগ-বালাই। চলতি মৌসুমে ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকা এবং বিলাঞ্চলে সহ¯্রাধিক একর জমিতে আবাদ হয়েছে চিচিঙ্গাঁ, পটোল, বরবটি, ঢেঁড়স, ধূন্দল, কাঁকরোল, মিস্টিলাউ, কুমড়াসহ বিভন্ন জাতের শাক-সবজি। কৃষকরা পোকা-মাকড়ের কবল থেকে ফসল রক্ষার্থে অবাধে স্প্রে করে চলেছেন পর্যাপ্ত কীটনাশক। কতটুকু জমিতে, কি ফসলের জন্য কি পরিমাণ কীটনাশক স্প্রে করতে হবে তার কোন সঠিক ধারণা না থাকায়, কৃষকরা বেশী বেশী কীটনাশক প্রয়োগেই হয়তো বা পোকা-মাকড় ধ্বংস এবং বেশী ফলন পাওয়া যাবেÑ এ আশায় অতি মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা।
এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের ঊদাসিনতাকে দায়ী করেছেন কৃষক। এছাড়া শাক-সবজির ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করার সময় মুখে কাপড় বাঁধার কথা বার বার বলার পরও কেউ কেউ মানতে নারাজ এ নিয়ম। অথচ এভাবে দিনের পর দিন স্প্রে করলে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে কৃষক। নাম প্রকাশ না করার শর্ত বেঁধে দিয়ে একজন চিকিৎসক জানান, কীটনাশক স্প্রে করার দিনই বা পড়ের দিন ক্ষেত থেকে তুলে আনা শাক-সবজি খেলে মানুষের বিভিন্ন কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে চর্মরোগ-ক্যান্সারসহ নানান কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী। শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে তুলনামূলকভাবে আরো বেশী বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন