বরাবর আইসিসির কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আর আম্পায়ারদের ধারাবাহিক সহায়তা পেতে পেতে ভারতীয় ক্রিকেট দল তাদের মূল মাঠের খেলা থেকে বাইরে চলে গিয়েছিল। যার চরম খেসারত দিতে হয়েছে গতকাল অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে এদিন যেহেতু প্রতিপক্ষ ছিল ‘বিগ থ্রি’র আরেক সদস্য ইংল্যান্ড, তাই আইসিসি ভারতকে খুব একটা সহায়তা করতে পারেনি। যার মূল্য লজ্জাজনক এক হার দিয়েই দিতে হয়েছে রোহিত শর্মার ভারতকে। ক্রীড়ামোদীরা মনে করছেন, এ পরিণতি ভারতের প্রাপ্য ছিল ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থেই। ভারতের দম্ভচ‚র্ণ করেই তাদের গুঁড়িয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিলো ইংল্যান্ড। কাল অ্যাডিলেড ওভালে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংলিশরা ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত করে ভারতীয়দের। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রান তাড়ায় এটাই কোন দলের সবচেয়ে বড় জয়। এই নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেটে হারল ভারত। গত আসরেই পাকিস্তানের কাছে এ ব্যবধানে হেরেছিল তারা, তবে সেটি ছিল সুপার টুয়েলভে।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডের হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান করে ভারত। জবাবে জয়ের জন্য ১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৪ বল হাতে রেখেই বড় জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। তাদের ইনিংসে প্রথম উইকেটে দুই ওপেনার জশ বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস গড়েন ১৭০ রানের জুটি। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুধু উদ্বোধনী জুটিই নয়, যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের সেরা জুটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কুইনটন ডি কক-রাইলি রুশোর ১৬৮ রান। এবারের আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জুটি গড়েছিলেন তারা।
১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা নিয়ে কয়েক দিন ধরে যে আলোচনা, ইংল্যান্ডের জয়ে সেটিও বাস্তবে রূপ পেয়ে গেল। সেবার খাদের কিনারায় থাকা পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে পেয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সেই ম্যাচের মতো এবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মেলবোর্নের মহামঞ্চে ট্রফির লড়াইয়ে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। আগামী রোববার শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে মাঠে নামবে দু’দল। বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায় শুরু হবে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ফাইনাল।
টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে বাবর আজমরা জয় পাওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল ছিল আলোচনায়। সেই আলোচনা ভালো লাগেনি ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলারের। তাই তো দ্বিতীয় সেমিফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল দেখতে চান না। যেই কথা সেই কাজ। কাল ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং ভারতকে কোণঠাসা করেই ম্যাচ জিতে নেয় ইংলিশরা। অ্যাডিলেডের উইকেটে ইংল্যান্ডের মতো ব্যাটিং লাইনআপের সামনে ১৬৯ রান মামুলী লক্ষ্য! ভারতের দেয়া সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জশ বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস। প্রথম পাওয়ার প্লে-তেই ৬৩ রান করে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেন তারা। হেলস ছিলেন অধিনায়ক বাটলারের চেয়েও বেশি আক্রমণাত্মক। আরশদ্বীপ ও অক্ষর প্যাটেল ছাড়া ভারতের কোনো বোলারই ইংলিশ দুই ব্যাটারের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নিতে পারেননি। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় স্কোরবোর্ডে বোলারদের জন্য এমনিতেই যথেষ্ট রান ছিল না। তার মধ্যে ভুবনেশ্বর, সাসি, অশ্বিন, হার্দিক কেউই উইকেট থেকে সুবিধা আদায় করতে পারেননি। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন ইংলিশ দুই ব্যাটার। তাদের ছন্দময় ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ড চার ওভার হাতে রেখেই লক্ষ্য টপকে যায়। অধিনায়ক বাটলার ৪৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৮০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে হেলস ৪৭ বলে ৪ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেন ৮৬ রানের ঝড়ো ইনিংস। ১৬তম ওভারে সামির শেষ বলে লংঅন দিয়ে ছয় মেরে ইংল্যান্ডকে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে তোলেন অধিনায়ক বাটলার। ম্যাচের আগের দিন তিনিই হুঙ্কার দিয়েছিলেন পাকিস্তান-ভারত ফাইনাল দেখতে চান না। বাটলার নিজের কথা রেখেছেন। সামনে থেকে পারফরম্যান্স করে ভারতকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিয়েছেন তিনি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। মূলত টস হেরেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যান রোহিত শর্মারা। শুরুতেই ফিরে যান লোকেশ রাহুল। পাঁচ বলে ৪ চারের মারে ৫ রান করে ক্রিস ওকসের শিকারে পরিণত হন এই ওপেনার। ১.৪ ওভারে দলীয় ৯ রানে ভারত হারায় প্রথম উইকেট। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রোহিত শর্মা ও কোহলি ঠিকই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। রোহিতের ব্যাটে রান আসলেও ব্যাটিংটা ছিল ধীরগতির। ২৮ বলে চার বাউন্ডারির মারে তিনি ২৭ রান করে ক্রিস জর্ডানের বলে আউট হন রোহিত। তার ফেরায় ৮.৫ ওভারে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫৬ রান। সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সবচেয়ে সফল ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব। অথচ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মঞ্চে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১১.২ ওভারে দলীয় ৭৫ রানে আদিল রশিদের বলে আউট হন যাদব। ফেরার আগে তিনি ১০ বল খেলে একটি করে চার ও ছয়ে ১৪ রান করেন। এরপরই শুরু হয় পান্ডিয়ার তাÐব। এই ব্যাটার আক্ষরিক অর্থেই কাল ঝড় তুলেছিলেন অ্যাডিলেডে। কোহলির সঙ্গে মিলে ভারতের স্কোর নিয়ে যান আরও বড় জায়গায়। ১৮তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৩৬ রানে ক্রিস জর্ডানের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে কোহলি ৪০ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৫০ রান করেন। তবে পান্ডিয়া ছিলেন আরও ভয়ংকর। শেষ ওভারে জর্ডানের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় পান্ডিয়া খেলেন ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। ঋষভ পান্ত আউট হন ৬ রানে। আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন অপরাজিত থাকেন শূন্য রানে। তাতে নির্ধারিত ওভার শেষে ভারত লড়াকু সংগ্রহ পায়।
ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার ক্রিস জর্ডান। এই পেসার চার ওভারে ৪৩ রানে দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ২০ ও ২৪ রানে একটি করে উইকেট পান আদিল রশিদ ও ক্রিস ওকস। ম্যাচ সেরা হন অ্যালেক্স হেলস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন