বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বড় চাপ আসলে সমস্যা সৃষ্টি হবে : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে : ড. সায়মা হক বিদিশা বিশ্বে বড় ধরনের মন্দায় রফতানিকারকরা শঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা কাটছেই না। ডলার সঙ্কটে এখনো আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে রফতানি আয়ের প্রধান উৎস অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রতিদিনই কমছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা অনুযায়ী, অর্থনীতি এখনো নাজুক অবস্থায় না গেলেও সহসাই চাঙা হবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। যে সূচকগুলোর ঊর্ধ্বমুখীর কারণে অর্থনীতি চাঙা হয়, সেই সব সূচক এখনো স্থিতিশীল। ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনো অবস্থায়ও যাচ্ছে না। অথচ আগামী বছরের শুরুতে দেশের অর্থনীতির মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ডলার সঙ্কটে অনেককিছু থমকে গেছে। আগামী বছর থেকেই বাংলাদেশের উপর ঋণ পরিশোধের চাপ আসছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বড় চাপ আসলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে সমস্যা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে টাকার মান দুর্বল হতে পারে, বিনিয়োগ কমে যাবে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ নানা ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

করোনা-পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করলেও বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশসমূহে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে কালো মেঘের ছায়া নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করছে, বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যার প্রভাবে ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। ডলারের বিনিময় মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের চড়া দাম, খাদ্যপণ্য ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, রফতানি আয় দিন দিন কমছে, আমদানি ব্যয় বাড়ছে পাশাপাশি কমছে রেমিট্যান্স। এ সব কারণে সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন থেকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকয় বিদেশি বিনিয়োগে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। আয়ের সুযোগ না থাকায় মানুষের হাতে টাকা নেই। ব্যাংকে অর্থ জমা কমছে বরং ব্যাংক থেকে গচ্ছিত টাকা উত্তোলন দিন দিন বাড়ছে। কাজ না থাকায় মানুষ তার সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। আর এসব কারণে দেশের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকার বর্তমান মন্দাকে স্থিমিত রাখলেও এ থেকে পরিত্রাণে কোনো যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাঝেই ২০২৩ সাল থেকেই কিছু বড় প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ধাক্কা শুরু হচ্ছে। এটি দিন দিন বাড়তেই থাকবে। বিশেষ করে আগামী বছর থেকে চীন, ভারত এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণের সুদ ও আসলসহ পরিশোধ শুরু হবে। তাই আগামী বছর দেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জের বছর বলে মনে করছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। মন্দাকলীন সময়ে জাতীয় গড় আয়, চাকরি, বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয়, উৎপাদন, পারিবারিক আয়, ব্যবসায়িক লাভসহ সবকিছুই অনেক কমে যায়। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও দেউলিয়ার হার বাড়ে। এই সময়ে বিশেষ করে সাধারণ জনগণ চরম আর্থিক দুর্দশায় পড়ার শঙ্কা থাকে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আশঙ্কার কথা নিজেই বলেছেন। এমনকি বিশ্বব্যাংকও তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৩ সালের দিকে মন্দার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। মূলত দু’বছরের করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরেই বিশ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যা মোকাবিলায় দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক অর্থনীতির এ হালের জন্য এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ আর পরাশক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞাকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সূত্র মতে, চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম থাকায় তা দিয়ে আমদানি ও অন্যান্য ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। আগামী বছর বিশ্বে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হলে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি কমে যেতে পারে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে করোনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই দেশে বিনিয়োগে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে চাকরির বাজার সংকুচিত হয়েছে। অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছে। অনেকের বেতনভাতা কমেছে। এদিকে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। অবশ্য এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের শিল্প খাতকে চাঙা করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ সরকারের নেই। একই সঙ্গে রফতানি আয় বাড়াতে পণ্য বহুমুখীকরণেও গুরুত্ব নেই। এদিকে ডলারের বাজারের অস্থিরতা কমছে না। এ পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভরতা কমাতে পদক্ষেপ নিলেও রেমিট্যান্স, রফতানি আয়সহ দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকগুলোতে মন্দাবস্থা বিরাজমান থাকায় সামনের দিনে অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক প্রফেসর ড. সায়মা হক বিদিশা বলেছেন, বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে। এরমধ্যে রফতানি আয় কমতে পারে, আমদানি করা খাদ্য পণ্যের দাম বাড়বে এবং রেমিট্যান্স কমতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়লে বাংলাদেশের রফতানিতে এর প্রভাব পড়বে। কারণ তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকলেও বৈশ্বিক মন্দায় ওখানটায়ও প্রভাব পড়তে পারে। যে কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমবে। এছাড়া বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে খাদ্য পণ্যের দাম। কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য পণ্য বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সেটি প্রভাব ফেলবে। আমদানি করা পণ্যগুলোর দাম বাড়বে। পাশাপাশি সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে যদি দেশের সার্বিক রফতানি আয় কমে আর আমদানি আয় বেড়ে যায়, তাহলে চলতি বছরের মতো আবারো ডলার সঙ্কট তৈরি হতে পারে।

অবশ্য চাপ সামাল দিতে সরকার বাধ্যতামূলক লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি আর আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নেই। সূত্র মতে, বিশ্ববাজারে ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের পণ্য গত অর্থবছরে রফতানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে, যার প্রায় ৮২ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। আবার রফতানি হওয়া পণ্যের ৬৪ দশমিক ৬১ শতাংশই গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। একক পণ্য ও দুটি গন্তব্যের ওপর নির্ভরতা এখন বড় ধরনের অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে দেশের রফতানিকারকদের। কারণ বাংলাদেশি পোশাকের প্রচলিত বাজারগুলো এখন অর্থনৈতিক মন্দায় প্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশসমূহে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রফতানি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারকরা। ইতোমধ্যে দেশের ব্যবসায়ীরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, বছরের শেষ তিন মাসে চামড়ার মতো বিলাসবহুল পণ্য কেনাকাটা যুক্তরাজ্যে ২২ শতাংশ, স্পেনে ১৪ শতাংশ, ইতালিতে ১২ শতাংশ এবং ফ্রান্স ও জার্মানিতে ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে। গ্যাস সঙ্কটে টেক্সটাইল মিলগুলোর উৎপাদন ব্যহত, যার প্রভাবে এ খাতের রফতানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া দেশের বাজারে উৎপাদন কমা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারাসহ নানা কারণে সঙ্কটে দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য চিংড়ি। সাদা সোনাখ্যাত এ খাতের রফতানি বন্ধ রয়েছে বললেই চলে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪০০ কোটি ডলারের আশপাশে ওঠানামা করছে। এ থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি তহবিলে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার। এটি বাদ দিলে রিজার্ভ থাকে ২৬০০ কোটি ডলার। যা দিয়ে বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত আমদানির মধ্যে সাড়ে চার মাসের ব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু এই রিজার্ভ থেকে আগে স্থগিত করা আমদানির দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও মূল ঋণও পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব খাতের ব্যয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া করোনার পর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া, শিক্ষা ও ভ্রমণ খাতেও ব্যয় বেড়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানোম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, বিশ্বে বড় ধরনের মন্দা দেখা দিলে বাংলাদেশও তার বাইরে থাকবে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের যে অংশীজনরা রয়েছেন, তারাও এটি নিয়ে ভাবছেন। বিশেষ করে রফতানিকারকরা শঙ্কায় রয়েছেন।

মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়ের ওপর বেশি পড়তে পারে। বিশ্ব মন্দা দেখা দিলে প্রবাসীদের কাজ কমে যাবে। তার প্রভাব পড়বে প্রবাসী আয়ে। আর বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হওয়ায় মানুষ ফ্যাশনে ব্যয় কমাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পোশাক রফতানির ওপর। গত কয়েকমাসে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে তৈরি পোশাক বা ফ্যাশন আইটেমের চাহিদা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলছেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ফলে ভোক্তাদের ফ্যাশনের প্রতি আকর্ষণ কমে গেছে। ইউরোপ আর আমেরিকায় যারা আমাদের কাছ থেকে পোশাক কেনেন, প্রথমে তারা যেরকম গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার দিয়েছিলেন, সেগুলোর বিক্রি সেরকম হয়নি। ফলে নতুন করে গার্মেন্টস পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা ধীর গতির নীতি নিয়েছে। এটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আমাদের রফতানি আয়ে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের এক্সটার্নাল ইকোনমিকস শাখা থেকে তৈরি পোশাকের প্রান্তিক পর্যালোচনা শীর্ষক প্রতিবেদনে রফতানিতে নতুন গন্তব্যের বিষয়টিতে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ পোশাকের প্রধান রফতানি গন্তব্য দেশগুলোতে বর্তমানে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাই জাপান, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো প্রতিশ্রুতিশীল এশীয় অর্থনীতির দেশই হওয়া উচিত বাংলাদেশের গন্তব্য নির্ধারণের নতুন লক্ষ্য। পাশাপাশি কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান মেড ফাইবার এবং কারিগরি বস্ত্রের বৈশ্বিক বাজারের বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির মতে, তুলাজাত তৈরি পোশাকের চেয়ে কৃত্রিম তন্তুজাত পোশাক রফতানিতে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি।

নীতিনির্ধারকরাও বলছেন, সার্বিকভাবে মূল সমস্যা বাংলাদেশের রফতানি খাতে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকা। প্রধান পণ্য পোশাক। পণ্যটি বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উৎপাদন করতে না পারাও সঙ্কটের অন্যতম কারণ। এখন পশ্চিমা বাজারগুলো অর্থনৈতিক মন্দায় চলে গেছে। পোশাক ক্রয়ে ব্যয় একেবারেই কমে এসেছে। ক্রেতাদের আর্থিক দায় বেড়েছে। খাদ্যশস্যের দামও বেড়ে গিয়েছে। আগে পোশাক ক্রয়ে যে ধরনের ব্যয় সক্ষমতা ছিল, সেটিও এখন ঘাটতির দিকে। এছাড়া করোনার কারণে চীন দীর্ঘদিন পশ্চিমা দেশগুলোতে পোশাক রফতানি বন্ধ রেখেছে। এখন স্বাভাবিক হওয়ায় চীন থেকে ওইসব দেশের পোশাক রফতানি বাড়বে। বাংলাদেশ থেকে কমবে। যার প্রভাবও দেশের অর্থনীতিতে পড়বে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা নতুন দেশগুলোর দিকে মনোযোগী হচ্ছি। কারণ নিজেরাই বুঝতে পারছি, ইউরোপে মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে সামনের দিনগুলোতে রফতানি শ্লথ হবে। যুক্তরাষ্ট্রেও শ্লথ হতে পারে, যদিও দেশটিতে এখন পর্যন্ত রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে জ্বালানি সঙ্কট, তেলের দাম ও সরবরাহের জন্য ইউরোপে শ্লথগতি থাকবে এটা নিশ্চিত। সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নতুন বাজারগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে সরকারের সমর্থন বাড়ানো প্রয়োজন।

এখনো প্রচলিত পণ্যের ওপরই দেশের রফতানিকারকদের নির্ভরতা বেশি বলে মনে করেন রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদি। তিনি বলেন, আমাদের পণ্য বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পোশাকের মতো প্রচলিত পণ্যের নকশায়ও বৈচিত্র্য আনতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
SQ Islam ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৮ এএম says : 1
বৈদেশিক মন্দায় কামলা নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশ যে দেউলিয়া হবে, তা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হবার প্রয়োজন নেই।
Total Reply(0)
Uday Sankar ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৮ এএম says : 1
তবে শ্রীলঙ্কা হবে না তার চেয়েও বেশি খারাপ অবস্থা হবে । যেভাবে দ্রব্য পণ্যের দাম বাড়তেছে । সাধারণ মানুষ কিভাবে বাচবে ।।
Total Reply(0)
Al Helal Ibn Intaj ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৮ এএম says : 1
· তেলের দাম বৈশ্বিক ভাবে কমলে এদেশে কমে না। কিন্তু সংকট বৈশ্বিক ভাবে হলে এদেশেও আসে। ভালোকিছু বৈশ্বিক হলে তার প্রভাব না পড়লেও খারাপ কিছু হলে এর প্রভাব ১০০% পরবেই।
Total Reply(0)
Jashim Chowdhury ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৯ এএম says : 6
একজন দক্ষ নেতার পক্ষে সম্ভব, আগাম সতর্কতাকে মাথায় রেখে ভবিষ্যতের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। আর সেই নেতা হলেন, সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Total Reply(0)
Md Salam ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৯ এএম says : 1
মহান আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করতে হবে কোন মানুষ এর উপর নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল ধরনের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন
Total Reply(1)
Alauddin ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৩৬ এএম says : 1
আমিন
Sa Mansoor Bahadur ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৯ এএম says : 1
দুই মাস আগে সরকার বলেছিলো ৩৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে সব মিলিয়ে নাকি প্রায় পয়তাল্লিশ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ব্যাংকে জমা আছে। এখন দেশের মানুষ আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সত্যিকারের রিজার্ভ কত আছে জানতে চায়। গণতন্ত্র বা জবাবদিহিতা না থাকায় এগুলো সংসদে আলোচনা হয় না, বা নানা ছলচাতুরীতে সত্যটা আলোচনায় উঠে আসে না। প্রধানমন্ত্রী কী দেশ দেউলিয়া হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, দেশের এই করুণাবস্থার দায়িত্ব কারা নিবেন? সরকার সংকট কালের পরিস্থিতির জন্য কতটুকু প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতি জানতে চায়।
Total Reply(0)
Md Abdul Kaiyum Siddike ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:০০ এএম says : 1
ইউরোপ আমেরিকা সিঙ্গাপুর উন্নয়ন উন্নয়ন আর উন্নয়নের কথা বইলা এখন যদি দুর্ভিক্ষের কথা শুনতে হয় মেজাজটা কি ভালো থাকে। এমনিতেই সিন্ডিকেট কারসাজি করে এত উচ্চ মূল্যে জিনিসপত্র কিনে খাইতে খাইতে পকেটে পয়সা নাই, তারপর আবার দুর্ভিক্ষের কথা শুনতে হয়!
Total Reply(0)
Sazzad Hossain Khan ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:০০ এএম says : 1
আর কতো চ্যালেন্জ!!!! প্রায় প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমুল্য বিভিন্ন অযুহাতে বৃদ্ধি করছে। প্রতিটি সেন্টর অস্থির এবং অস্থিতিশীল, মানুষের জীবনমান নিম্ন থেকে নিম্নতর হচ্ছে। এ সবই হচ্ছে ভয়ে চুপসে যাওয়া জনগনের প্রতিবাদের অভাবে।
Total Reply(0)
Queensouth ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:৫৩ পিএম says : 1
দুর্নিতি ও টাকা পাচার বন্ধ করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Queensouth ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:৫৩ পিএম says : 1
দুর্নিতি ও টাকা পাচার বন্ধ করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
ZAHID ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৪ এএম says : 1
সারাজীবন ইতিহাস পড়লাম উন্নয়ন -উন্নয়ন দেশ কানাডা,সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া হয়ে গেছে আর ঘুম থেকে ওঠার আগেই সব কিছু জয় বাংলা!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন