বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জনবল সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল

লক্ষীপুর থেকে মো.কাউছার | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল জনবল সংকটে চিকিৎসা কার্যত্রুম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও জনবল নিয়োগ না দেয়ার কারনে জেলার ২০ লাখ মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী গত ২০১৭ সালে ১৪ মার্চ লক্ষীপুর ষ্টেডিয়াম মাঠের জনসভায় লক্ষীপুর সদর হাসপাতালকে ১শ শয্যা থেকে আড়াই”শ শর্য্যায় উন্নিত করার ঘোষনা দিয়েছেন।
সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানাগেছে, লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ৫০শয্যা থেকে ১শ” শয্যার অনুমোধন দেয়া হয়। ১৪ বছর পার হলেও ১শ” শয্যার পদ সৃষ্টি করে নতুন কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৫০শয্যার কার্যত্রুম চলছে, এ হাসপাতালে ২১জন কন্সালটেন এর পদ রয়েছে। এর মধ্য অর্থপেডিক ও চক্ষু ছাড়া বাকি ১৮টি পদে ডাক্তার নিয়োজিত আছেন। ৭০জন নার্স- ব্রাদারের মধ্য কর্মরত আছেন ৩০জন বাকি ৪০জনের পদ খালী রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর এম এল এস এস, আয়া ও সুইপারের ১৮টি পদের মধ্যে ৯টি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া রেডিওলোজিষ্ট পদটি দীর্ঘদিন থেকে খালি পড়ে থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কোন ধরনের আলট্রাসোনগ্রাফী পরীক্ষা হয়না।
বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবদুল আজিজ ও ময়িম বেগম এই প্রতিবেদকে জানান, জেলা শহরের হাসপাতালের কারনে প্রতিদিন সকালে প্রায় ৫ শতাধিক রোগী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্য বিভিন্ন বিভাগে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়। রোগীর সংখ্যা বেশী হওয়ার কারনে আমরা যে ভাবে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সে ভাবে পাচ্ছি না। সকাল বেলায় কাউন্টার গুলোতে জামলেগে থাকে। রোগীরা ঠিকমত টিকেট পায়না। এই সুযোগে দালালরা তাদের দৌরাত্ত দেখিয়ে রোগীদের হয়রানী করতে থাকে। প্রতিদিন ১টার পরে বহি:বিভাগের টিকেট বিত্রিæ বন্ধ হয়ে যায়। রেগী যতখন পর্যন্ত থাকবে ততখন পর্যন্ত টিকেট দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি শিশু রোগীর মা নুরনাহার বেগম জানান, আমার ২ বছরের মেয়েকে নিয়ে ২দিন ধরে হাসপাতালে আছি। বাথরুমের অবস্থা খুবই করুন, সব সময় অপরিস্কার থাকে।
রোগীর স্বজনদের আরো অভিযোগ, দরজা-জনালা ও পানির টেপ গুলো ভাঙ্গা তাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রতিটি বেডে একজন রোগী চিকিৎসা নেয়ার নিয়ম। কিন্তু দুই-তিনজন ভর্তি রোগী প্রতিটি বেডে থাকতে হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে বাথরুম,টয়েলেট অপরিচ্চন্ন কারনে রোগীরা আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন অভিযোগ তাদের। এ ছাড়া সব সময় পানি সম্যসা লেগে থাকে,হাসপাতালের পানির পাম্পটির একে বারে নাজুক অবস্থা। পাম্প থেকে উঠানো পানি ময়লা ,দুর্গন্ধ ও লবন যুক্ত তাই ব্যবহার করা যায়না। নিরুপায় হয়ে কর্তৃপক্ষ পাম্পের সংযোগ পুকুরে দেয়। বর্তমানে হাসপাতাল সংশিস্ট ডাক্তার,নার্স ও রোগীসহ সকলে ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করছে। এতে রোগীসহ সকলে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
লক্ষীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স অর্চনা রানী জনান, সব সময় ৭০/৮০ জন রোগী থাকে একা ডিউটি করে সমলাতে খুব কষ্ট হয়। আমাদের রোগী বেশী কিন্তু ৪০জন নার্সে পদ খালি । তাই সব সময় ২/৩ জনের ডিউটি ১জনে করতে হয়।
সদর হাসপাতালের আরএমও ডা.আনোয়ার হোসেন জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মূল ৫০শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালের কার্যত্রুম চলছে, তার মধ্যে অনেক গুলো পদ খালি রয়েছে। যে কারনে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তবুও আমরা সব সময় আন্তরিক ভাবে সেবা দেয়ার জন্য সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করছি। বিশেষ করে আয়া ও সুইপারের ১৮টি পদের মধ্য ৯টি পদ খালি থাকায় বার বার রোগী ও স্বজনরা অপরিচ্চন্নতার বিষয়ে অভিযোগের সুযোগ পায়।
লক্ষীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহম্মদ জানান, আমি আসার পূর্বে লক্ষীপুর সদর হাসপাতালের অনেক সমস্যা ছিল । বর্তমানে জনবল সংকট ছাড়া তেমন কোন সমস্যা নেই, ইতি মধ্যে দালালদের দৌরাত্ত কমিয়েছি। ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি। দরজা-জনালা ও পানির টেপ গুলো ভাঙ্গা ছিল মেরামত করেছি। জনবল সংকটের সম্যসা সমাধানের জন্য বার বার উধর্¦তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, আশাকরি দ্রæত এর সমাধান হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন