প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে চাঁদপুর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্যক্রম। জেলায় পশু-পাখির নিয়মিত টিকাদান, চিকিৎসাসেবা, কৃত্রিম প্রজনন ও গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক পরামর্শের অভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। জেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ৯৯টি পদের মধ্যে ৩৫টি শূন্য। ফলে প্রকট হয়ে উঠেছে জনবল সঙ্কট।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের ৭০৯টি খামারে তিন লাখ ৪৫ হাজার ১১০টি গরু ও দুই হাজার ৪০৫টি মহিষ রয়েছে। এ ছাড়া ৫৪টি খামারে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭টি ছাগল এবং ১৪টি খামারে ছয় হাজার ৫৪২টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ৮১টি লেয়ার ও ৯৯৯টি বয়লার খামার। জেলায় ১৩টি হাঁসের খামারে রয়েছে আট লাখ ৭৩ হাজার ৮৮২টি হাঁস। দেশী মুরগি আছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৮২৬টি। ৩৫৫টি খামারে আছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৬৮০টি কবুতর।
এসব গবাদি পশুপাখির রোগ নিরাময়, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরামর্শের জন্যে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। গুরুত্বপ‚র্ণ পদের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদগুলো শ‚ন্য থাকায় জেলার খামারগুলোয় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। খামারিরা দুধ, গোশত ও ডিম উপাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে সৃষ্ট পদ ১১টি। এর মধ্যে দুটি পদ শূন্য। হাইমচর উপজেলায় সৃষ্ট পদ ১১টি। এর মধ্যে সাতটি পদ শূন্য। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় সৃষ্ট পদ ১১টি। এর মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য। মতলব উত্তর উপজেলায় সৃষ্ট পদ ৯টি। এর মধ্যে একটি পদ শূন্য। শাহরাস্তি উপজেলায় সৃষ্ট পদ ১১টি। তার মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য। হাজীগঞ্জ উপজেলায় সৃষ্ট পদ ১১টি। এর মধ্যে চারটি পদ শূন্য। কচুয়া দক্ষিণ উপজেলায় সৃষ্ট পদ ১১টি। এর মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সৃষ্ট পদ ১১টি। এর মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য।
চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে গো-খামারের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের অনেকটা পরিবর্তন ঘটালেও অধিকাংশ সময়ই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় খামার মালিক মোঃ হাবিবুর রহমান বেপারীকে। তিনি জানান, প্রায় সময়ই গরুর বিভিন্ন রোগবালাইসহ নানা সমস্যা হলেও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে শুক্র, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন ডাক্তার পাওয়া যায় না।
একই কথা বলেন হাইমচর উপজেলার খামারি শেখ জাকির। গত শীত মৌসুমে তার ১৫০টি হাঁস মারা যায়। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় খামারের হাঁসগুলো মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লোকবল সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর অনেক বাড়িতে গবাদি-পশুর চিকিৎসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। শুধু লোকবল সঙ্কটই নয়, রয়েছে প্রয়োজনীয় ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবও। হাইমচরের রাজরাজেশ্বর, হানারচর, ইব্রাহীমপুর এবং নীলকমল ইউনিয়নে খামারী বেশি। এসব চরাঞ্চলে বিভিন্ন খামারী বেশির ভাগই পশু-পাখির নিয়মিত টিকাদান, চিকিৎসাসেবা, কৃত্রিম প্রজনন ও গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঐসব এলাকায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর রোগবালাই হলে তারা ডাক্তার না পেয়ে ট্রলারযোগে চাঁদপুর শহরে নিয়ে আসতে হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবদুল মোতালেব জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীর শূন্য পদগুলোয় পদায়নের জন্যে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। গত সপ্তাহেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে জনবল সঙ্কটের বিষয়টি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে সঙ্কট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অশ্বাস দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, চাঁদপুরে খামারীরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন। প্রাণীস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধের বিক্রয় ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে মানুষকে সচেতন এবং জেলার সর্বত্র কঠোরভাবে প্রশাসনও মনিটরিং করছে। জেলায় স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক এবং রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন