শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল : কবির ভাষায় বলতে হয়- ‘তুমি যে নুরের রবি/নিখিলের ধ্যানের ছবি/তুমি না এলে দুনিয়ায়/আঁধারে ডুবিত সবই।’ কথাটি শত ভাগ সত্যি। হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ না করলে ধরণীবাসী হয়তো আঁধারেই ডুবত। তখন মিশরীয় সভ্যতা বিলুপ্ত, ব্যবিলনীয় সভ্যতা ধ্বংস, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা নিশ্চিহ্ন, গ্রিক সভ্যতা পর্যবসিত। বিশ্ববাসী যখন সমস্যায় জর্জরিত ঠিক তখনই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।  
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ রবিউল সোমবার আরবের কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের পূর্বেই পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান। জন্মের ছয় বছর বয়সে মাতা আমিনাও মারা যান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছোটবেলা থেকেই সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার জন্য ‘আল আমিন’ উপাধি লাভ করেন। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) ২৫ বছর বয়সে হযরত খাদিজা (রা.)কে বিয়ে করেন। তাঁর বিয়ের খুৎবা পাঠ করেন চাচা আবু তালিব। মহানবী (সা.)-এর বয়স যখন ৪০ হলো তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ৮ রবিউল আউয়াল সোমবার জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে হেরা গুহায় সর্ব প্রথম ঐশীবার্তা পাঠান। নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে মহানবী (সা.) আরব সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। মহানবীর (সা.)-এর হাতে প্রথম মুসলমান হলেন হযরত খাদিজা (রা.)। পুরুষদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রা.), কিশোরদের মধ্যে হযরত আলী (রা.), ইবনে হারিস (রা.), উম্মে আইমান (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন।
বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তিনি একাধারে ছিলেন দূরদর্শী, সংস্কারক, বীর যোদ্ধা, নিপুণ সেনা নায়ক, সফল ব্যবসায়ী, নিরপেক্ষ বিচারক, মহৎ রাজনীতিক, প্রেমময় স্বামী, ¯েœহময় পিতা, বিশ্বস্ত বন্ধু, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, অভিজ্ঞ কূটনৈতিক ও বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদ। যুবক বয়সেই তিনি ‘হিলফুলফুজুল’ নামে শান্তি সংগঠন করে অসহায় ও দুর্গতদের সাহায্য সেবা ও সম্প্রীতি স্থাপনে সচেষ্ট হন। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) আরব থেকে জীবন্ত কন্যা সন্তান হত্যা ও মাটি দেয়ার মতো গর্হিত কাজ উচ্ছেদে আন্দোলন করলেন এবং সফল হলেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে- ‘পুরুষের উপর নারীর অধিকার রয়েছে, নারীর উপরও পুরুষের অধিকার রয়েছে।’ আল্লাহর কথা মোতাবেক ইসলামই সর্ব প্রথম নারীর অধিকার সুসংহত করে। যার বাস্তব রূপ দেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে আরববাসী নানা দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করে পূজা অর্চনা করত। ‘আল্লাহ্ এক ও দ্বিতীয় তাঁর কোন শরীক নেই’- এই মন্ত্রে মহানবী (সা.) আরব থেকে মূর্তি পূজা উচ্ছেদে সফল হন। মহানবী (সা.) ধর্ম, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একটি ‘জাতি’ গঠন করেন। মুসলমানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেও মুসলিম জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।
মহানবী (সা.) আল্লাহর জমিনে ইসলামকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও একক ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৪ বছর বয়সে ২৭ সফর শুক্রবার মদিনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন। অতঃপর ২২ রবিউল আউয়াল সোমবার মহানবী (সা.) মদিনায় পৌঁছান। মদিনাকে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলেন। মদিনা রাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমান, ইহুদী, খ্রিস্টান সকলেই সমভাবে অধিকার ভোগ করেছিল। এ প্রসঙ্গে জর্জ বানার্ডশ বলেন-
ওভ ধষষ ঃযব ড়িৎষফ ধিং ঁহরঃবফ ঁহফবৎ ড়হব ষবধফবৎ গঁযধসসধফ ড়িঁষফ যধাব নববহ ঃযব নবংঃ ভরঃঃবফ সধহ ঃড় ষবধফ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষবং ড়ভ াধৎরড়ঁং পৎববফং, ফড়মসধং ধহফ রফবধং ঃড় ঢ়বধপব ধহফ যধঢ়ঢ়রহবংং.
মুহাম্মদ (সা.) মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান হন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য যাকাত, জিজিয়া আদায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বাইতুল মাল হতে অনাথ ও দুস্থদের সাহায্য করার নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.) যুদ্ধ নয় শান্তি- এ মন্ত্রে আরব জাতিকে গঠন করেন। তবে প্রতিরক্ষার জন্য সুদৃঢ় ব্যবস্থা নেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে নতুন নতুন কলাকৌশল উদ্ভাবন করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মহানবী (সা.) বহু যুদ্ধে নিজে সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। যে ইহুদীরা তাঁর জীবননাশের জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের তিনি ক্ষমা করে দিলেন।
অতঃপর হিজরি অষ্টম বর্ষে অর্থাৎ ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয় করেন। বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিস্ময়কর ঘটনা। মহানবী (সা.) বিদায় হজে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ভোলার নয়। মুহাম্মদ (সা.) বলেন- ‘হে লোক সকল, তোমরা শোন- কোনো আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া।’
তাই হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে মাইকেল হার্ট বলেন-
ঐব ধিং ঃযব ড়হষু সধহ রহ যরংঃড়ৎু যিড় ধিং ংঁঢ়ৎবসবষু ংঁপপবংংভঁষ ড়হ নড়ঃয ঃযব ৎবষরমরড়ঁং ধহফ ংবপঁষধৎ ষবাবষং. অর্থাৎ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। ধর্মকে মানব জাতির কল্যাণে প্রয়োগ করতে শিখিয়েছেন। নারীর অধিকার, শ্রমের মর্যাদা, রাষ্ট্রীয় সংবিধান, যুদ্ধ কৌশল, সব কিছুই শিখিয়েছেন মহানবী (সা.)। তাইতো প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আযজোহরী বলেন-
ঞযবৎব ধিং হড় সধহ ড়ভ ংবহংব ধহফ লঁফমসবহঃ ধসড়হমংঃ ঃযব রংড়ষধঃড়ৎং যিড় ধিং হড়ঃ ষবফ ঃযবৎব নু লড়রহ ওংষধস.
মহাবীর আদর্শ ও ইসলামের সুশীতল ছায়া মানব জাতির আশ্রয়স্থল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ মেনে চললে ইহকাল ও পরকালে রয়েছে শান্তি এবং মুক্তি।  
 লেখক : সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রিফাত হোসেন ৬ মে, ২০১৯, ১০:২০ পিএম says : 0
আমিও একমত।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন