শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

উচ্ছেদের পরেই দখল

বিক্ষোভের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দিনের বেলায় ফুটপাতে হকার বসা বন্ধ করতে টানা দ্বিতীয় দিনের মত রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এদিকে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রটরা কর্পোরেশনে ফিরে যাওয়ার সাথে সাথেই দোকান নিয়ে বসে গেছে হকাররা। হকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে সিটি কপোরেশনের এ উচ্ছেদ অভিযান তারা মানে না।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে সিটি কর্পোরেশনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযান চলার সময় বিক্ষুব্ধ হকাররা মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এছাড়া যুবলীগের একটি কার্যালয় ভাঙতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। অভিযানের সময় গুলিস্তান ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান চললেও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পর হকারদের আবারও পূর্বেরমত ফুটপাতে মালামাল নিয়ে বসতে দেখা গেছে।
মতিঝিলে আমিনুল নামে এক হকার বলেন, সিটি কর্পোরেশন আমাদের পেটে লাথি মারছে। সরকার এবং সিটি কর্পোরেশন তো শুধু বসে বসে নিয়ম তৈরি করে। তারা তো আমাদের ব্যবসা করার কোনো ক্ষেত্র তৈরি করছে না।
এদিকে যতোদিন ফুটপাতের রাস্তা হকার মুক্ত না হবে ততোদিন অভিযান চলবে বলে জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় গুলিস্তান মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, বঙ্গবন্ধু পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অবশ্য আগের দিনের উচ্ছেদের পর মেয়র সাঈদ খোকন অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ায় ফুটপাতের মালামাল আগেই সরিয়ে নিয়ে যায় বেশিরভাগ দোকানদার।
অভিযানের সময় ফুটপাতে থাকা হকারদের মালামাল রাখার চৌকি ভেঙে দেয়া হয়। এছাড়া ফুটপাতে গড়ে তোলা কয়েকটি পাকা স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয় সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযানের সময় উপস্থিত ছিল সাত প্লাটুন পুলিশ। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার, পে-লোডারসহ ১৫টি বাহন উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশ নেয়। অভিযান চলাকালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ হকার গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গুলিস্তান মার্কেট এবং গুলিস্তান প্লাজা মার্কেটের সামনের ফুটপাতে গড়ে তোলা ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের গুলিস্তান ইউনিটের কার্যালয় ভাঙতে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দেয়। সিটি কর্পোরেশন ও মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতেও শোনা যায় কয়েকজনকে। পরে ওই কার্যালয়ের একপাশের বেড়া ভেঙ্গে দিয়ে আসে কর্পোরেশনের বুলডোজার। এসময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাতের ওপর থাকা বিআরটিসির একটি ভলভো বাসের কাউন্টারও ভেঙে দেওয়া হয়।
হকার্স ইউনিয়নের অবস্থান ধর্মঘট
এদিকে পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে নগরভবন ঘেরাও করতে যায় বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়ন। তবে পুলিশি বাধায় তার নগর ভবনের কাছ ঘেঁষতে পারেনি। বঙ্গবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান।
হকারদের বিক্ষোভের আগেই গোলাপশাহ মাজার থেকে বঙ্গবাজার মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বেলা পৌনে ১টার দিকে হকারদের একটি দল মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ না করা, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, হকারদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ এবং প্রকৃত হকারদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দেয়াসহ ১০ দফা দাবির কথা স্মারকলিপিতে তুলে ধরেন তারা। হকার্স ইউনিয়নের নেতারা পরে মেয়রের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকও করেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা সেকেন্দার হায়াত বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। তিনি আমাদের কথা না শুনে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন।
আমরা বলেছি, হকারদের উঠিয়ে দিলে তাদের যাওয়ার জায়গা থাকবে না। সিটি কর্পোরেশন যেন তাদের অবস্থান পাল্টায় সে ব্যাপারে অনুরোধ করেছি। আমরা বলেছি, রাস্তায় যেন যানজট না হয়, রাস্তাঘাট যেন পরিচ্ছন্ন থাকে সে দায়িত্ব হকাররা নেবে। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনেননি। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।
হকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত ও রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। এই শহর বিশৃঙ্খলভাবে চলতে পারে না। আমাদের আরও কিছু কর্মসূচি আছে, যেগুলো আমরা করব। আপাতত হকার উচ্ছেদ করে রাস্তা পরিষ্কার করব। যারা আজ স্মারকলিপি দিয়েছেন, তাদের আহŸান জানাই, জনগণের স্বার্থে সবাই এ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে জনগণের ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করে দেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে অনেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। রাজনৈতিক নামধারী গুটিকয়েক লোক যদি কোনোধরনের অবৈধ স্থাপনা করে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, জনগণের চলাচল নির্বিঘœ করতে কর্পোরেশেন যেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।
সেখানে কে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য, কে কোন অঙ্গসংগঠনের সদস্য, কার কোথায় কোন অফিস রয়েছে সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন