সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ইটভাটায় দিনে কয়লা রাতে পুড়ছে কাঠ

ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:০৮ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ে অধিকাংশ ইটভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। অনেক ইটভাটায় পুড়ছে কয়লার আড়ালে কাঠ। ভাটায় দিনের বেলায় লোক দেখানো কয়লা পুড়ছে আর সন্ধার পরে পরেই চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। এতে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ভাটার নির্গত ধোঁয়ায় হুমকিতে পড়ছে মানবস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য। তবে অনেক ভাটা মালিকের দাবি, কয়লার দাম বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়েই তারা ইট পোড়াতে এমন করছেন।

একদিকে ভাটা মালিকরা বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিচ্ছে। এতে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর ভাটায় মাটি পরিবহনের নামে শহর গ্রামের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভটভটি ট্রাক্টর। ফলে মাটি পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাকা রাস্তা। বৃষ্টি হলেই পিচ্ছিল রাস্তায় ঘটছে দুর্ঘটনা আর খরা হলে প্রচণ্ড ধুলায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। এ অবস্থায় চলতি মাসের ২৩ জানুয়ারি ঘন কুয়াশায় পড়ে থাকা কাদা মাটিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে মোটরসাইকেল পিছলে আরোহী নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। একই সময় জেলার বিভিন্ন সড়কে মোট ১০ জায়গায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশবিদরা বলছেন, ইট দেশীয় নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে অন্যতম। এটি বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। তবে ভাটাগুলো পরিবেশবান্ধব করে প্রশাসনের দেওয়া নিয়ম মেনেই ইট তৈরি করুক, এখানে বাধা থাকার কিছু নেই। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরপ্রধানরা বলছেন, কয়লার পরিবর্তে কাঠখড়ি, মাটি টানা ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য এবং মাটি পড়ে সড়ক-মহাসড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, এটি আসলেই ভাবনার বিষয়।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের তোয়াক্কা না করে জনবসতি এলাকা, বাসাবাড়ির পার্শে ও আবাদি জমিতে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে চলছে ইট পুড়ানোর কাজ।

জেলার তথ্য অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় ইটের ভাটা রয়েছে ১২৩টি। তবে এ বছর ১১১টি ইটভাটায় ইট পুড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ০৬টি ভাটার রয়েছে পরিবেশের হালনাগাদ ছাড়পত্র । তার মধ্যে তিনটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়নি।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মিলে এখন পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলার ৪৫ টি অবৈধ ইটভাটার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছে। ভাটাগুলো বন্ধের নির্দেশ তোয়াক্কা না করেও দেদারসে কার্যক্রম চলছে। ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ সহ সবকটি উপজেলায় খবর নিয়ে জানতে পারি প্রায় প্রতিটি ইটভাটায় ইট তৈরি, শুকানো,পুড়ানোর কার্যক্রম চলছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা সহ আরও তিনটি জেলার অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধে গত ৭ নভেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনার অগ্রগতি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট চার জেলা প্রশাসককে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

অন্যদিকে ১৩ নভেম্বর দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ আর ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

জেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, ভাটার সামনের অংশে গাদা করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়লা। সামান্য এগিয়ে গেলেই আড়ালে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি ও ডাল। অনেকে ভাটার ম্যানেজারের কথা আমরা কাঠ খুব বেশি পোড়াই না। প্রথম দিকে আগুন দিতে গেলে কিছু কাঠ লাগে তাই শুধু পোড়াই। এ ছাড়া তেমন কোনো কাঠ পোড়াই না।।

এ বিষয়ে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ আপেল বলেন, কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ানো এবং ভাটার মাটি টানা ট্রাক্টরে রাস্তা নষ্টের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি অতি দ্রুত সভা করে এ ব্যাপারে সব ভাটা মালিককে সচেতন করব।

ঠাকুরগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অফিস না থাকায় তাদের কোন মতামত জানাতে পারিনি। তবে অতিরিক্ত দায়িত্বে পঞ্চগড়ের কর্মকর্তা ছিলেন তিনাকে কিছুদিন আগে এ দায়িত্বে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় বৈধ ইটভাটা ৬টি তবে চলমান রয়েছে ১১১টি। ৬টি বাদ দিয়ে বাকিগুলো সব অবৈধ। আমরা এখন পর্যন্ত মোট ৪৫টি ইটভাটায় প্রায় ৫৫ লক্ষের উদ্ধে জরিমানা আদায় করেছি। পর্যায় ক্রমে প্রত্যকটিতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন