শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

প্যানাসাইন ও পোস্টারের ঢাকা পড়েছে খুলনার সৌন্দর্য

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : রাজনৈতিক নেতাদের শুভেচ্ছা-সংবলিত প্যানাসাইন ও পোস্টার ছেয়ে আছে খুলনা শহর। দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য্য, সৌন্দর্যবর্ধন স্থাপনা, সড়ক বিভাজক ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর ও মোড়ে এসব বিজ্ঞাপন সামগ্রীতে ঢাকা পড়েছে নগরীর সৌন্দর্য। কেসিসির অনুমতি না নিয়েই আওয়ামী লীগের একজন নেতা কয়েকটি স্থানে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করেছেন তোরণ; যাতে বিশেষ দিবস ও দলীয় শীর্ষ নেতাদের শুভেচ্ছা বার্তায় পরিবর্তন হয় প্যানাসাইন। সরকারি দফতরেও এখন ক্ষমতাসীনদের পোস্টার-প্যানায় কোণঠাসা ‘সিটিজেন চার্টার’ও। এসব স্পর্শকাতর ছবি তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে যা অপসারণ করতেও বিব্রত দফতরের শীর্ষ কর্তারাও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কয়েকবার প্যানা-পোস্টার ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিবৃতি দিলেও মানছেন নেতাকর্মীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত জিরো পয়েন্টের কবি কাজী নজরুল ইসলাম চত্বর থেকে শুরু করে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন স্থান ময়লাপোতা, রয়েল চত্বর, শিববাড়ি মোড়, শহীদ হাদিস পার্ক, নতুন রাস্তার মোড়, দৌলতপুর, শিরোমনিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্যানা-সাইন, ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ভরা। এ ছাড়া কেডিএ সড়ক, পুরাতন লোয়ার যশোর রোড, রূপসা ঘাট, পিটিআই মোড়, বিভিন্ন কলেজের সামনে, মজিদ সরণি, সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনালসহ ছোট-বড় সড়কের দু’পাশে ও সড়ক বিভাজনেও রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অগণিত প্যানাসাইন। নগরীর এমন কোনো সড়ক নেই যে সড়কে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা প্যানা টানানো নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ-একবার টানিয়েই যেনো স্থানটি তিনি দখল করে নেন। আর নির্ধারিত উৎসব/অনুষ্ঠান বা শুভেচ্ছান্তের মেয়াদ শেষ হলেও নামানো হয় না প্যানাটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তির ছবি থাকায় অন্য কেউ অপসারণ করতেও বিব্রতবোধ করেন। এসব ব্যানারে কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এমপি, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, বিসিবির পরিচালক শেখ সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনার রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদি সুজা, নগর যুবলীগের আহŸায়ক অ্যাড. আনিসুর রহমান পপলু, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সাইফুল ইসলামের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগর লবীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে প্যানা-ব্যানার, পোস্টার রয়েছে। খুলনা নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কয়েকবার নেতাদের ছবি ব্যবহারের ওপর নিষেধজ্ঞা উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞাও কোনো কাজে আসেনি।
একাধিক পদচারী অভিযোগের সুরে বলেন, শিববাড়ী চত্বর, ময়লাপোতা, নতুনরাস্তা মোড় এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাষ্কর্য রয়েছে। স্বাধীনতার স্বপক্ষে দলের নেতাকর্মীদের ব্যানারে ঢেকে যাচ্ছে কেন তা? এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে খুলনা। হারাচ্ছে নিজস্বতা।
গত ১২ জানুয়ারি বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত খুলনা শহরের সড়ক প্রশস্তকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও যানজট নিরসনে বিভাগীয় পর্যায়ের সকল দফতর প্রধানদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভায় সভাপত্বি করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ। তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে মংলা বন্দর কাস্টমস কমিশনার ড. আল আমিন প্রামাণিক বলেন, ‘শুধু খুলনা শহরে নয়; সরকারি দফতরগুলোতে প্যানাসাইনের ঠেলায় অফিসের নাম ঢাকা পড়ছে। এমন সব রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর ব্যক্তির ছবি তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অপসারণও করতে পারছি না। অবিলম্বে সরকারি দফতরসমূহে সিটিজেন চার্টার ও দাফতরিক সাইনবোর্ড ব্যতীত অন্য ব্যানার অপসারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ বলেন, দেশের কোথাও এতো পরিমাণে প্যানা-সাইন টানাতে আমি দেখিনি। খুলনা আপনার-আমার শহর। একে পরিষ্কার-পরিছন্ন ও সৌন্দর্যপূর্ণ বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। তিনি সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমানকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের এ থেকে বিরত রাখার আহŸান জানান।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘খুলনা মহানগরীসহ উপজেলায় বিনা অনুমতিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হেলাল এমপি, শেখ সোহেল, সজিব ওয়াজেদ জয়সহ খুলনার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ছবি ব্যবহার না করতে পত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে কয়েকবার নেতাকর্মীদের সাবধান করেছি। বিবৃতিতে বলেছি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিকে একেবারেই ছোট করে প্যানার এক কোণায় স্থাপন করা হয়। যা জাতীয় নেতৃবৃন্দের জন্য অত্যন্ত সম্মানহানীকর এবং দেশের জনগণের কাছে দৃষ্টিকটু বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সিটি করপোরেশনকে বলবÑ শহরের সৌন্দর্য বজায় রাখতে মাঝেমধ্যে ওগুলো অপসারণ করতে।’ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ওই নির্দেশ অমান্য করে কেউ প্যাসাসাইন টানালে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও খুলনাতে সে উদহারণ সৃষ্টি হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন