ছুটির দিনে পৌষের তীব্র শৈত্য প্রবাহ উপেক্ষা করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বেড়েছে দর্শনার্থী। জমে ওঠতে শুরু করেছে মেলা প্রাঙ্গণ। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। তবে দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। এদিকে স্থায়ী প্যাভিলিয়নের দ্বিতীয়বারের মতো বসা ২৭তম আসরের রাজধানী থেকে প্রবেশ পথ ৩০০ ফুট ধরে সহজ হলেও ঢাকা বাইপাস সড়ক যেন বিষফোঁড়ায় রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই কাঞ্চন ব্রিজের টোল ঘরে টোল আদায়ে ধীর গতি থাকায় যানজট সমস্যা লেগেই আছে। শুধু তাই নয়, এ সড়কটির ৮ লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান থাকায় স্থানে স্থানে বালু, মাটিসহ নির্মাণ সামগ্রি রাখা ও যানবাহনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনায় যানজটের সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। এতে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মাঝে যারা এ সড়ক ব্যবহার করছেন তাদের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রধান ফটক খুলে দিলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। তাদের লাইন ধরে টিকেট কেটে প্রবেশ করছেন ছুটির দিন থাকায় আশপাশের জেলার লোকজন এবার বেশি এসেছেন। শীতের কারণে দূর জেলার লোকজন কিছুটা কম। অনেকেই স্থায়ী প্যাভিলিয়নের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখে সেলফী তুলে নিজেদের উপস্থিতি শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দর্শনার্থীদের মুগ্ধতা লক্ষনীয়। তবে প্রবেশপথেই স্টল নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকায় স্থানে স্থানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা গেছে। টয়লেটের ব্যবস্থাপনা নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। মেঝেতে পানি জমে স্যাঁতসেতে হয়ে গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত এসব টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়ে।
মেলায় আসা গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, মেলার টয়লেটগুলো ব্যবহারে অনুপযোগি। ভেতরে ঢুকতে হয় কাপড় উঁচু করে ধরে। তিনি আরো বলেন, বাণিজ্য মেলায় আসতে কালীগঞ্জ থেকে শীতলক্ষ্যার পাড়ের ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা। গত বছর দেখা হয়নি তাই এবার দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে ধুলোবালির কারণেও ভোগান্তি হচ্ছে। রূপগঞ্জের মধুখালীর বাসিন্দা মাহরিা তাসফি প্রভা বলেন, মেলায় যাতায়াতের সময় ধূলায় কাপড়চোপড় একদম নষ্ট হয়ে যায়। পানি ছিটালে রাস্তাগুলো থেকে ধূলা কিছুটা কমবে বলে তিনি মনে করেন।
ডিকেএমসির পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলা ভালো জমে। তাই শুক্রবার থেকে এ মেলা জমে ওঠতে শুরু করেছে। এছাড়া মেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যে ডিসকাউন্ট দেয়া শুরু করেছে। বিভিন্ন পণ্যে ছাড় পেলে ক্রেতারা আকৃষ্ট হবেন। ভুলতার পাচাইখা এলাকার বাসিন্দা মাওলানা নুরশাহ বলেন, গাউছিয়া থেকে মেলায় আসার পথ ঢাকা বাইপাস সড়ক। এখানে পুরো সড়কে কাজ চলমান। তাই ১০ মিনিটের পথ ২ ঘন্টায় আসতে হয়েছে। কাঞ্চন ব্রিজের টোল ঘরে টোল আদায়ে ধীর গতির কারণে এ সমস্যা শুনলাম।
সূত্র জানায়, মাসব্যাপী মেলায় এবার দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কসমেটিকস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ-সামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে। বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে খোলা থাকছে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণে যাতায়াতের জন্য এবার ৬৫টি বিআরটিসির বাস চলছে। ছুটির দিনে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
কাঞ্চন সেতু এলাকায় দায়িত্বরত এটিআই নাজমুল ইসলাম বলেন, শুধু মেলা নয়, সব সময় এ সড়কে যানবাহন চলাচলে বাড়তি চাপ থাকে। ফলে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়ে তৎপর থাকি। তবে যেহেতু উন্নয়ন কাজ চলমান সেহেতু এটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঞ্চন সেতুর টোল আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা শামীমুল হক বলেন, আউট সোর্স হিসেবে কতিপয় কর্মচারী এখানে টোল আদায় করে। আরো লোকবল দরকার। তবে মাঝে মাঝে কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে কিছুটা দেরি হয়। এছাড়া দ্রæত টোল আদায় হয়ে থাকে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)‘র সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী বলেন, শীতের প্রকোপ কমে গেলে আরো বাড়বে দর্শনার্থী। তবুও গতবারের তুলনায় এবার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় রাজধানীর লোকজন খুব সহজেই আসতে পারছেন। আর ঢাকা বাইপাস সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এ সড়কে যারা আসছেন। তবে সড়কে যানজটমুক্ত করতে বিপুল পরিমাণ ট্রাফিক ও জেলা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কাঞ্চন সেতুর টোল আদায়ে ধীর গতি নিয়ে মেলার পক্ষ থেকে আপত্তি করা হচ্ছে। কিন্তু ফলাফল পাচ্ছি না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন