বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন ভাদুড়ীসহ চাঞ্চল্যকর দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে গ্রেফতার ৭ আসামি

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের পৃথক অভিযানে একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ আলোচিত দুই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। আর এর মধ্যদিয়ে ফেনীর সোনাগাজী জমাদার বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী ও নেত্রকোণার আটপাড়ার এরশাদ মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে গতকাল শনিবার জানিয়েছেন র‌্যাবের কর্মকর্তা।

ভাদুড়ী জুয়েলার্সের মালিক অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী দীর্ঘদিন জামাদার বাজারে স্বর্ণের ব্যবসা করে আসছিলেন। গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে দুটি মোটরসাইকেলযোগে চারজন অজ্ঞাতনামা ডাকাত তার স্বর্ণের দোকানে হানা দেয়। তাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আহত করে। এরপর দোকানের শো-কেস ভেঙ্গে ও লকার খুলে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২৮ লাখ টাকা।
অর্জুন চন্দ্র জীবন রক্ষার্থে চিৎকার করলে আশ-পাশের এলাকা থেকে লোকজন এগিয়ে আসলে ডাকাত দলের সদস্যরা ককটেল বিষ্ফোরণ করে জনমনে আতংক সৃষ্টি করে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ীকে চট্টগ্রাম নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি মারা যান।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে জানা যায়, ডাকাত দলের দুটি মোটরসাইকেলের রং লাল ও কালো। ডাকাতিসহ এই খুনের ঘটনায় নিহতের পুত্র বাদি হয়ে গত ১ নভেম্বর সোনাগাজী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সোনাগাজী থানা পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার টিকিকাটা গ্রামের মো আলতাফ হোসেনের পুত্র মো. জাফর হাওলাদরকে (২৮) সনাক্ত করে।

গত ৩০ ডিসেম্বর ডাকাতিকালে ব্যবহৃত কালো মোটরসাইকেলসহ তাকে গ্রেফতার করে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারের জন্য সোনগাজী থানা পুলিশ র‌্যাবের সহায়তা চায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি বিশেষ টিম র‌্যাব-৮ এর সহযোগিতায় পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানাধীন চরদুয়ানী বাজার থেকে আসামি মো. রাকিব (২০) এবং মো. আয়নাল মালকে (৩২) গ্রেফতার করে। এসময় রাকিবের কাছ থেকে ডাকাতিকালে ব্যবহৃত লাল রঙয়ের পালসার মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আসামিরা ডাকাতি ও খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে।

এদিকে অপর এক অভিযানে নেত্রকোণার আলোচিত এরশাদ মিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরশাদ মিয়ার সাথে গ্রেফতারকৃত আসামিদের দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলা চলছিল। গত ২৬ মে এরশাদ মিয়া আদালত থেকে ফিরে বসতবাড়ির উঠানে বেঞ্চে বসে বিশ্রাম করছিলেন। এ সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামিরা দেশীয় তৈরী রামদা, কিরিচ, শাবল, কুড়াল ও লোহার রড নিয়ে সজ্জিত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশে মারধর শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে তারা কিরিচ দিয়ে এরশাদের মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারলে উক্ত কোপ এরশাদের বাম হাত দিয়ে ঠেকালে তার বাম হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মাথায়, পিঠে, ঘাড়ে এবং পায়ে রামদা, লোহার রড ও শাবল ইত্যাদি দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে চলে যায়।

পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানায় ১৯ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর আসামিরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে এজাহারনামীয় প্রধান তিন আসামি মুন্সীগঞ্জ জেলার মুন্সীগঞ্জ সদর থানাধীন পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকায় অবস্থান করছে। র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে আসামি আব্দুল মোমেন সবুজ মিয়া (৬৫), মো. রুমান মিয়া(২৪) ও মো. আরমান মিয়াকে (১৮) গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে ওই হত্যা মামলার আসামি আবুল কাশেম (৫৫) ও শফিকুল ইসলামকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন