গলায় ফুলের মালা পরিয়ে অভিষেকের মাধ্যমে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে স্বীকৃতি দিল জেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার এই স্বীকৃতির পরই দুই দিনের জন্য নতুন কমিটির বিরোধীরা তাদের টানা ৪ দিন ধরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস কমপ্লেক্সের সামনে চলমান অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করায় আপাতত উত্তেজনার অবসানে সবাই স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছেন।
তবে কেন্দ্র কর্তৃক বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক নতুন কমিটির ঘোষণাকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সবার কাছে ধরা দৃশ্যমান হয়েছে বগুড়া আওয়ামী লীগে সৃৃষ্ট স্পষ্ট বিভক্তি। গত ৭ নভেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক বিজ্ঞপ্তিতে সজিব সাহাকে সভাপতি এবং আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছর মেয়াদে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রলীগ বগুড়া জেলা কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ।
কমিটি ঘোষণার রাতেই বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ৭ মাথায় অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ অফিস কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় তারা। এরপর গতকাল দুপুর পর্যন্ত তারা কার্যত অবরোধ করে রাখে। ছাত্রলীগের সূত্র বলছে, অবরোধের সাথে সংশ্লিষ্টরা সবাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের অনুসারি।
অবরোধকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সবাই অপরিচিত এবং অসাংগঠনিক। পাশাপাশি যারা বগুড়ায় ত্যাগী, সংগ্রামী এবং পরীক্ষিত তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়নি। এই ঘটনার জন্য তারা বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অশালীন মন্তব্য ও সেøাগানও দেয়।
এমন এক পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় অফিস কমপ্লেক্সে তালা লাগানো এবং জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে উষ্কানিমূলক সেøাগানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেণ। তিনি অবিলম্বে তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশও দেন।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ওই দিনেই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসভবনে একটি বৈঠক বসে। কিন্তু সে বৈঠকে অংশ নেননি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে শুক্রবার বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি সজিব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগ/ছাত্রলীগের অফিসের দিকে এগিয়ে গেলে আগে থেকেই অবস্থানরত তাদের বিরোধী পক্ষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
এসময় দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। দুপুরের আগে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, শহর যুবলীগের সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম জয়, জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সভাপতি কামরুল মোর্শেদ আপেল, সাধারণ সম্পাদক রাকিব উদ্দিন প্রাং সিজার, শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সান্নু প্রমুখ নতুন কমিটির বিরোধী পক্ষের জমায়েতে এসে যোগ দেন।
অপরদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন নবাব, সাধারণ সম্পাদক ভিপি শাহীন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস ছাত্রলীগের নতুন কমিটির পক্ষের সমাবেশে এসে যোগ দেন।
একই সাথে জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ও পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সরদার ও আমিনুল ইসলাম এবং জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সভাপতি আব্দুস সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ শামস উদ্দিন হেলাল বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে যোগদানকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
এ সময় মাতমাথার মুজিব মঞ্চে ওপরে ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গলায় মালা পরিয়ে তাদের পরিচয় ও কার্যত অভিষেক করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপন। একই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনের সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আরম মোহন তার সমর্থক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে বগুড়া আওয়ামী লীগের সভায় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আলোচনা সাপেক্ষে যৌক্তিকভাবে পুনর্গঠন করা হবে এমন আশ^াস মিলেছে। তিনি সবাইকে শান্ত থাকা এবং সাময়িকভাবে অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে পুরো ঘটনায় বগুড়ার রাজনীতির মাঠে পরিষ্কার হয়ে গেছে জেলা আওয়ামী লীগের স্পষ্ট দ্বিধা বিভক্তি বলে জানিয়েছেন দল সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন