সরদার সিরাজ : ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার বিষয়টি এখন টক অব দি ওয়ার্ল্ড। পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের তথা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গত ২৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল সেনেগাল। এতে বলা হয়, ‘১৯৬২ সাল থেকে ইসরাইল যে বসতি নির্মাণ করেছে তার আইনি ভিত্তি নেই’। প্রস্তাবটি ১৫টি দেশের মধ্যে ১৪-০ ভোটে পাস হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন তাতে কর্ণপাত করেনি। এর আগে ফিলিস্তিনের স্বার্থের বিপক্ষের প্রতিটি প্রস্তাবেই ভেটো দিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামার ইঙ্গিতেই সেনেগাল এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোয় খবর প্রকাশিত হয়েছে। যাহোক, উক্ত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেÑ বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, জাপান, ইউক্রেন, এঙ্গোলা, মিসর, উরুগুয়ে, স্পেন, সেনেগাল ও নিউজিল্যান্ড। আর আমেরিকা ভোটদানে বিরত থাকে। নিরাপত্তা পরিষদে উক্ত প্রস্তাব পাস হওয়ার পরপরই জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। পতাকাটি পত্পত্ করে উড়ছে, যা বিশ্বের সব মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাও করে দেখানোও হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মহাক্ষিপ্ত হয়ে যে ১৪টি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের সাথে সম্পর্ক সাময়িক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এমনকি জাতিসংঘের সাথেও। উপরন্তু তিনি ২৫ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সভায় বলেছেন, ‘তারা আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চায়। ইউরোপ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। চীন এবং রাশিয়াও তাতে শামিল হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হয়তো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও নিরাপত্তা পরিষদে পাস করিয়ে নিতে পারেন।’
সর্বশেষ তথ্য মতে, নেতানিয়াহু বৃটেনের সাথেও সম্পর্ক ত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের সমর্থন মানে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’। অপরদিকে, এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান প্রশাসন ও নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে রীতিমতো তর্ক যুদ্ধ বেঁধে গেছে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে ক্ষমতায় বসেই জাতিসংঘের সংস্কার করব’। এতে প্রতীয়মান হয়, নিরাপত্তা পরিষদে পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, সেটা তিনি প্রত্যাখ্যান করতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে, বর্তমান প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এ নিয়ে তিনি আগামী ১৫ জানুয়ারি প্যারিসে আন্তর্র্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। তার অভিমত হচ্ছে : ‘অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখ-ে ইসরাইল বসতি স্থাপন বন্ধ ও ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী পূর্ণ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন। অর্থাৎ দ্বিরাষ্ট্র। অথবা একরাষ্ট্র। কিন্তু সেটা হতে হবে ইহুদি রাষ্ট্র কিংবা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে একবার একরাষ্ট্র করার কথা উঠেছিল। তখন মরহুম ইয়াসির আরাফাত সেটা মেনে নিতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু ইসরাইল রাজি হয়নি। কারণ ইসরাইলের মোট জনসংখ্যার ২৫% আরব। তাদের প্রজননহার অত্যধিক। তাই ভবিষ্যতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে এবং ক্ষমতাসীন হয়ে মুসলিম স্বার্থ রক্ষা করবে আর ইহুদি স্বার্থ উপেক্ষিত হবে- এ আশঙ্কায় ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ রাজি হয়নি। যাহোক, জন কেরি বলেছেন, ‘ইসরাইল ও ফিলিস্তিন তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রে বসবাস করবে। এ বিষয়টি ইসরাইল মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা কখনই আরবদের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারবে না’।
অন্যদিকে, মার্কিন সহকারী নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস ইসরাইলের চ্যানেল-২ টেলিভিশনকে বলেন, ‘স্বায়ত্তশাসিত ফিলিস্তিনকে পূর্ণ স্বাধীন করার জন্য এ পর্যন্ত ১৩৭টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘও এটা চায়’। কিন্তু দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির ঘোর বিরোধী নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই তিনি জেরুলালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইসরাইলে একজন কট্টরপন্থি রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছেন। তবুও মি. কেরির তৎপরতায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ভীত হয়ে পড়েছেন। কারণ কেরির প্রস্তাব গৃহীত হলে ওবামা প্রশাসন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়-ই মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আসতে পারে। আর এর সমন্বয় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, রশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। তাই গত ২৮ ডিসেম্বর ইসরাইলি পার্লামেন্টে ৪৯২টি বাড়ি নির্মাণের অনুমতি প্রদানের বিলের ওপর ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। সর্বশেষ তথ্য মতে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল প্রশ্নে ‘ওবামা-ট্রাম্প’ বিরোধের অবসান হয়েছে গত ২৯ ডিসেম্বর, উভয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে। কিন্তু কি নিয়ে তাদের মধ্যে আপস হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে এটা ঠিক, ডেমোক্র্যাটরা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে সবসময়ই। কারণ এ দলের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় এ নিয়ে চুক্তি করেছিলেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ২৯ ডিসেম্বর এক দীর্ঘ ভাষণে বলেন, ‘ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুই রাষ্ট্র হিসেবে পাশাপাশি অবস্থানের নীতি মেনে না নিলে আরব বিশ্বে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে, ইসরাইল তার অধিকৃত ভূখ-ে বসতি নির্মাণের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রচেষ্টা অসম্ভব হয়ে পড়েছে’। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ৫০ লাখ ফিলিস্তিন দেশে ফেরার অধিকার রাখেন। জেরুজালেম কেবল ইসরাইলেরই রাজধানী নয়, এটা ফিলিস্তিনেরও রাজধানী, তা মেনে নিতে হবে ইসরাইলকে।’ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কেরির এই ভাষণের পরপরই বলেন, ‘ইসরাইল বসতি নির্মাণের সমস্ত পদক্ষেপ বন্ধ করলেই কেবল আলোচনা চলতে পারে’।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্রে ইহুদিদের বসতি ও ইসরাইল রাষ্ট্র স্থাপন করে দেয় রাশিয়া, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি দেশ। জেরুজালেম হচ্ছে মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় তীর্থস্থান। কারণ মুসলমানদের সর্বপ্রথম মসজিদ আল আকসা, যিশুর জন্মস্থান আর ইহুদিদের টেম্পল মাউন্ট সেখানে অবস্থিত এবং প্রত্যেকটিই খুবই পাশাপাশি। তাই ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ প্রস্তাব গ্রহণ করে, ‘জেরুজালেমকে একটি আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদায় রেখে একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক প্রশাসনের অধীনে পরিচালনা করার’। যাহোক, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তায় মহাশক্তিশালী হয়ে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমনকি, ১৯৬৭ সালে যুদ্ধও সংঘটিত হয়। ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল তার সীমান্ত সংলগ্ন সব দেশের বিশাল অঞ্চল দখল করে নেয়, যা আজও অব্যাহত আছে। আর এ নিয়েও ওই অঞ্চলে মাঝে-মধ্যেই প্রচ- বাক-বিত-া, এমনকি খ- যুদ্ধ পর্যন্ত সংঘটিত হয়। এমতাবস্থায় ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী (পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হন) শিমন প্যারেজ শান্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেন (সে কারণে তিনি নোবেল পুরস্কার পান)। তার এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ১৯৯৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে দুই দেশের এক বৈঠকের আয়োজন করেন। তাতে ফিলিস্তিনের পিএলও প্রধান এবং ফিলিস্তিনিদের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন। বৈঠকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন শান্তি চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক গাজা ও জেরিকো অঞ্চল নিয়ে ফিলিস্তিন স্বায়ত্ত শাসন পায়। পরবর্তীতে পশ্চিম তীরের হেরবন ও আরো কিছু এলাকা সম্পৃক্ত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। চুক্তিতে ইয়াসির আরাফাত, ইহুদ বারাক ও ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন (এ জন্য এই তিনজনকেই নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়)। এই চুক্তিকে মুসলিম দেশসহ বহু দেশ সমর্থন জানায়। অপরদিকে, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এক ‘রোডম্যাপ’ বা শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০০৫ সাল থেকে ফিলিস্তিন পূর্ণ স্বাধীন এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিতে হবে ইসরাইলকে। যাহোক ওই চুক্তির পরপরই ফিলিস্তিনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ইয়াসির আরাফাত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু ইসরাইলের কট্টরপন্থি ইহুদিরা এই শান্তি চুক্তি ও রোডম্যাপ প্রত্যাখ্যান করে। উপরন্তু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাককে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া চরম কট্টরপন্থি নেতা ও জেনিন হত্যাকা-ের নায়ক জেনারেল আইজ্যাক শ্যারন জেরুজালেম ইসরাইলের অংশ প্রমাণ করার জন্য সেখানে গমন করেন। ফলে কট্টরপন্থি ইহুদিদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এরপর তিনি জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর উভয় দেশের মধ্যে পুনরায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফিলিস্তিন এলাকায় শুরু হয় ইন্তিফাদা বা গণআন্দোলন। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থি সংগঠন- হামাস। হামাস ইসরাইলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। ভয়াবহ সহিংসতায় উভয় পক্ষের ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়। তবে ফিলিস্তিনিদেরই বেশি। উপরন্তু ইসরাইল ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। একপর্যায়ে ইসরাইল একনাগারে অনেক দিন পিএলওর সদর দপ্তর ও আরাফাতের বাসভবনে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। উদ্দেশ্য আরাফাত ও তার পরিবারের সকলকে হত্যা এবং পিএলওর সদর দপ্তর ধ্বংস করা। কিন্তু পরম করুণাময়ের অশেষ মেহেরবাণীতে তারা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু অফিস সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এর কিছু দিন পর আরাফাত চরম অসুস্থ হয়ে পড়লে ফ্রান্সের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়, তার শরীরে ‘শ্লো পয়জন’ দেয়া হয়েছিল। এটা ইসরাইলের ষড়যন্ত্রেই হয়েছে বলে তার স্ত্রী দাবি করেন। অপরদিকে, কট্টরপন্থি ইহুদিদের কারণেই শান্তি চুক্তি মোতাবেক ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হতে ফিলিস্তিন পূর্ণ স্বাধীন হতে পারেনি। অথচ ১৩ মার্চ, ২০০২ সালে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিনকে পূর্ণ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর জাতিসংঘ বহুবার ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু ইসরাইল কোনোটিই মানেনি আমেরিকার প্রত্যক্ষ ইন্ধনে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র কয়েকবার জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তে ভেটো প্রয়োগ করে অতি নির্লজ্জভাবে। সে কারণেই ইসরাইল ওই সমগ্র এলাকায় ব্যাপক আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। তাই যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘সত্যিকার হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। কারণ ইসরাইলের কারণেই বিশ্বের অতি পুরাতন সমস্যাটির সমাধান হচ্ছে না।
যাহোক, ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতাকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ এবং বৃহৎ দেশগুলোসহ মোট ১৩৭টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই আগামী ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ প্যারিসে আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে এটার চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাবে বলে অনুমেয়। তাহলে ওই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জটিল বিষয়ে সমাধান হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ লাখ লাখ ফিলিস্তিনি কয়েকটি দেশে শরণার্থী হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তারা স্বদেশে ফেরত এসে শান্তিময় জীবনযাপন করতে পারবেন স্বাধীন জন্মভূমিতে। এ ছাড়া, দেশটির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার অবসান ঘটে উন্নতি ও শান্তির পথে ধাবিত হবে ইন শাল্লাহ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকতেই যদি ফিলিস্তিনিরা পূর্ণস্বাধীনতা না পায়, তাহলে প্রচ- ইসলামবিরোধী ও ইহুদিবান্ধব ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে নিঃসন্দেহে। কারণ, তিনি ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী। তাই সমগ্র মুসলিম দেশ, ওআইসি, বিশ্বের শান্তি ও স্বাধীনতাকামী সব দেশ এবং জাতিসংঘের উচিত আগামী ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনেই বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা করে নিতে তৎপর হওয়া।
য় লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন