আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকেই সমর্থক ও বিশ্বগণমাধ্যমের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। সেই চাপেই কিনা প্রথম ম্যাচেই দুর্বল সাউদীর বিপক্ষে ভেঙ্গে পড়েছিল আলবিসেলেস্তারা, থেমে যায় টানা ৩৬ ম্যাচের জয়রথ। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা তিনটি ম্যাচ জিতেছে মেসি-ডি মারিয়ারা। সমর্থকদের চাওয়া ছিল, মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখা। সেই প্রত্যাশা পূরণে আজ রাত ১টায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা। লুসাইল স্টেডিয়ামে শেষ আটের লড়াইয়ে নামার আগে আলবিসেলেস্তাদের সবচেয়ে বড় বাধা ডাচদের বিপক্ষে তাদের পরিসংখ্যান। একই সঙ্গে আসরে এখন পর্যন্ত কোন বড় দলের মোকাবেলা না করাটাও বিশাল সমস্যা আকাশি-নীল কোচ লিওনেল স্কালোনির জন্য। তবে এটাও সত্য যে বর্তমান নেদারল্যান্ডস পূর্বের আসরের (২০১৪) মত শক্তিশালী নয়। কমলা শিবিরে নেই রোবেন-ভ্যান পার্সিদের মত প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার মত কোন ফুটবলার। সব মিলিয়ে রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে এক জমজমাট ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় ফুটবল প্রেমীরা।
সাউদীর বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে স্কালোনির শীষ্যরা। যার প্রথমটিতে রক্ষণের দুর্বলতা ফুটে ওঠে স্পষ্টভাবে। তবে এরপর তারা ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। রক্ষণভাগ দেখায় দৃঢ়তা। গ্রæপের বাকি দুই ম্যাচ জিতে নেয় তারা জাল অক্ষত রেখে। শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি গোল যদিও তারা হজম করলেও, আকাশি-নীলদের রক্ষণ আছে বেশ জমাট। তবে মেসি এবং আলভারেজ ছাড়া অন্য কোন ফুটবলার প্রতিপক্ষের শিবিরে ভয় ধরানোর মত খেলা এখনো উপহার দেয় নি। তাই এই আসরে কিছুটা রক্ষণশীল ডাচদের মূল টার্গেটই থাবে ওই দুই আর্জেন্টাইনকে আটকানো। আর্জেন্টিনা মূলত ৪-৪-২ ছকে মাঠে নামলেও, সবশেষ ম্যাচে ডি মারিয়ার চোটের কারণে, আস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিল ৪-৩-৩ ছকে। জুভেন্টাস উইঙ্গার যেহেতু আজ রাতে খেলার জন্য ফিট, তাই পুরনো কৌশলেই ফেরত যাচ্ছেন স্কালোনি। খেলায় পিছিয়ে বা গোলশ‚ন্য থাকলে মেসি বেশ নিচে নেমে আক্রমণ তৈরিতে সাহায্য করেন। সেই সময়টাই আলভারেজই একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে উপরে থাকেন।
আর্জেন্টিনা শিবিরে নেই কোন চোটের সমস্যা। তবে শেষম্যাচে পাপু গোমেজ চোটের জন্য বিরতির পর আর মাঠে নামেননি। এই সেভিয়া মিডফিল্ডারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি আলবিসেলেস্তা শিবির থেকে। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পূর্বে আর্জেন্টিনা ৩ আসরে শেষ আট থেকে কাটা পরে। অন্যদিকে সবশেষ ৩ ম্যাচে তারা গোলশ‚ন্য ছিল নেদারল্যান্দসের বিপক্ষে।
অন্যদিকে ডাচ ম্যানেজার লুই ফন গাল তার দলের সীমাব্ধতা সম্পর্কে জানেন। এই আসরে এখন পর্যন্ত তার দলই অপরাজিত। এই বর্ষীয়ান কোচ দলের কৌশল সাজানোর ক্ষেত্রে এবার রক্ষণকে খুব বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে এই কৌশলের গ্যাঁড়াকলে বেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে ডি-লিট ও ডি-ব্রিজের মত সেন্টারব্যাকরা। তাছাড়া দলে নেই কোন পরীক্ষীত স্ট্রাইকার। তাই মেপফিস ডেপাই ও বার্গউইনের মাধ্যমের সারতে হচ্ছে ফরোয়ার্ড লাইনের কাজ। তবে কোডি গাকপো দারুণ সহায়তা করছে আক্রমণ ভাগে। মধ্যমাঠের গোতা ম্যাচই নিয়ন্ত্রণ করছেন ফ্রাঙ্কি ডি-ইউং। আর ডাচদের রক্ষণের অতন্দ্র পহরী কাপ্তান ভার্জিল ভ্যান ডাইক। মেসিদের গোল করতে হলে পেরুতে হবে নেই দেয়াল।
ফন গালের রক্ষণশীল কৌশল নিয়ে যে সমালচনা চলছে তার জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি মতামত দিতেই পারেন। তবে আমি সেই ব্যাপারে একমত নয়। আপনি কথা লিখে রাখেন, আমার খেলা বিরক্তিকর নয়।‘
এই দুই দল এখন পর্যন্ত ৯ বার মুখোমুখি হইয়েছে, যেখানে কমলাদের জয় ৪ ম্যাচে আর আকাশি-নীলরা জিতেছে ২ বার। অন্যদিকে ড্র হয়ছে ২টি ম্যাচ। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৪ বার মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল। সেখানে একটি করে ম্যাচ জিতেছে দুই দল আর বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন