দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের’ নামে বিভিন্ন লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে ৭শ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়া চক্রের মূল হোতা আজাদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেপ্তার ব্যক্তির প্রায় ৮শতাধিক বেশি কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদের কোনো প্রকার বেতন দেয়া হতো না। এমনকি বিভিন্ন জেলায় ভাড়া নেয়া প্রতিষ্ঠানটির অভিজাত কার্যালয়ের মালিকদেরও কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি আজাদ। ভাড়ার টাকা তার প্রতিষ্ঠানে জমা করলে নির্ধারিত সময় পর তিনগুণ ফেরত পাবে প্রলোভন দিয়ে টাকা না দিয়ে তাদের অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যান।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ৬০টি মামলা ও ৩৬টি পরোয়ানা নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর পলাতক থাকার পর অবশেষে খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। মঙ্গলবার দিনগত রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন জানায়, ২০০৩ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। ২০০৫ সালে মেহেরপুরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পাল্টে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করেন।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, প্রতিষ্ঠানটি অতি সুকৌশলে উচ্চ মুনাফায় মানুষকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএসের মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ।
গ্রাহক বাড়ানোর জন্য চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে মানুষদের আকৃষ্ট করতো- বলেন র্যাবের এই মুখপাত্র।
খন্দকার মঈন বলেন, ২০১৭ সালে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গ্রাহকরা ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখেন। ২০১৭ সালে গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরে আঞ্চলিক সব অফিস গুটিয়ে এবং সব ফোন নম্বর ও যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে ঢাকায় এসে গা ঢাকা দেন চক্রের মূলহোতা আজাদ।
তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেপ্তার ব্যক্তির প্রায় ৮শতাধিক বেশি কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদের কোনো প্রকার বেতন দেয়া হতো না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখানো হতো। এমনকি বিভিন্ন জেলায় ভাড়া নেয়া প্রতিষ্ঠানটির অভিজাত কার্যালয়ের মালিকদেরও কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি আজাদ। ভাড়ার টাকা তার প্রতিষ্ঠানে জমা করলে নির্ধারিত সময় পর তিনগুণ ফেরত পাবে প্রলোভন দিয়ে টাকা না দিয়ে তাদের অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যান।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারণার টাকায় কুষ্টিয়ায় ১৫ বিঘা জমি, একটি ছয়তলা ভবন, একটি ইটের ভাটা এবং রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি কেনেন আজাদ। এছাড়া ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনেন। তার স্ত্রীর নামে ডাকঘরে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। এমনকি একটি ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা ঋণও নেয়া আছে গ্রেফতার আজাদের
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন