লক্ষীপুর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের ৭৮ কর্মকর্তাসহ শতাধিক পদ শুন্য থাকায় পরামর্শ ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। হুমকিতে রয়েছে অর্ধশতাধিক কৃষি বীজাগার।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলা উপ-পরিচালক শস্য, উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উদ্যানসহ তিনটি পদ দীর্ঘদিন শুন্য রয়েছে। পাঁচ উপজেলায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার ১৭৮ পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১২০ জন, ৫৮ জনের পদেই দীর্ঘদিন যাবত শূন্য। পাঁচ উপজেলায় একজন করে সহকারী কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তার পদ থাকলেও রামগঞ্জ ছাড়া বাকি চার উপজেলায় পদগুলো শূন্য। প্রতি উপজেলায় দুজন করে কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তার স্থলে রামগঞ্জে ও সদরে আছেন দুজন, আটটি পদ শুন্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির একাধিক পদও শুন্য রয়েছে।
কৃষিতে বিপুল সম্ভাবনাময় লক্ষীপুর জেলায় কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের জনবল সংকটের কারণে উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট পরামর্শ ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। এছাড়া জেলার অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন কৃষি বীজাগার দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ব্যবহার অনুপযোগী এসব বীজাগারের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা না করলেও সঠিক এবং সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ ভবনের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষি উৎপাদনের হার বাড়ানোর জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ইউনিয়ন কৃষি বীজাগারগুলো চালু না থাকায় যথাযথ সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। তাই এসব বীজাগার সংস্কার করে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কার্যালয় ও কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে কৃষি ক্ষেত্রে সফলতা আরও বাড়বে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সূত্র জানায়, ষাটের দশকে লক্ষীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতির উপজেলায় প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে ৫২ টি বীজাগার স্থাপন করে। এসব বীজাগারে বেশ কয়েক বছর সরকারিভাবে সার, বীজ ও কীটনাশকসংরক্ষণ করা হতো। ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত কৃষি সহকারীর মাধ্যমে সেগুলো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়েকৃষকদের পরামর্শ সহায়তা দেওয়া ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি বিভাগের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হতো এসব বীজাগার থেকে। অল্পসময়ের মধ্যে এর সুফল পায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। পরে ডিলারের মাধ্যমে (বেসরকারিভাবে) সার, বীজ ও কীটনাশক খোলা বাজারে বাজার জাত করা শুরু হওয়ার এক পর্যায়ে এসব বীজাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কৃষকরা বীজাগারের সেইসব সেবা আর পাচ্ছেন না। বেদখল হয়ে গেছে অধিকাংশ বীজাগার।
বীজাগারগুলো দখলমুক্ত করে সংস্কার ও পুণঃনির্মাণ করে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যম্যে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সেবা ও পরমর্শা দেয়া গেলে কৃষির উন্নয়ন হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিকক কৃষকরা এর সুফল পাবেন বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের কয়েকজন চাষি জানান, জমিতে ফসল রোপণের আগে বা পরে সঠিক সময়ে কখনও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ তারা পাননি। জমিতে কখন কোন সার বা কীটনাশক দিতে হবে তা স্থানীয় বাজারের সার দোকানিদের কাছ থেকে তারা জেনে নেন। ফলে ফসলের রোগবালাই বুঝতে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি কাঙ্খিত উৎপাদন পেতেও তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, জনবল সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দৃুই-তিন ইউনিয়ন মিলে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের তদারকি করছেন। তাই কৃষক সেবা পেতে বিলম্ব হতে পারে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন খান জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে নতুন উদ্যেগে ইউনিয়ন ভিত্তিক কৃষি বীজাগারগুলো চালু করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন