আরও শ্লথ হয়ে পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততোই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আশার কোনো আলো উঁকি দিচ্ছে না; শুধুই হতাশা আর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো আভাস নেই; স্বস্তিরও কোনো খবর নেই। বাড়ছে ঝুঁকি; অনিশ্চয়তা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এই হতাশার কথা জানিয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদানকারী সংস্থাটি বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতি এরই মধ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে; দুর্বল হতে থাকা অর্থনৈতিক সূচকগুলো বলছে, সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
আইএমএফ গত অক্টোবর মাসে বিশ্ব অর্থনীতির যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে এখন মনে করছে বিশ্ব আর্থিক খাতের অন্যতম মোড়ল এই সংস্থাটি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সে উৎপাদন খাতের গতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট, বড় ধরনের সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ সোমবার বলেছে, মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে দেশে দেশে আর্থিক প্রবাহে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, চীনে প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত গতি না পাওয়া, পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে খাদ্যে নিরাপত্তার ঝুঁকি বিশ্বকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদনে গেল অক্টোবরে আইএমএফ ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনে। কিন্তু এখন ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে প্রকাশের জন্য তৈরি করা একটি ব্লগে আইএমএফ বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতির সূচকগুলো আরও বাজে পরিস্থিতির দিকেই ইঙ্গিত করছে, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে।
জি-২০ ভুক্ত অধিকাংশ দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতের সূচকগুলো ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। টানা কয়েক মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। আর তাতে পুরো বিশ্বে অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
আইএমএফ বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি এরই মধ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে; দুর্বল হতে থাকা অর্থনৈতিক সূচকগুলো বলছে, সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সঙ্কট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই পর্যায় দীর্ঘায়িত হতে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের নীতি সুদহার অনেক বেশি বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে। তাতে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ির দিকে যেতে পারে।
আইএমএফ বলছে, পরিস্থিতি সে রকম হলে আর্থিকভাবে দুর্দশায় থাকা দেশগুলোতে ঋণ সঙ্কটের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকট বিশ্বজুড়ে আরও ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই বছরেই বা পরের বছরের মাঝামাঝির মধ্যই বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংকুচিত হবে। তা ছাড়া গ্রুপ অফ টোয়েন্টির (জি-২০) জন্য প্রস্তুত করা আমাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করেছি, সাম্প্রতিক উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি সূচকগুলো নিশ্চিত করে যে সামনের দিনগুলেতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন