শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

জরুরি অবস্থার এক দশক : একটি পর্যালোচনা

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন : ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথ চলায় যে একটি বড় ধরনের হোঁচট ছিল সে বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। ১৯৯০-এ সামরিক শাসক এরশাদের পতনের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রের যে বিজয় সূচিত হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালের সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে যে গণতন্ত্রের পথ চলা শুরু হয়েছিল তা বাধাগ্রস্ত হয় জরুরি অবস্থার কারণে। কেন এবং কী পরিস্থিতিতে সেদিন জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল তা পুনরুল্লেখ করা বাহুল্য মনে করছি। কেননা, এদেশের সবাই তা প্রত্যক্ষ করেছেন, ফল ভোগ করেছেন এবং সে সাথে এ সত্যটিও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে করা ছোট-খাটো রাজনৈতিক ভুল দল ও দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অস্বীকার করা যাবে না, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণেই জরুরি অবস্থা কায়েম হয়েছিল। বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিচারপতি এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে মেনে নিতে আওয়ামী লীগের অস্বীকৃতি এবং দাবি আদায়ে তাদের জঙ্গি আন্দোলন পরিস্থিতিকে করে তুলেছিল ভয়াবহ। সমঝোতার জন্য দুই দলের তৎকালীন মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদকের ম্যারাথন বৈঠক যখন ব্যর্থ হলো, দেশের রাজনৈতিক আকাশে কালবৈশাখীর মেঘ তখনই জমাট বেঁধে উঠলো। আর তারই প্রেক্ষাপটে চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়লগ্নে ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সংঘটিত হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। ঢাকার পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের হাতে জামায়াতের সাতজন কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য যারা টিভি পর্দায় দেখেছেন, আঁৎকে উঠেছেন! মানুষ মানুষকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের ওপর নাচতে পারে এমন ভয়ংকর দৃশ্য কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। লক্ষণীয় হলো, তখনও রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল চারদলীয় জোট সরকার কিন্তু আওয়ামী লীগের সে লগি-বৈঠার সন্ত্রাস মোকাবিলায় তারা কিছুই করতে পারেনি। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাত গুটিয়ে বসেছিল, আর বিএনপিও রাজপথে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে নামেনি। ফলে ওই দিন গোটা দেশ চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। অবশ্য অনেকে বলেন যে, ওইদিন বিএনপি আওয়ামী লীগের মুখোমুখি না হয়ে বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। তারাও যদি মাঠে নামতো তাহলে আরো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী ও অদূরদর্শিতা যে কতোটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সে সময় দুই পক্ষ যদি সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতো, যদি বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে পথ খোঁজার জন্য ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পরস্পরের দিকে এগিয়ে যেতো, তাহলে এদেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় ‘জরুরি’ অবস্থার ছেদ পড়তো না। তারা স্ব স্ব অবস্থানে অনড় থাকায় সমস্যা নিরসনের পরিবর্তে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়ে শেষ পর্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছিল। ওই সময়কার ঘটনাবলী খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সে সময় মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হলেও অবস্থানগত কারণেই তা ব্যক্ত করার উপায় ছিল না। তাছাড়া আজ দশ বছর পর সেসব ঘটনাবলীকে সামনে রেখে চিন্তার দরজা খুলে দিলে অনেক কিছুই নতুন করে ধরা দেয়। তবে, এখনো বাস্তবতার কারেণই সবিস্তারে সবকিছু বলার সুযোগ নেই।
একটি কথা অবশ্য ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হয়েছে যে, পৃথিবীতে, বিশেষত বাংলাদেশে, যে কোনো রাজনৈতিক দুর্যোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের ভুলেই সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থা জারির পেছনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক উগ্রতা এবং বিএনপি’র সঠিক পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতাজনিত ভুল সমান দায়ী। অবশ্য ফখরুদ্দীন আহমদের শপথ অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই জরুরি অবস্থাকে তাদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছিলেন। তার এ যৌক্তিক দাবিকে কেউ অস্বীকার করেনি এখন পর্যন্ত।
আমাদের দেশের একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো, কোনো একটি দল একবার রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সেখান থেকে আর সরে আসতে চায় না। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার এই যে মানসিকতা, তাই পরবর্তীতে সর্বনাশের সোপান তৈরি করে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, জনগণের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন আস্থা নেই। তাই জনরায়কে পক্ষে নেয়ার জন্য রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মকা-ের চাইতে কূটকৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
২০০৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নিতে অস্বীকার করলো এবং তৎপ্রেক্ষিতে কে এম হাসান ওই পদে অধিষ্ঠিত হতে অস্বীকার করলেন, তখন সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে ভুল করেছিল বিএনপি। সংবিধান অনুযায়ী তার আগের সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা। কিন্তু মৃত্যুজনিত কারণে সেটা সম্ভব ছিল না। ফলে এক জটিল পরিস্থতি সৃষ্টি হয়। সে সময় রাষ্ট্রপতি যদি সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করতেন, তাহলে হয়তো বা পরিস্থিতি খারাপের দিকে গড়াত না। তা না করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের প্রধান উপদেষ্টার পদে আরোহণ সমঝোতার পথে নতুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। যদিও প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ এর তীব্র বিরোধিতা না করে ‘কর্মকা-’ দেখে সিদ্ধান্তের কথা বলেছিল। কিন্তু ওটা ছিল তাদের রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ। পরবর্তীতে তারা এতোটাই অনড় হয়ে পড়ে যে, উপদেষ্টারা দু’পক্ষের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করেও ‘সুরঙ্গের শেষ প্রান্তে’ কোনো আলোর রেখা দেখতে পাননি শেষ পর্যন্ত।
এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সে কৌশলটি অবলম্বন করেছিল তা ছিল খুবই চাতুর্যপূর্ণ। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজের দীর্ঘ মেয়াদী ছুটিতে যাওয়াকে আংশিক বিজয় বলে নির্বাচন মনোনয়নপত্র দাখিলও করে। তবে, তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী দৌড়ে থাকবে কীনা তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। অনেকরই ধারণা ছিল সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবে। তাতে সরকার বেকায়দায় পড়বে এবং নির্বাচন অনিশ্চিত হবে। আওয়ামী লীগের হিসাব ছিল- যদি তাদেরকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হয়, তাহলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পরবর্তীতে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি সরকারকে গদিচ্যুত করা যাবে। আওয়ামী লীগের এমন চিন্তাভাবনার মাধ্যেই তাদের সামনে সুযোগ এসে যায়। আদালতের রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার পর পরই আওয়ামী লীগ একযোগে তাদের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে নির্বাচনী মাঠে কার্যত একা বিএনপি অবস্থান করে এবং দেশে ১৯৮৮’র মার্চ, ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা শক্তি ১১ জানুয়ারি ক্ষমতার পাদপ্রদীপের নিচে চলে আসে। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং নির্বাচন স্থগিত করিয়ে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত্ব করে নেয়।
আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র শিবিরে তখন আনন্দের জোয়ার। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, এলডিপির দুই শীর্ষ নেতা ডা. বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলি আহমদ (অব.) সহ অন্যান্যদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি টিভি পর্দায় অনেকেই দেখেছেন। তাদের সে আনন্দের যৌক্তিক কারণও ছিল। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে তাদের বিজয় হয়েছে, একই সাথে বিএনপিকেও এক হাত দেখে নেয়া গেল- এক যাত্রায় দুই ফল একসাথে পেয়ে তাদের আনন্দ যদি বাঁধ ভাঙা হয়ে উঠে তো দোষ দেয়া যায় না।
কিন্তু আওয়ামী লীগও বুঝতে পারেনি ঘটনা কোন দিকে গড়াবে। তারা ভেবেছিল নির্বাচন স্থগিত করে নতুন সরকার হয়তো অচিরেই এমনভাবে নির্বাচন দেবে যাতে তারা (আ’লীগ) সহজেই ক্ষমতায় যেতে পারবে। মূলত সেই জন্যই দলটির সভানেত্রী সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন- ‘এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।’ তাছাড়া তিনি এটাও বলেছিলেন যে, তারা ক্ষমতায় গেলে জরুরি অবস্থা’র সরকারের সব কর্মকা- বৈধ করে দেবেন। মূলত জরুরি অবস্থার সরকারের কৃপা দৃষ্টি লাভ এবং নির্বাচনে সুবিধা আদায়ই যে তাঁর এসব কথার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেটা বুঝতে কারো বাকি থাকেনি। আওয়ামী লীগ আরো আনন্দিত হয়েছিল ‘জরুরি সরকার’ কর্তৃক বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনায়। প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে তারা সেসব গ্রেফতারকে অভিনন্দনও জানিয়েছিল। বিশেষ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (তৎকালীন) তারেক রহমানের গ্রেফতারের পর আওয়ামী শিবিরের উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা ধরেই নিয়েছিল যে, এভাবে বিএনপি নেতাদের কারাগারে ঢুকিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ আওয়ামী লীগের একার দখলে দিয়ে দেবে ফখরুদ্দীন-মইন উ সরকার। অবশ্য তাদের সে ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম, মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের যখন একইভাবে গ্রেফতার করা হলো, তখনই তারা বুঝতে পারলেন কাল বৈশাখী ঝড় সবার ঘরেই ধক্কা দেয়। তখনই তারা উপলব্ধি করতে পারলেন বিএনপিকে শুধু নয়, আওয়ামী লীগকেও মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে জরুরি অবস্থার কুশীলবরা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়। পরবর্তীতে দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর গ্রেফতার, তাদের দলের মধ্যে সংস্কারপন্থী সৃষ্টি করে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ফখরুদ্দীন-মইন উ’র সরকারের আসল রূপটা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। ২০০৭ থেকে ২০০৮ জরুরি অবস্থার সরকার যেসব কর্মকা- করেছে, বিশেষত দেশের রাজনীতিকে কবজা করার জন্য, সেসব বর্ণনা এখানে দেয়া দরকার মনে করছি না। ঘটনাগুলো এতোটাই সাম্প্রতিক যে, এখনো সবার স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করছে বলেই আমার মনে হয়।
যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে মইন উ গং দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তগত করতে তৎপর হয়েছিল তা সফল হয়নি। হয়নি এ জন্য যে, বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে গ্রহণ করেনি। প্রথমদিকে দুর্নীতিবিরোধী মুখরোচক কথা বলে জনসাধারণের একটি অংশকে তারা বিভ্রান্ত করে কিছুটা সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হলেও পরিণামে তারা ব্যর্থ হয়েছে। জনসমর্থন আদায় করতে না পারলে রাষ্ট্রক্ষমতা যে সোনার হরিণই থেকে যায়, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি হিরো হতে আসা জেনারেল মইন উ আহমেদ তার উদাহরণ। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা হলো, দুই নেত্রীকে কেন্দ্র করেই এখানে রাজনীতি আবর্তিত। একজনের ব্যর্থতা অপরজনের ভাগ্যের দ্বার খুলে দেয়। এখানে ভিন্ন দ্বার দিয়ে কারো ঢুকে পড়ার সুযোগ এখনো তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না।
মাত্র দু’বছর থাকতে পেরেছিল ফখরুদ্দিন-মইন উ আহমেদের সরকার। এক পর্যায়ে এসে তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিতে তৎপর হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে তারা যাদের ওপর আস্থা রাখতে পেরেছিল, নানা কূটকৌশল আর ফন্দি ফিকির করে একটি নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যায়। এক্ষেত্রে ‘আমরা ক্ষমতায় গেলে এ সরকারের সব কাজ বৈধ করে দেব’- আওয়ামী লীগ নেত্রীর এ আশ্বাসবাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পক্ষান্তরে বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং তার দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের-‘ক্ষমতায় গেলে এদের (জরুরি সরকার) উপযুক্ত বিচার করা হবে’- এ ধরনের হুমকি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ফখরুদ্দীন সরকার বা জরুরি অবস্থা জারির হোতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন ছিল বিএনপির মারাত্মক ভুল। মাঠে খেলতে নেমে যদি কোনো টিম ঘোষণা দেয় যে, জিততে পারলে খেলা শেষে আম্পায়ারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটাবো, সে টিম যে ম্যাচে নির্ঘাৎ হারবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আম্পায়ার পুরো খেলায় হুমকি দাতা টিমের কাউকে এলবিডব্লিউ, কাউকে বোল্ড আউট বানিয়ে যে সাজঘরে পাঠাবে তা বলাই বাহুল্য। তেমনি ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আম্পায়াররূপী ফখরুদ্দীন-মইন উ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে হুমকি দিয়ে বিএনপি নিজেদের সাজ ঘরে ফেরার রাস্তাটা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছিল।
যে কোনো ঘটনা একটা না একটা শিক্ষণীয় বিষয় রেখে যায়। প্রশ্ন উঠেছে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির জরুরি অবস্থা এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলী যে শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছে, তা কি আমাদের রাজনৈতিক দল তথা শীর্ষ নেতৃত্ব অনুধাবন করতে পেরেছেন? ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা কিংবা ক্ষমতায় আরোহণের উদগ্র মানসকিতা থেকে কি তারা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন? রাজনীতির বর্তমান দৃশ্যত শান্ত পরিবেশ অথবা কোনো পক্ষের আপাত অক্ষমতা হয়তো কাউকে কাউকে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তাই বলে নিস্তরঙ্গ নদীতে যে হঠাৎ ঝড় উঠবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? আর সে জন্য জ্ঞানী ব্যক্তিরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে পা ফেলতে উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমরা সে উপদেশকে পাত্তা দেই না। অথচ সেটাই হওয়া উচিত সামনে যাওয়ার মূল দর্শন। কারণ তাতে একই ভুল পুনর্বার করার আশঙ্কা থাকে না।
য় লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন