রেলওয়েতে জনবল রয়েছে সঙ্কট। এই সঙ্কট দিন দিন বাড়ছে। অনেক দিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদে লোকবল না থাকার কারণে ব্যাহত হচ্ছে কর্যক্রম। এ কারণে কমে যাচ্ছে রেলের আয় এবং সময়মতো রেল গন্তব্যে না পৌঁছানোয় যাত্রীরাও পড়ছেন দুর্ভোগে। অপরদিকে রেলের সিনিয়র কর্মীদের মধ্যে অনেকে এরই মধ্যে অবসরে গেছেন আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা অবসরে যাবেন, তখন রেল পরিচালনা সমস্যায় পড়বে। রেলসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রেলে জনবল সঙ্কট রয়েছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ইতোমধ্যে বলেছেন, লোকবলের অভাবে অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে আছে। লোকোমটিভ মাস্টার, কারখানা, সিগন্যাল বেল্ট, ওয়েব্যান সব ক্ষেত্রেই বিরাট এক ঘাটতি চলছে। একজন লোক নেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই কাজে লাগানো যায় না, তার প্রশিক্ষণেরও দরকার রয়েছে। আমাদের অনেক ব্যত্যয় রয়েছে। লোকবল সঙ্কটের কারণে ছোটখাটো দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিকল্প লোক সেখানে দেয়ার মতো লোকবল নেই।
জানা গেছে, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে লোকবলের অভাবে ১৭৫টি স্টেশনের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৫৪টি। বাকি ১২১টি স্টেশন চালু রয়েছে। বন্ধ স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রি হয় না। এতে ট্রেনে ওঠে টিটি ও যাত্রীদের টিকিট কাটা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এমন অবস্থায় অনেক যাত্রীই বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছেন। ফলে প্রতিদিন রেলওয়ের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথে ১০টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ছয়টি স্টেশনে সপ্তাহখানেক বন্ধ থাকে টিকিট বিক্রি। এই স্টেশনগুলোতে রেলওয়ের নিজস্ব কোনো লোকবল নেই। স্টেশনগুলো চলত দৈনিক মজুরিপ্রাপ্ত টেম্পোরারি লেবার রিক্রুট (টিআরএল) লোকবল দিয়ে। টিআরএল লোকবল ঢাকায় আন্দোলনে যোগ দেয়ায় স্টেশনগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ে। এতে করে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুনে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথটি চালু হয়। ঢালারচর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ঢালারচর এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চলাচল করছে। সকালে ট্রেনটি ঢালারচর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকেলে আবার ফিরে আসে। নতুন রেলপথে ঢালারচর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে মোট ১০টি। কিন্তু স্টেশনগুলোর জন্য রেলওয়ে পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দেয়নি।
১০টি স্টেশনের মধ্যে বাঁধেরহাট, কাশিনাথপুর, সাঁথিয়া, রাজাপুর, তাঁতিবন্ধ, দুবলিয়া, রাঘবপুর এই ৭টি স্টেশনে রেলওয়ের নিজস্ব কোনো লোকবল নেই। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী লোকবল দিয়ে স্টেশনগুলো চালানো হয়। তবে গত ১৭ অক্টোবর ওই কর্মীরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তারা সবাই ঢাকা চলে যান। এতে স্টেশনগুলোর সব কার্যক্রম ও টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিআরএলের একজন কর্মী জানান, পশ্চিম রেলওয়েতে পাকশী, লালমনিরহাট ডিভিশন (বিভাগ) এবং খুলনা রয়েছে। এগুলোতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক লোকবল রয়েছে প্রায় ২ হাজার ১০০ জন। তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।
পশ্চিম রেলওয়ের জি এম অসিম কুমার তালুকদার জানান, পাবনার ছয়টি স্টেশন লোকবলের কারণে বন্ধ ছিল। এই স্টেশনগুলোতে টিআরএল লোক কাজ করতেন। তাদের কাজের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ।
বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, পশ্চিম রেলওয়ের ১৭৫টি স্টেশনের মধ্যে লোকবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে ৫৪টি। বাকি ১২১টি স্টেশন চালু রয়েছে। লোকবল সংকট কত? এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, সময় লাগবে দেখতে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ৪২টি স্টেশনে নিজস্ব কোনো লোকবল নেই। দৈনিক মজুরিপ্রাপ্ত লোকবল দিয়ে স্টেশনগুলো চালানো হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন