বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

বিএনপি কি বিপর্যস্ত রাজনৈতিক দল?

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হারুন-আর-রশিদ : সরকারি দল এবং আরো কিছু সুবিধাভোগী মানুষ গণমাধ্যমে বলে বেড়াচ্ছেনÑ বিএনপি একটি বিপর্যস্ত রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাদের যে কথাটি বলা দরকার সেটা বলছেন না। আর তা হলো দেশের রাজনৈতিক পরিবেশই এখন সবচেয়ে বিপর্যস্ত। এরা অনেকটা চোখ থাকতেও অন্ধ। মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, সুশাসন, গণতন্ত্র এসব যে দেশে থাকে না, সেই দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ বিপর্যস্ত থাকে। এক কথায় গণতন্ত্র নির্বাসনে, পুলিশ প্রশাসন শাসক দলের হয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। অনেকটা মাঠকর্মীর মতো কাজ করছে। গুম, খুন, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ফেসবুকে চাউর হয়েছে। দেশে বিগত নয় মাসে ৩২৫টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। এদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩১। দশে শিশু ও নারী সমাজের অবস্থা এতই খারাপ, যা বিবিএসের জরিপ থেকেও জানা যায়। তারা বলছেনÑ দেশে নারীরা অর্থনৈতিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার, জীবনকালে অন্তত একবার হলেও স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা ৮০ শতাংশেরও বেশি। নারী ও শিশুবান্ধব সরকারের আমলেই নির্যাতনের মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এসব নিয়ে মাঠে বক্তব্য দিতে পারছে না দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দেশের মানুষের কথা বলা যাবে না, শুধু সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরতে হবে, তাহলে জনসভার অনুমতি মিলবে, যা ১৫ দলের শরিকরা করছেন। দেশে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে বিএনপির আন্দোলন শতভাগ সফল হতো।
সরকারই রাজনৈতিক পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছে বলে বিএনপি আজ কথা বলতে পারছে না। তাদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্দরমহল ছাড়া তাদের বক্তব্য দেওয়ার সকল পথ রহিত করা হয়েছে। একে আমরা কীভাবে গণতন্ত্র বলি। এরকম ভুল বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও করেছে। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মতো গণতন্ত্রের অবস্থা তখন এতটা বিপর্যস্ত ছিল না। ১৯৯৫-৯৬ সালে প্রেসক্লাবে মাসাধিককাল ধরে জনতার মঞ্চ বানিয়ে সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে সরকার পতন আন্দোলনে তার সিকি ভাগও আজকের বিরোধী দল বিএনপি ভোগ করতে পারছে না। জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ত্রিদলীয় ব্যানারে ধ্বংসযজ্ঞ তখন কম হয়নি। ধরেই নিলাম বিএনপি অতীতে আওয়ামী লীগের ওপর অনেক অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছে। বিএনপি যা করেছে আওয়ামী লীগের মতো পুরানো ও ঐতিহ্যপূর্ণ একটি দল একই কর্মকা- করবে এটা কী করে আশা করা যায়। একজন খারাপ কাজ করলে আমিও সেই খারাপ কাজটি আরো বেগবান করব, তা হলে রাজনীতিতে গুণগতমানের চর্চা চিরদিনের জন্য রুদ্ধ হয়ে যাবে। এভাবে একটি দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় কখনই পরিচালিত করা যাবে না। রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি গণতন্ত্রের চর্চা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের মধ্যেও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে না। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া সরকার আর জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া সরকার এ দুইয়ের মধ্যে এখন আর পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। সামরিক শাসক এরশাদের আমলে মিটিং-মিছিলের উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় ছিল। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ ও উত্তর গেট সংলগ্ন দুটো সড়কে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াত প্রায় সময়ই জনসভা করেছে। প্রেসক্লাবের সামনেও বহু সভা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও হয়েছে। পল্টন ময়দানেও হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দল ছাড়া অন্য কাউকে কালেভদ্রে দিলেও ইদানীং বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপির জন্য জনসভা প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা কীভাবে বলব, দেশে একটি সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু আছে, যেখানে সবার গণতান্ত্রিক অধিকার পালনের সুযোগ রয়েছে। এটা বলা যাবে কি? বাংলাদেশে কোনো কিছু ঘটলেই তার জন্য দায়ী করা হয় বিএনপিকে। এ ধরনের একটি সংস্কৃতি আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। যেমনÑ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার পেছনেও নাকি বিএনপি সক্রিয়। এসব কারণে বিএনপির নেতা মেজর হাফিজের একটি উক্তি ছিল এরকমÑ ‘বর্তমানে সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত, আওয়ামী লীগ বলবে এটার জন্যও বিএনপি দায়ী’। বিএনপির পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে দ-ায়মান অবস্থায় তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাকে ৪ নভেম্বর কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই গ্রেফতার করেছেÑ এ কথা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে (৫ নভেম্বর) রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমি বহু জায়গায় বলতে শুনেছি এবং তা আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মীরাই বলছে, বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। ওরা কেবল অন্দরমহলে রাজনীতি চর্চা করবে। আমরা মাঠে এবং সংসদে সর্বস্থানে দলীয় কর্মসূচি পালন করব। এটা বঙ্গবন্ধুর দেশ এবং আওয়ামী লীগের জন্মদাতাও তিনি। তাই এদেশে আওয়ামী লীগ এবং তার শরিক দলই শুধু রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। অন্য কাউকে মাঠ দখল করার সুযোগ দেওয়া হবে না এবং এই মিশনকেই বলা হয় আওয়ামী ডিজিটাল উন্নয়ন মিশন-২০২১। ফলে বাংলাদেশের ৫০ বছর বর্ণিল পূর্তি দিবস দেশব্যাপী পালন করবে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারই। এই পূর্তি দিবস অন্য কোনো দলকে করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার এই মিশন ও ভিশন নিয়ে এগোচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে। প্রথম থেকেই সমস্ত প্রশাসনকে সেভাবেই ঢেলে সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠান শুধু নয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, আইন ও বিচার বিভাগ, জেলা ও উপজেলাসহ সর্বস্তরে আওয়ামী ঘরানার লোক দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এ জন্য বিগ বাজেট করা হয়েছে ক্ষমতার পূর্বক্ষণই। আওয়ামী সমর্থকরা এও বলেন, ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলাম, আর নয়। এখন ওরা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকুক, কেমন লাগে তা একটু অনুভব করুক। এই মনস্তাত্ত্বিক থিম নিয়ে উপরের নির্দেশনায় প্রতিটি কর্মী এমনকি সাজানো প্রশাসন একই দর্শনে ফলোআপ করছে।
নাসিরনগরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে তাদের ভূমিকা পালন করেনি বলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিষ্ঠুরতার মাত্রা বেড়ে যায়। এ জন্য সরকারের প্রশাসনই মূলত দায়ী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শপথবাক্যে প্রজাতন্ত্রের প্রজাদের পক্ষে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন প্রজাদের স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতির স্বার্থ চরিতার্থে কাজ করেন, তখনই জনগণের স্বার্থ ব্যাহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন তারই বহিঃপ্রকাশ। যখন যে ক্ষমতায় যায় সবাই পুলিশ প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। ফলে দোষী ব্যক্তিরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। মানুষকে এই ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে হলে শাসক দলকে কোনোভাবেই প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে এবং তাদেরকে পেশাদারিত্বের সাথে ভূমিকা পালনে উৎসাহ দিতে হবে। দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে বড় দুটো রাজনৈতিক দল এই সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে তৈরি করতে পারেনি। আমরা নিরীহ মানুষ ভোট দেই, গুলিও খাই আমরা, ভোগান্তিতেও পড়ি আমরাÑ এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং দুর্ভাগ্যজনকও বটে। এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। রাজনীতিকদেরই সেই কাজটি করতে হবে। অন্যথায় ’৫২, ’৬৯, ’৭১, ’৯০-এর মতো ঘটনা আরো ভয়াবহ আকারে ঘটবে এ অঞ্চলে। জনগণ একবার ক্ষেপে গেলে বন্দুকের গুলি, মামলা-হামলা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের অতীত ইতিহাস সে কথাই বলছে। কিন্তু আমরা শাসক দলে যারা থাকি তারা সেই শিক্ষাটা গ্রহণ করতে নারাজ।
বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতনের শুরু জন্মলগ্ন থেকেই। বঙ্গবন্ধুই এর সমাধান করতে পারতেন এবং গণতন্ত্রের একটি স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে যেতে পারতেন। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশি। এই গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ জীবন লড়াই করেছেন তিনি। আবার এই বঙ্গবন্ধুই শত চেষ্টা করেও গণতন্ত্রকে তার জীবদ্দশায় শেষ মুহূর্তে টিকিয়ে রাখতে পারেননি। তবে এ কথাও সত্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে বেশ ভালোবেসেছিলেন। ’৭১-এর প্রেক্ষাপট তৈরিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যেমন যাবে না, তেমনি ১৯৭১-এর রণাঙ্গনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘অ্যাই রিভোল্ড’ শব্দ দুটো বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এবং বঙ্গবন্ধুর নামে ২৬ ও ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিশেহারা জাতির মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। দেশের বিশিষ্টজনরা প্রায় সময়ের লেখনীর মাধ্যমে এই দুই মহান ব্যক্তিকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জাতি চায় অতীত নিয়ে নয় ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করতে। জাতীয়তাবাদী দুই মহান নেতা ঘাতকদের হাতে খুন হয়েছেন। বিশ্বে এ রকম বহু নজির খুঁজে পাওয়া যাবে। মহাত্মা গান্ধী, লিয়াকত আলী খান, মার্টিন লুথার কিং, বাদশা ফয়সল, ইন্দিরা গান্ধী, বেনজীর ভুট্টো এরকম বহু নেতা আছেন যারা ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। কিন্তু দেশগুলো থেমে থাকেনি বরং অগ্রগতির জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছিল এবং বহু ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র অনেক দূর এগিয়েছে। তবে যে কথাটি না বললেই নয় তা হলো ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর গণতন্ত্র মুক্তি পাক পিঠে লিখে প্রাণ দিয়েছেন নূর হোসেন। আজ সেই গণতন্ত্র অনেকটাই অসুস্থ- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। একটি সুন্দর ব্যবস্থাকে অসুন্দর করতে আমরা যা করছি তাকে কোনোভাবেই সুস্থধারার রাজনীতি বলে স্বীকার করে নেয়া যায় না।
ডেমোস ও ক্রাটোস শব্দের সন্দি ডেকোক্রেসি। গ্রিক শব্দ ডেমোক্রেসিয়াকে ইংরেজিতে ডেমোক্রেসি আর বাংলায় বলে গণতন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এথেন্স ও অন্যান্য নগর রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝাতে গণতন্ত্র শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয়। প্রজাতন্ত্র শব্দটির উৎপত্তি লাতিন আমেরিকায়। আক্ষরিক অর্থে একটি সরকার ব্যবস্থা যেখানে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের সেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধটাও শুরু হওয়ার নেপথ্য কারণটি ছিল গণতন্ত্র। যখনই বাংলাদেশের গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে তখনই দেশে গুম, খুন, মামলা-হামলা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প বৃদ্ধি পেয়েছে। সহিংসতাও মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। দৃশ্যমান এই অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্র কখনই তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।
সম্প্রতি একটি নিবন্ধে প্রথিতযশা একজন কলমসৈনিক লিখেছেনÑ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০তম দলীয় সম্মেলন স্থানটি ছিল নগরের ফুসফুস। দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পশ্চিমের কোনো রাষ্ট্র মানুষকে ঘরে আটকে রেখে এ ধরনের জৌলসময় কাউন্সিলের কথা চিন্তাও করবে না। মানুষকে গৃহবন্দি রেখে নিজেদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। দেশের অবস্থা অনেকটা এরকমÑ ক্লাসে একজন ছাত্র থাকলে সে-ই ফার্স্ট হবে। কারণ প্রতিযোগিতা নেই। দেশের একটি বৃহত্তম দল অদ্যাবধি বহু ঢাকডোল পেটানোর পরও একটি জনসভাও করতে পারেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা বাদই দিলাম। নিজেদের পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও একটি জনসভা এখনো করার অনুমতি মেলেনি। দেশের গণতন্ত্রের বেহাল দশার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে।
আমাদের দেশে শাসক দল হিসেবে যারাই ক্ষমতায় থাকেন তারা ক্ষমতায় থাকতে চান অনন্তকাল ধরে। তাই নির্বাচন সূক্ষ্ম হতে দিতে চান না শাসক দল। ভয়টা হলো- যদি হেরে যাই তাহলে এত সুখ এত সম্পদ এগুলো তো থাকবে না। বারাক ওবামা যেভাবে নির্বাচন উপহার দিয়ে নিজের দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নিয়েছেন সেটা বাংলাদেশে কস্মিনকালেও চিন্তা করা যায় না। আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে বিএনপি একটি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক দল। একই অভিযোগ আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন ডেমোক্রেটিক দলের নেতা ও সমর্থক গোষ্ঠীও। নির্বাচন-পূর্ববর্তী ট্রাম্পের বক্তব্যও সে কথা প্রমাণ করে। নির্বাচনে হেরে গেলে আমি তা মেনে নেব না, মেক্সিকো ও কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বক্তব্য ছিল আক্রমণাত্মক। কিন্তু নির্বাচন-উত্তর তার সব বক্তব্য ছিল ইতিবাচক, যা আমাদের দেশে কল্পনাও করা যায় না। আমাদের দেশে শাসক দলের নেতারা কখনই দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না যতটা পারেন দলের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হতে। তাদের বক্তব্যেই তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমনÑ ধরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক দল ও বিরোধী দলের নেতা ও সমর্থক গোষ্ঠী কখনো প্ল্যাকার্ড, লিফলেট, প্রচার অভিযানে জর্জ ওয়াশিংটনের (স্থপতি) কোনো ছবি বা তার বক্তব্য নিয়ে হাইলাইট করেছে এমন কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে শেখ মুজিবুর রহমান (স্থপতি) ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়েই বড় দুটো দলের রাজনীতি ঘুরপাক খায়। বিলবোর্ড পোস্টার লিফলেটে এই দুই নেতার ছবি না থাকাটা কল্পনাই করা যায় না। অথচ, দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কোনো বক্তব্য থাকে না। দেশের গণতন্ত্র প্রাণ ফিরে না পাওয়ার মূল কারণও এগুলো।
 লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক ও কলামিস্ট


 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন