সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হবার পরপরই শীর্ষ পদ পেতে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা-নেত্রীদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপ, লবিং শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির দলীয় সভাপতির কার্যালয় জনজমাট হয়ে উঠেছে; হাই-কমাণ্ডের নেতাদের বাসায় ভীড় বেড়েছে পদপ্রত্যাশী নেতা-নেত্রীদের। পদপ্রত্যাশী হবার বিষয়টি নানান ভাবে জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
আগামী ২৬ নভেম্বর মহিলা লীগের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হবে। এরপর ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ, ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একই মঞ্চে সবগুলো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগেরও সম্মেলন হবে। এছাড়া রেওয়াজ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সংগঠনগুলোর মহানগর কমিটিরও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ মহিলা লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুব মহিলা লীগ। তবে এসব সম্মেলনের দিন-তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
তাই উক্ত সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা ধানমণ্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় ভীড় শুরু করে দিয়েছেন। নেতারা যেসব দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন সেখানে নেতাদের চারপাশে পদপ্রত্যাশী নেতা- নেত্রীরাও সময় দিচ্ছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নেতাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে নানাভাবে যোগাযোগ করার জন্য লবিং করছেন। এছাড়াও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেলের সাথে দেখা করছেন এবং তাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথেও যোগাযোগ করছেন যেন পদপ্রত্যাশী নেতাদের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবির করেন তারা।
ছাত্রলীগের পাশাপাশি মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের নেত্রীরাও দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে গিয়ে দেখা করা শুরু করেছেন।
এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা কোরাম নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের দুইটি কোরাম, নেতাকর্মীদের ভাষায় দুইটি বেল্ট থেকে নেতা নির্বাচিত হয়। এক ‘ধানমন্ডি বেল্ট’, আরেকটি হচ্ছে ‘মিরপুর বেল্ট’। ধানমণ্ডি বেল্ট এখন দুই ভাগে বিভক্ত। আর মিরপুর বেল্টে কয়েকটি উপ-শাখা রয়েছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন আগামী সম্মেলনে শীর্ষ পদে আসার জন্য।
এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগেও দুইটি গ্রুপ থেকে নেতা নির্বাচিত হয়। সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কোরামিংয়ে দুইটি গ্রুপ রয়েছে।
এই দুই মহানগরের ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা নেতারা মূলত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তেমন একটা যান না। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের কাছে তদবিরম লবিং করেন শীর্ষ দুই পদে আসার জন্য।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারও ছাত্রলীগে অনুর্ধ্ব ২৯ বছরের নেতারাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবেন। মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই পদেই পরিবর্তন আসবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যোগ্য ও বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব আসার মাধ্যমে সংগঠনগুলো শক্তিশালী ও গতিশীল হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় ওই সম্মেলন। এর আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করেন।
পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা শোভন ও রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালের ৫ মার্চ। তখন নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চে সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অপু উকিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন। এই দুই নেতার কোন্দলে প্রায় নিষ্ক্রীয় অবস্থা বিরাজ করছে যুব মহিলা লীগে।
আর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। তার আগের সম্মেলন হয়েছিল ২০০৩ সালের ১২ জুলাই। ওই সম্মেলনে আশরাফুন্নেসা মোশাররফ সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা সাধারণ সম্পাদক হন। পরে পিনু খান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন