আজ রাত ১০ টার পর শেষ হতে যাচ্ছে বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর। এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় রেকর্ড ছাড়িয়ে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিত হয়েছে। তবে হকার আর দর্শনার্থীবেশে সক্রিয় ছিলো পকেটমার চক্র। তাদের হাতে গত ৩০ দিনে নগদ টাকাসহ ক্রয় করা মালামাল হারিয়েছেন শতাধিক ক্রেতা ও দর্শনার্থী। আর এমন অভিযোগ পেয়ে এ পর্যন্ত ৪০ জনের অধিক পকেটমার নারী ও পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে শেষ মুহূর্তে পণ্যমূল্যে ছাড়ের আশায় আর মেলার শেষ দিন হিসেবে উপছে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ ছাড়ে পণ্য কিনতে মানুষের ঢল নেমেছে। মেলায় নারীদের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীতে চলছে আখেরি ছাড়। এমন অফারে স্টলগুলোতে ভিড় করেন ক্রেতারা।
জানা যায়, এবারের মেলায় অরগেঞ্জা মসলিন শাড়ি তিন থেকে ছয় হাজার টাকা, জামদানি থ্রি-পিস এক থেকে দুই হাজার পাঁচশ টাকা, জামদানি শাড়ি তিন থেকে চল্লিশ হাজার টাকা, জামদানি কাতান এক থেকে চার হাজার টাকা, টাঙ্গাইল শাড়ি আটশ থেকে বারো হাজার টাকা, পাত্রাইল শাড়ি চার হাজার পাঁচশ টাকা থেকে ষোল হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ও হাতব্যাগে ১০%, বিভিন্ন থ্রি-পিসে ৩০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
মেলায় দুই মেয়েকে নিয়ে এসে সুমা আক্তার বলেন, জামদানি শাড়ির প্রতি নারীদের অন্যরকম একটা টান থাকে। তবে দাম একটু বেশি হওয়ায় জামদানি শাড়ি সবসময় কেনা হয় না। মেলায় দেখলাম ৪০% ছাড় চলছে, তাই নিজের জন্য তিনটি শাড়ি কিনে ফেললাম।
ফারিয়া আক্তার নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় এসেছি। এসে দেখি বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে বিশেষ ছাড় চলছে। আমি ছোটবেলা থেকেই সাজসজ্জায় দিকে খুব মনোযোগী। তাই মেলা থেকে কয়েকটি প্রসাধনী সামগ্রী কিনে রাখলাম।
জামদানি ওয়ার্ল্ডের ইনচার্জ নাইম ইসলাম বলেন, আমাদের কারিগররা খুব যতœসহকারে জামদানি শাড়ি তৈরি করে। মেলার শুরুর দিকে আমাদের শাড়িগুলোতে ২০% ছাড় দিলেও এখন ৪০% ছাড় দিচ্ছি। ৪০% ছাড় দেওয়ার পর ক্রেতাদের সাড়া আরো বেড়েছে।
মেলার শেষ ৩০তম দিনে বিভিন্ন স্টল ঘুরে জানা যায়, মাসব্যাপী বেচা-বিক্রি হয়েছে হরদম। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের তদারকি ছিলো দেখার মতো। নানা অনিয়ম পেয়ে আদায় করা হয়েছে ৫ লাখের অধিক জরিমানা। তবে ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরও সময় না বাড়ানোতে ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার শেষ হতে যাচ্ছে ২৭তম এ আসর। মেলায় এবার বিক্রির চেয়ে প্রদর্শনে খুশি ব্যবসায়ীরা। কারণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দর্শনার্থী হয়েছে বহুগুণ বেশি। শিশুদের খেলনা আর শিশুপার্ক ছিলো তাদের পছন্দের। তবে মেলার সব পণ্যের মূল্য বেশি রাখার অভিযোগ ছিলো ক্রেতাদের। শিশুদের পছন্দের পণ্য ছিলো খেলনা, বিজ্ঞানবাক্স, যাদুবক্সসহ শিশুদের পোষাক। আর বিনোদনের জন্য পার্কের সবগুলো রাইড ছিলো পছন্দের।
মেলার ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী ইমলা মুহান্না বলেন, মেলার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে রাইড, ওয়াটার ফ্লাইং ও নৌকায় দোল খাওয়া। এসব ছাড়াও খেলনা ক্রয় করতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সায়েদ বলেন, মেলায় ৭৪১ জন পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। রূপগঞ্জ থানা ওসি ও কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় ছদ্মবেশি প্রতারক ও পকেটমারদের ধরতে সক্ষম হয়েছি বলে দাবি করেছেন রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। মেলা থেকে ৪০ জনের অধিক অপরাধীকে নানা অভিযোগে আটক করে মামলা দেয়া হয়েছে। সবশেষ ২৯ জানুয়ারি ১২ জনকে একদিনে আটক করা হয়। মেলার পার্কিং জোনে গাড়ি নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করেছে। যেখানে কোনপ্রকার অপ্রতীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হয়নি।
মেলার পাশ^বর্তী জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোক্তার হোসেন বলেন, শেষটা বেশ ভালো জমে ওঠেছিলো। এবারের চেয়ে পরের বছর আরো ভালো জমবে আশা করি। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি হাত বদল না করে সরাসরি স্টল পেলে সব পণ্যের দাম থাকবে হাতের নাগালে। এতে সুবিধা পাবে ক্রেতা সাধারণ। নয়তো দাম নিয়ে অসন্তুষ থাকবেই। যার প্রভাব পড়বে মেলায়।
মেলার পরিচালক ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, মেলার শুরু থেকেই খুব ভালো জমেছে। তবে মেলার শুরুতে বিক্রি তেমন না হলেও শেষ সময় ভালো বিক্রি হয়েছে। পণ্যের দাম বিষয়ে তিনি বলেন, মেলার সব পণ্যের দাম বেশি বলে ক্রেতারা অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা বরাবরই বেশি দামে পাইকারী ক্রয়ের অযুহাত দিয়েছেন। মেলার আসর জমজমাট ও স্বার্থক হয়েছে এটাই বড় কথা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন