স্টাফ রিপোর্টার : খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিরুদ্ধে পাস হওয়া আইন বাস্তবায়ন হয়নি গত চার বছরেও। হাত বড়ালেই ভেজাল খাদ্য। ভেজাল খাদ্য এখন অনেকটাই সহনীয় ব্যাপার। ভেজাল ছাড়া খাদ্য হয় কি না সেটা নিয়েই এখন জনমনে প্রশ্ন। ভেজাল খাদ্য এ দেশের মানুষের কাছে এখন অনেকটাই গা সহনীয় বিষয় বলে অনেকেই মনে করেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এমন কথাই শোনা যায়। শুধু যে বড়দের খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে তা নয়, মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক নানা ধরনের ভেজাল মিশ্রণ করা হচ্ছে অবুঝ শিশুখাদ্যেও। খাদ্যে ভেজাল রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও সুনির্দিষ্ট বিধিমালা না থাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না নিরাপদ খাদ্য আইন। আর এ কারণেই ভেজালবিরোধী অভিযানের স্থায়ী কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার ২০১৩ সালের ২ ফেব্রæয়ারি নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করে। একই সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিধিমালা না থাকায় রাজধানীসহ দেশের কেথাও নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
দেশে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঝে মধ্যে র্যাব, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বিএসটিআই, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং সিটি কপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। আর ভেজালবিরোধী অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪০ ও ৪৩ ধারায় অসাধু ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের জেল জরিমানা করে থকেন। কিন্তু এসব মোবাইল কোর্টের স্থায়ী সুফল পাচ্ছে না দেশবাসী।
কারণ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে অনেকটাই নীরব। ভেজাল খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা থেকেও বিরত রয়েছেন তারা। শুধুমাত্র ভেজালবিরোধী চিঠি বিলি আর সভা-সেমিনার করেই বছরের পর বছর সময় কাটাচ্ছেন এসব দফতরের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: সালেহ ভূইয়া বলেন, টেকনিক্যাল কারণে নিরাপদ খাদ্য আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে গত রমজান থেকে নগরীতে ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অভিযান মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য তৈরি এবং বিক্রি প্রতিরোধে সহায়ক হচ্ছে। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইনটি বাস্থবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালা এবং নির্দেশনা প্রয়োজন। আর ওই নির্দেশনা না আসায় পুরনো মিউনিসিপাল (সিটি কর্পোরেশন) আইন এবং বিধির সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। ওই বছরই হাইকোর্ট সরকারকে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন এবং প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠনের নির্দেশ দেন। এরপর ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট অপর একটি আদেশে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার নির্দেশ দেন প্রশাসনকে।
নিরাপদ খাদ্য আইনে অপরাধের শাস্তি ভারতে যাবজ্জীবন, চীনে মৃত্যুদÐ, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছর কারাদÐের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ দÐবিধির ১৮৬০ সালের আইনের ২৭২ ও ২৭৩ ধারায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনধিক ৬ মাসের শাস্তির বিধান রয়েছে।
১৯৫৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের ৬ ধারা থেকে ৩৭ ধারায় অপরাধের শাস্তি ৬ মাস থেকে ৩ বছরের সাজা এবং ৫ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে ২০১৩ সালে প্রণীত নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা সীমাবদ্ধ থেকে গেছে ঘোষণার মধ্যেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন