আশার শেষ দীপটিও নিভে গেল’-বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে মত প্রকাশের পর এ কথাটি বলাই বোধ হয় যথার্থ হয়। বোধ হয় বলা এ কারণে যে বাংলাদেশে এখন আর কেউ নির্বাচনের কথা বলে না, যে বিএনপি এ নির্বাচনের জন্য সোচ্চার ছিল সে দলটিও এখন এ নিয়ে কথাবার্তা বলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বিরাজমান প্রেক্ষাপটে দেশের কেউ আর এখন নতুন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা করেন না। যেখানে কারো নির্বাচনের ব্যাপারে আশাই নেই সেখানে আশার শেষ দীপ জ¦ালিয়ে রাখবেই বা কে?
কী বলেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দল? ১৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক (ডিএসএএস) ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সফর শেষে ১৩ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএসএএসের চেয়ারপারসন জিন ল্যাম্বার্ট বলেন, বাংলাদেশে আগামী সব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে এবং এ সব নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তিনি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে এখনই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পন্থা বের করার তাগিদ দিয়েছেন। জানা যায়, সংবাদ সম্মেলনের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্যস! হয়ে গেল। কী হলো? হলো এই যে বাংলাদেশে ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের শেষ আশাটিও বিলীন হয়ে গেল। সচেতন মহল বলেছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ মতপ্রকাশের অর্থ হলো বর্তমান সরকারকে ক্লিনচিট দেওয়া। গত দু’ বছরে সরকার এমনিতেই একতরফা নির্বাচন করার অস্বস্তি ধীরে ধীরে পুরোটাই কাটিয়ে উঠেছে। বলতে গেলে তারপরও যৎসামান্য যে অস্বস্তিটুকু ছিল তাও এখন এ মত প্রকাশের মধ্য দিয়ে দূর হয়ে গেল। আর তাদের কেউ বলবে না যে নতুন নির্বাচন কর। এখন সরকার নির্ভার হয়ে নীল আকাশে ডানা মেলে উড়বে আর উড়বে। আর ব্যর্থতার পাথরভার নিয়ে ক্রমাগত তল থেকে অতলে নামতে থাকবে বিএনপি। উল্লেখ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছিল। তারা সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিল। দৃশ্যত উভয়েই এখনো সে অবস্থানেই আছে। তবে তাদের সে অবস্থানকে ঢোঁড়া সাপের সাথে তুলনা করা যায়। ঢোঁড়া সাপও সাপ বটে, তবে তার বিষ নেই বলে ভয়ংকর নয়। সে জন্য তারা কেউ বাংলাদেশ সরকারের উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করেনি বা পুনর্বার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি তোলেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশে তিনবার সরকার গঠন ও পরিচালনাকারী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আন্দোলন করলেও সরকার তা শোনেনি, যে কারণে তারা নির্বাচন বর্জন করে এবং জনগণকেও নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানায়। এর পরিণতিতে যা হয় তা হলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ১৫৩ জন প্রার্র্র্থী বিনা ভোটে এবং বাকিরা নিজ দলীয় বা জোটের শরিক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বলা হয়, ৫-৬ শতাংশের বেশি ভোটদাতা ঐ নির্বাচনে ভোট দেননি। তারপর যথারীতি আওয়ামী লীগ জোট সরকার গঠন করে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এক বছর অপেক্ষার পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিতে কথিত প্রহসনের ঐ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়। তখন সরকার পুনরায় বেগম খালেদা জিয়াকে বালির ট্রাক আর র্যাব-পুলিশের বেষ্টনিতে গুলশান অফিসে আটকে রাখার ব্যবস্থা করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যে সহিংসতাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা সবারই জানা। কোনো হিসেবে ৩শ’ আবার কোনো হিসেবে ৫শ’র মতো মানুষ পুলিশের গুলি ও আগুনে পুড়ে মারা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়ে নিহত হয় পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য। দীর্ঘ তিন মাস পর এ অবর্ণনীয় পরিস্থিতির অবসান ঘটলে দেখা যায়, বিজয়ীর আসনে দাঁড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগ সরকার আর ব্যর্থতার চাদরে গা ঢেকেছে বিএনপি। বিএনপি এখন নিজেও আর নির্বাচন আদায়ের আন্তরিক ইচ্ছা ও কঠিন প্রত্যয়কে ধারণ করে বলে মনে হয় না। তাই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদলের ২০১৯ সালে পরবর্তী নির্বাচনের কথা বলা নিয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। দেশের যে কোটি কোটি মানুষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেন না তাদের অপমান, হতাশা, ক্ষোভকে বিএনপি কোনো কাজে লাগাতে পারল না। এভাবে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের সব প্রত্যাশাকে নিরাশার আবর্তে ফেলে দলটি শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছে।
অবস্থাদৃষ্টে বলতে হয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল ২০১৪-র অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত নির্বাচনকে মেনে নিয়ে নতুন সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয় পরিত্যাগ করে ২০১৯ সালে আগামী নির্বাচনের সামনে বাংলাদেশের জনগণকে বসিয়ে দিয়ে গেল। এর মাধ্যমে তারা এটাই প্রমাণ করে গেলেন যে ক্ষমতাসীনরাই তাদের কাছে বড়। কীভাবে তারা ক্ষমতায় এসেছেন, জনগণের বিরাট অংশ কি চায়, গণতন্ত্র আছে কি নেইÑ ইত্যাদি তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। এ প্রসঙ্গে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভারতের দি স্টেটসম্যান পত্রিকায়, ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কোনো কোনো সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক-লেখক কুলদীপ নায়ারের বাংলাদেশ বিষয়ক একটি নিবন্ধে ব্যক্ত মতের কথা উল্লেখ করা যায়। ‘হ্যাজ বাংলাদেশ লস্ট ইটস ফোকাস’ শীর্ষক এ নিবন্ধে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। তা সত্ত্বেও যদি নির্বাচন হয় তাহলে আগেভাগেই বলে দেয়া যায় যে শেখ হাসিনা পরাজিত হবেন না।” অভিজ্ঞ কূটনীতিক কুলদীপ নায়ারের কথার প্রথম অংশ পরিষ্কার। পরের অংশে তিনি একটু কৌশলের আশ্রয় নিলেও তার মর্মার্থ বুঝতে কষ্ট হয় না। এ ক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে না করবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে কারো কারো অনুমান যে ২০১৯ সালে এ রকম অবস্থা অবশ্যই ঘটতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে বিএনপির কিছু করার অবস্থায় না থাকারই সম্ভাবনা। তবে ইতোমধ্যে জনগণকে তাদের সাথে সম্পৃক্ত করার কার্যকর কৌশল যদি দলটি নিতে পারে তাহলে অন্য কথা।
ভারতের দি সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত কুলদীপ নায়ারের আরেকটি নিবন্ধের বাংলা ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি সংবাদপত্রে। এতে তিনি বলেছেন, “শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক মনোভাব আরও ধ্বংস বয়ে আনবে। ... শেখ হাসিনা সচেতন যে তার জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে। তাই হেরে যাওয়ার ভয়ে ঢাকার মেয়র নির্বাচনও চাননি। তিনি চান না বিরোধী দল কোনো হরতাল করুক বা রাস্তায় নামুক।”
এ দু’টি নিবন্ধের মধ্য দিয়ে কুলদীপ নায়ার বাংলাদেশের সর্বসাম্প্রতিক অবস্থার একটি দিককে স্পর্শ করেছেন। তার পর্যবেক্ষণ ও মতামতের সাথে সরকার বা আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বা অন্য কেউ একমত না হতেই পারেন। অন্যদিকে তার এ সব মন্তব্য বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কি না বলা মুশকিল। কারণ, নিন্দুকেরা একটি কথা ছড়িয়ে রেখেছে যে দলটির সর্বোচ্চ থেকে নি¤œ পর্যায় পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঝে পড়াশোনার চর্চা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি নেতাদের নির্লিপ্ততা ও মনোযোগহীনতা দেখে এ কথাকে ভিত্তিহীন বলাও অবশ্য কঠিন।
অনেকেই মনে করেন যে, বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় অধ্যায়ের সম্মুখীন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা যেমন বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে, দলের করণীয় নির্ধারণ করতে পারেননি, পারছেন না, তেমনি দলীয় কর্মীদের সংগঠিত রাখাসহ তাদের যথাযথ দিক নির্দেশনা দিতেও ব্যর্থ হয়েছেন ও হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এই যে, সরকারের দমন নীতি থেকে শীর্ষ নেতারা আইনগতভাবে নিজেদের রক্ষার উপায় বের করতে পারেননি, কর্মীদেরও রক্ষা করতে পারেননি। তবে এও ঠিক যে সরকার তাদেরকে সে সুযোগ দেয়ওনি। অন্যদিকে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিবাদ করা বা প্রতিরোধের ঢেউ তোলার ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কখনোই জোরালো কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচারপতিদের অবসরের পর রায় প্রদান সংবিধান পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে বিচারপতিরা অবসরের পর রায় লিখতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন। তার এ মন্তব্যের পর দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ কেউ বলছেন, প্রধান বিচারপতি ঠিকই বলেছেন। অন্যদিকে সরকারের সমর্থক তাবৎ লোকজন বলছেন, অবসরেরর পরও বিচারপতি রায় দিতে পারেন। তা সংবিধানের লংঘন নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে সংবিধানে কোনো নিষেধ নেই। প্রধান বিচারপতির উক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হলো অবসরে যাওয়ার পর রায় প্রদান যদি অসাংবিধানিক হয়ে থাকে তাহলে দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম অশান্তি সৃষ্টিকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে দেয়া রায়ও অসাংবিধানিক কি না। কারণ, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে ১৬ মাস পর এ রায় লেখেন। বলা হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায় এক নয়। আর যা অসাংবিধানিক তা আইনত বৈধ হয় কি না। অনেকেরই হয়তো মনে থাকতে পারে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্বলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক রায় দেন ২০১১ সালের ১০ মে। কিন্তু এর পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখা ও স্বাক্ষর করা হয় ১৬ মাস পর। তখন তিনি অবসরে চলে গিয়েছিলেন।
প্রধান বিচারপতির এ মন্তব্যের পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেছে। বিএনপি এ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো কিছু করতে পারেনি। প্রধান বিচারপতিও ইতোমধ্যে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তার এ মন্তব্য পরবর্তী রায়সমূহের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, পূর্ববর্তী ক্ষেত্রে নয়। যদিও এ নিয়ে এখনো পক্ষে বিপক্ষে কথা চলছে।
প্রধান বিচারপতির এ মন্তব্য নিয়ে বাদানুবাদ চলার মধ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের অন্যতম একটি প্রধান দৈনিকে এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এ প্রতিবেদনটিতে গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য ব্যক্ত করা হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা উল্লেখের দাবি রাখে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১৯৮৮ সালের বিধিতেই লেখা আছে, রায় দিতে হবে প্রকাশ্য আদালতে, যার ফলে অবসরের পর রায় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিধি অনুযায়ী রিভিউ ছাড়া আদালতে ঘোষিত রায়ের কোনো পরিবর্তন, সংযোজন করা যাবে না।” প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভারতসহ বেশির ভাগ দেশে বহু মামলায় সংশ্লিষ্ট সব বিচারকের সই হওয়ার পরে লিখিত রায়ের কার্যকর অংশ প্রকাশ্য আদালতে পড়া হয়। এতেও স্পষ্ট যে অবসরে কোনো রায় হয় না।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ২৮ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এ. আর. কর্নেলিয়াস রায় দেন যে বিচারপতিরা অবসরে যাবার পর রায় লিখতে পারবেন না। প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, “অবসরে গিয়ে রায় লেখার বিরুদ্ধে ১৯৬৪ সালে দেয়া পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের রায় কখনো বাংলাদেশে উল্টে যায়নি। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির এক আদেশের মাধ্যমে পাকিস্তানের সব প্রচলিত আইনকে গ্রহণ করা হয়েছে। আর সুপ্রিম কোর্টের রায় আইন হিসেবে গণ্য হয়।” প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, “দেশ-বিদেশের আইন, রেওয়াজ ও নজিরের পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে রায়ের ঘোষণা কখনো সংক্ষিপ্ত হতে পারে। কিন্তু কোনোক্রমেই অবসরে রায় লেখা যাবে না।”
প্রধান বিচারপতির মন্তব্যকে ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বাতিল করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, এটি তার মতÑরায় নয়। বিএনপি যা পারত তা হলো বিবৃতি প্রদানের পাশাপাশি উল্লেখিত প্রতিবেদনটির মত তথ্য ও যুক্তির ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পক্ষে সমর্থন যোগাতে, পাশাপাশি অবসরে গিয়ে ইতিপূর্বে প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আইনের সম্ভাব্য আশ্রয় নিতে। তারা সে চেষ্টা করেছিলেন কিনা কিংবা তেমন ভাবনা তাদের মাথায় এসেছিল কিনা, জানি না। যদিও কুলদীপ নায়ার তার পূর্বোল্লেখিত প্রতিবেদনে এ দেশের বিচার বিভাগের উপর সরকারের চাপ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপরও বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এখানে এ প্রশ্ন উঠতে পারে যে আইনের পথ তো প্রলম্বিত, এবং সুবিচার পাওয়া মোটেই সুনিশ্চিত নয়। এর জবাব হতে পারে এই যে যেহেতু রাজপথের আন্দোলনে গিয়ে দাবি আদায়ে দলটি অক্ষম, সেক্ষেত্রে নিরুপায়ের শেষ ভরসা তো আদালতই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
h_mahmudbd@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন