মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষ শুক্রবার প্রায় চার লাখ লোকের সমাগম ঘটেছে। মেলার ২৭তম দিনে সকাল থেকেই মেলায় যেমন মানুষের ঢল নেমেছে। তেমনি বিক্রি-বাট্টাও হয়েছে বেশি। আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্য মেলায় গতকাল সবচেয়ে বেশি ক্রেতা ও দর্শনার্থী এসেছেন। আর এতে করে বিক্রিও অন্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয় বারের মতো মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আসর বসে। মেলার শুরুর দিকে লোক সমাগম একেবারে ছিল না। শীতের তীব্রতা কিছুটা কমলে মেলার প্রথম শুক্রবারেই জমে ওঠে বাণিজ্য মেলা। পরের দিকে ধারাবাহিকভাবে ছুটির দিনগুলোতে আগের দিনের উপস্থিতি কাটিয়ে যায়। সেই ধারাবাহিকতা গতকাল শুক্রবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় চার লাখ লোকের সমাগম হয় মেলা প্রাঙ্গণে।
শুক্রবার বিকালে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে মেলায় আসতে শুরু করেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। জুমার নামাজের পর ঢল নামে মানুষের। এতে মেলা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এর মাঝে বিভিন্ন স্টল ঘুরে নানা পণ্যের দরদাম করছেন ক্রেতারা। স্টলগুলোতে ভিড়ের কারণে বিক্রেতাদের দম ফেলার সুযোগ নেই। কিছু কিছু স্টলে পা ফেলার জায়গা নেই।
সকালেই মেলা প্রাঙ্গণে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন এই কলেজ ছাত্র। তিনি বলেন, আজ মেলায় অনেক ভিড় হয়েছে। এ কারণে প্রচÐ ভিড়ের মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমার ভাই বোন ও মা বাবা মেলায় এসেছে। পরিবারের সবার জন্য অনেক কিছু কিনেছি।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন নাদিয়া শারমিন। তিনি বলেন, শেষ সময় মেলায় অনেক ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে শেষ সময় মেলায় কেনাকাটা করতে এসেছি। আমার মত অনেকে শেষ সময়ে মেলায় এসেছেন। তাছাড়া এরপর আর সাপ্তাহিক ছুটি নেই। একারণে অনেক ভিড় হয়েছে।
অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল দ্বিগুণেরও বেশি বিক্রি হয়েছে জানিয়েছেন সায়মন ফ্যাশনের মালিক মো. সায়েম। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) শেষ শুক্রবার। এ কারণে ক্রেতাদের ভিড় বেশি, বেচা-বিক্রিও বেড়েছে। অন্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেøজারের বিভিন্ন পণ্যের ওপরে মূল্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। বেøজারের বিভিন্ন কোয়ালিটির পণ্য ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বেøজারগুলো রেগুলার দাম রয়েছে ২২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৬০০ টাকা। মোদি কটি বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায় যার পূর্ব মূল্য ছিল ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এছাড়া ডেমিন বেøজারে দেওয়া হয়েছে গোল্ডেন অফার। এই বেøজার ২২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইরকম তথ্য জানালে অন্য স্টলের বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরাও। আজ সর্বোচ্চ লোক সমাগম হয়েছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরও মেলার সর্বোচ্চ বিক্রি-বাট্টা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মেলার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, মেলার শুরুতে আশানুরূপ ক্রেতা-দর্শনার্থী না থাকলেও দিন যত গড়িয়েছে লোক-সমাগম তত বেড়েছে। বিশেষ করে প্রতিটা ছুটির দিনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলার শেষ দিকে ক্রেতা দর্শনার্থীদের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। গতকাল ছুটির দিনে মেলায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, ছুটির দিনে স্বাভাবিকভাবে অধিক লোক সমাগম হয়ে থাকে। গতকালও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি, পুরো মেলা জমজমাট। শেষ কয়েকদিন ক্রেতা দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এর মধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বিদেশি ১০ দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন আয়োজকরা। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড় আছে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।
বাণিজ্যমেলায় এবার ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২ দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এ সংখ্যা ছিল ২২৫টি।
এদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের সমাপনী হতে যাচ্ছে ৩১ জানুয়ারি। এতে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনা ভাড়ায় আরো ৭ দিন সময় বৃদ্ধি করার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমনটাই জানালেন মেলার পরিচালক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন