রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরে ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারে বসতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যেগে ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার আসর বসেছে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে। পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে দ্বিতীয়বারের মতো বসবে এ মেলা। ১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধামন্ত্রীর। মেলা উদ্বোধনকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতির কাজ চলছে তোরজোড়ে। নির্দিষ্ট সময়ে মেলা উদ্বোধনকে সামনে রেখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজে এতই ব্যস্ত যে কথা বলার সময় নেই তাদের। আগে স্টল বরাদ্দ পাওয়ায় স্টল নির্মাণ কাজ আগে শেষ হবে বলে আশা করছেন স্টল মালিকরা।
এদিকে কুড়িল বিশ্বরোড ৩০০ ফিট মূল সড়কটির কাজও প্রায় সমাপ্তের পথে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে যাতে কোন বেগ পেতে না হয় সেজন্য সড়কের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে চালু করা হবে বিআরটিসির স্পেশাল বাস সার্ভিস। এদিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ বাণিজ্য মেলার সামনের অংশটুকু দ্রুত শেষ করতে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছেন বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষ। পূর্বাচলের বাণিজ্য মেলা সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সবরকম ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেলা সফল করতে প্রশাসন সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেলার প্রধান ফটক ও প্রবেশদ্বারে তিনটি মেগাপ্রকল্পের কাঠামো, বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরির কাজ চলছে। বেশির ভাগ স্টলের নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে আগাচ্ছে। বেশির ভাগ স্টলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। স্টিল নির্মাণ শেষ হলে স্টলে বোর্ড লাগানো ও রং দেওয়ার কাজ শুরু হবে। অনেক স্টলের কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। এসব স্টলের কাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হতে আরো ৮/১০ দিন সময় লাগবে বলে জানান মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
সেভয় আইসক্রীম এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান (সেভয় আইসক্রীম) মেলায় ২ হাজার ৫শ’ স্কয়ার ফিটের একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছে। বর্তমানে স্টিলের সেট নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে। আমাদের প্যাভিলিয়নে আইসক্রীমের পাশাপাশি কুমকুম নারিকেল তেল, সেভয় মিল্ক সেক থাকবে। সেভয় আইসক্রীম এর সেট নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান শাহআলী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৭ জন নির্মাণ শ্রমিক পর্যায়ক্রমে দিন-রাত কাজ করছে আগামী ৮/১০ দিনের মধ্যে কাঠের ডিজাইন ও রং এর কাজ সমাপ্ত হবে।
বেঙ্গল পলিমার প্যাভিলিয়নের সাইট ইঞ্চিনিয়ার মো. এমরান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান (বেঙ্গল পলিমার) বিগ প্যাভিলিয়ন ২য় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে। বাণিজ্য মেলায় প্রতিবছর আমাদের দোতলা প্যাভিলিয়ন থাকে।
মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর এমডি ইসাহাক মিয়া জানান, গত বছর প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছিলাম ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে তাই স্টল চালু করতে দেরি হয়েছিল। এবছর স্টল বরাদ্দ পেয়েছি নভেম্বর মাসে। আশা করি আগামী ২৫ ডিসেম্বর এর মধ্যে স্টল নির্মাণের সকল কাজ শেষ হবে।
মি.বাইট রেস্টুরেন্ট এর পরিচালক ইঞ্চিনিয়ার মো. খোকন জানান, গত বাণিজ্য মেলায় নতুন জায়গায় দেরীতে স্টল বরাদ্দ পাওয়ায় স্টল নির্মাণেও দেরী হয়েছে।
মেলায় স্টল নির্মাণ করতে আসা আনন্দ মেটাল ইঞ্চিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ এর ম্যানেজার চৈতন্য দাস বলেন, ঢাকা মিরপুর থেকে মেলায় কাজ করতে এসেছি ছোট বড় মিলিয়ে আমরা ১৫টি স্টল নির্মাণের কাজ পেয়েছি। গত ২৮ নভেম্বর থেকে ১৬ জন শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছে। মেসার্স মদিনা এন্টার প্রাইজ, রংপুর ক্রাফট, ইরানী থাই এম্পপোরিয়াম এর প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুরো স্টলের কাজ সমাপ্ত হবে।
ঢাকা থেকে আসা কাঠ ও রংমিস্ত্রি শামিম বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করছি। তার পরও শেষ করতে পারছি না। রং, সাজসজ্জা সব মিলিয়ে দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে স্টল প্রস্তুত হবে।
রপ্তানী উন্নয়ণ ব্যুরো (ইপিবি) সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ জানান, বাণিজ্য মেলার বিদ্যুৎ ও পানির লেআউট সংযোগের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে।
আমেনা ট্রেডার্স এমডি হবিউল্লাহ জানান, বাণিজ্য মেলার ৯৩টি ওয়াশব্লকের কাজ পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। মেলার ওয়াশব্লক সচল রাখতে ২২ শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারেও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর ১ জানুয়ারী উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এবছর মেলায় স্টল সংখ্যা বেড়েছে। আশা করি মেলা জমজমাট হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন