জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন,বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হলো কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হলো না। আমরা এবার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, নির্বাচনে আমাদের ফলাফল যাই হোক এটা কোন বিষয় না। আমরা চাই জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক।
গতকাল রাজধানীর শ্যামপুর থানা সংলগ্ন প্রধান সড়কে শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির কর্মী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হলো কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হলো না। গণমাধ্যমের একটি রিপোর্টে অন্তত ১৩ জন বাংলাদেশীর নাম উঠে এসেছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ডলার চুরির অভিযোগে অভিযুক্তদের কারো কারো প্রমোশন হয়েছে, অবারো কেউ কেউ ইতোমধ্যেই অবসরে চলে গেছেন। ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে মাত্র দেড় কোটি ডলার ফিরিয়ে আনা হয়েছে বাকি টাকা কবে দেশে আসবে তা কেউ জানে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই। ডলার চুরির ঘটনা ৩৮ দিন কেন গোপন রাখা হলো? বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্ণর কেন এর ব্যাখা দিলেন না ? ডলার চুরির দায় তিনিও এড়াতে পারেন না।
তিনি বলেন, কারো দয়া-দাক্ষিণ্যে এমপি- মন্ত্রী হলে তাতে কোন সম্মান নেই। গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সম্মান। প্রজাতন্ত্র হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষই দেশের মালিক। তারা দেশ পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। প্রতিনিধিরা দেশের মালিকদের (সাধারণ জনসাধারন) ইচ্ছে অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন। সাধারণ মানুষের ইচ্ছেমত প্রতিনিধিরা কাজ না করলে পরবর্তীতে দেশের মালিকরা যেনো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে, সকল মানুষ সব অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে। সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভালো জিনিসের ভালো দাম দিতে হয়। স্বস্তা জিনিস কখনোই ভালো হয় না। তাই, দেশের মঙ্গলের জন্য হয় ভালো দাম দিতে হবে। সেজন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ১১ বছর অতিবাহিত হলো এখনো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার বিচার হয়নি। ১১ বছরে ৯৫ বার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা। দেশের মানুষ সাগর-রুনী হত্যার বিচার দেখতে চায়। তিনি বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ঘাতকরা চিহ্নিত হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে। ১১ বছর অতিবাহিত হলো দেশের মানুষ জানতে পারলো না, কেন বা কারা এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ ঘটালো। সাগর-রুনী হাত্যাকান্ড কী সাংবাদিকদের জন্য সতর্কবার্তা? এতবড় হত্যান্ডের বিচার হচ্ছে না অথচ কারো যেনো জবাবদিহিতা নেই। সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের বিচারে দায়িত্বহীনতার দায় কেউ এড়াতে পারবে না। দেশের মানুষ মনে করছে, প্রভাবশালী একটি মহল সাগর-রুনী হত্যা মামলা প্রভাবিত করছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, সত্য ফাঁস হয়ে যাবে সেই ভয় থেকেই সাগর-রুনী হত্যার বিচার হচ্ছে না। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আরো সাহসী হয়ে সত্য তুলে ধরুন। সাগর-রুনী হত্যার বিচার হতেই হবে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে রাজনীতি করছি। আমরা আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চাই। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন এর পরিবর্তে এখন শিষ্টের দমন আর দুষ্টের লালন চলছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, দলবাজী, টেন্ডারবাজী প্রতিরোধ করতেই আমাদের রাজনীতি।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশের মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছে। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন আর মাংস কিনতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ মাছ কিনতেও পারবে না। নিত্যপণের দাম বৃদ্ধির কথা উঠলেই সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে। অনেক দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হচ্ছে, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে। কিন্তু সেসব দেশের মানুষকে সেদেশের সরকার নগদ টাকা সহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে রেশনিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, অথচ সামান্য কিছু টাকা ব্যয় করলেই রেশন কার্ড এর মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
তিনি বলেন, সিরিয়া-তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। বাংলাদেশও মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে। অথচ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। ঘুষের মাধ্যমে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। দুর্ণীতির কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের জীবন চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে, অথচ কারো যেনো কিছুই করার নেই।
বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ,শ্যামপুর কদমতলী থানা আয়োজিত কর্মী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল আলম রুবেল, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান, সালমা হোসেন, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন দেওয়ান, এম এ সোবহান, শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন