শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শুরু হচ্ছে ট্রাম্পের যুগ বিশ^ব্যাপী অনিশ্চয়তা

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : জার্মানরা ক্ষুব্ধ। চীনারা খুব ক্ষেপেছে। ন্যাটোর নেতারা উদ্বিগ্ন, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে তাদের সহযোগীরা শঙ্কিত।
ট্রাম্পের যুগ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার ক’দিন আগে ভাবি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাকি বিশ্বের জন্য আবার তার সেই অনির্দেশ্য বিচ্ছিন্নতার প্রবণতাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন।  তার অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য ও কোনো কোনো সময় সবিরোধী সাক্ষাৎকারগুলো চীনের সাথে যেমন উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও পাশ্চাত্যে আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বের সমালোচক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষিপ্ত করেছে।  
কেউ জানে না আসলে তিনি কোনদিকে যাচ্ছেন শুধু এটা ছাড়া যে অন্তত এখনকার মতো তিনি রাশিয়া ও তার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচনা করছেন না এবং তিনি হচ্ছেন ব্রেক্সিট ও জোটহীন ব্রিটেনের একজন অনুসন্ধিৎসু চেয়ারলিডার।
ট্রাম্পের আনপ্রেডিক্টেবিলিটি হচ্ছে সম্ভবত তার সর্বাধিক প্রেডিক্টেবল বৈশিষ্ট্য। বিশ^ তার উসকানিমূলক টুইটার বার্তার ব্যাপারে অভ্যস্ত। কিন্তু তার মন্তব্য অর্থবহ নতুন নীতি নির্দেশনা, ব্যক্তিগত বিবেচনা কি না বা তার খেয়ালখুশির পরিচয় কি না তা তত স্পষ্ট নয়। এসব সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মূলত জার্মানির আজ্ঞাবহ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এ জোট সম্ভবত অন্য দেশগুলোকে ব্রিটেনের উদাহরণ অনুসরণ করতে ও জোট ত্যাগের জন্য ভোট দিতে দেখবে।  
ট্রাম্প এ কথাও বলেন যে, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ইউরোপে উদ্বাস্তুদের প্রবেশ করতে দিয়ে বিপর্যয়কর ভুল করেছেন।
ব্রিটেন ও জার্মানিতে ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত যৌথ সাক্ষাৎকারে উত্তেজনাকর মন্তব্য ইউরোপে শঙ্কা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অ্যাঞ্জেলা মার্কেল নিরাসক্তভাবে ট্রাম্পের অবস্থানকে নতুন কিছু নয় আখ্যায়িত করেন। মার্কেল সোমবার বার্র্লিনে বলেন, সেগুলো কিছু সময়ের জন্য হলেও জানা, আমার অবস্থানও জানা। তিনি বলেন, ইউরোপীয় হিসেবে আমাদের নিয়তি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
ট্রাম্পের মন্তব্যের কি ব্যাখা হবে এবং কিভাবে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হবে তা নিয়ে যখন বিশ্লেষক ও কর্মকর্তারা গলদঘর্ম সে সময়ই মার্কেলের কাছ থেকে এ জবাব এলো।
কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ট্রাম্পের এসব মন্তব্য কৌশলগত হিসেবেই গণ্য করতে হবে যার উদ্দেশ্য তার করণীয় উন্মুক্ত রাখা। কিন্তু প্রায় সকলেই একমত যে, বিশেষ করে ইউরোপে স্থিতিশীলতার এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং এ বছরের শেষদিকে পুনর্নির্বাচনে তার প্রচারণার প্রেক্ষিতে মার্কেলের সমালোচনা করে ট্রাম্প ঝামেলার সৃষ্টি করছেন।
ট্রাম্প শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এক সাক্ষাৎকারে চীনের এক চীন নীতির ব্যাপারে আবার প্রশ্ন তুলে চীনকে বিক্ষুব্ধ করেছেন। চীনের নীতিতে তাইওয়ান মূল ভূখ-ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিলা মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেন যে, কেউ তাইওয়ানের মর্যাদাকে আলোচনার বিষয় করার চেষ্টা করলে তা হবে পাথরের আঘাতে নিজের পা ভেঙে ফেলা এবং সে চীনা সরকার ও জনগণের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও ব্যাপক ও প্রচ- বিরোধিতার সম্মুখীন হবে। তিনি বলেন, বিশে^র সবকিছু নিয়েই দরদাম বা ব্যবসা করা যায় না।
চীনের ইংরেজি দৈনিক চায়না ডেইলি সোমবার ট্রাম্পকে আগুন নিয়ে খেলার জন্য অভিযুক্ত করে বলে, ট্রাম্প পত্রিকাটিকে যেমন বলেছেন সে রকম তাইওয়ানকে যদি আপস-আলোচনার বিষয় করা হয় তাহলে চীনের জন্য জবাব দেয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার ইউরোপে তাকে সবচেয়ে গোলযোগপূর্ণ বিষয়গুলোর মাঝখানে স্থাপন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মান প্রাধান্যের ব্যাপারে তার সমালোচনামূলক মন্তব্যকে কোনো অভিনব চিন্তা বলা মুশকিল। বহু ইউরোপীয়ই একই অভিযোগ করেন। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার যে, একজন হবু প্রেসিডেন্ট কিভাবে একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন এবং তা করে ইউরোপীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ভেঙেচুরে ফেলতে ইচ্ছুক পপুলিস্ট পার্টিগুলোকেই সমর্থন যোগান।  
নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে তার অফিস থেকে দেয়া ও সোমবার জার্মান সংবাদপত্র বিল্ড ও লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প মার্কেল ও পুতিনের ওপর তার সমান আস্থার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি দু’জনকেই বিশ্বাস করি। তবে আমরা দেখতে চাই কতদিন তা থাকে। এটা বেশিদিন থাকবে না।
ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই জানেন যে, কিভাবে একটি উসকানিমূলক সাক্ষাৎকার দিতে হয়। তিনি ন্যাটোর ব্যাপারে অতীতের সমালোচনার পুনরুক্তি করেন যে, ন্যাটো সন্ত্রাস মোকাবেলায় অকেজো। তবে সাথে সাথে তিনি যোগ করেন যে, ন্যাটো এখনো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
হিলারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার উপদেষ্টা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ন্যাটোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর নিকোলাস বার্নস বলেন, ১৯৪৫ সালের পর আমরা যে উদার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশ্চাত্যের নেতৃত্ব দেয়া উচিত, ট্রাম্পের মন্তব্য এ ধারণার প্রতি সরাসরি আক্রমণ।
বার্নস বলেন, ন্যাটোকে অকেজো বলা, ইইউর ভাঙনের প্রতি সরাসরি সমর্থন দেয়া, মার্কেলকে হেয় করা এবং পুতিনের কাতারে তাকে ফেলা হচ্ছে আইজেনহাওয়ার থেকে বর্তমান পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুসৃত ৭০ বছরের আমেরিকান নীতি ও কৌশলের মৌলিক লংঘন। তিনি বলেন, ন্যাটো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পার্থক্যকারী মহাশক্তি যেমন আমাদের এশীয় মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী শক্তি। (অসমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:১৫ এএম says : 0
আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করাটা খুবই কঠিন কাজ। তারপরও আমি মাঝে মধ্যে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসেডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে দুএকটা কথা বলি। আমি একই কথা বার বার বলছি তিনি হোয়াইট হাউজে ঢুকার আগেই ওয়াশ হয়ে হোয়াইট রং ধারন করেই হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করবেন। কাজেই এখানে বিশ্ববাসীর ভাববার কিছুই নেই। আরো একটা কথা যেটা বলিনি সেটা হচ্ছে যে তিনি আমরা যেভাবে একজন ব্যবসায়ীকে ভেবে থাকি তিনি সেই ধরনের ব্যবসায়ী নন। তিনি হচ্ছেন ব্যবসায়ীদের উপর ব্যবসায়ী। তাই তিনি একজন কঠিন ব্যবসায়ী যাকে সাংবাদিকরাও ব্যবসায়ী হিসাবে কিছুই ধরতে পারেন নি। তাই আমাদেরকে বুঝতে হবে তিনি একজন আসাধারন লোক তাকে চেনা খুবই কঠিন। তিনি কি বলবেন আর কি করবেন এটা কেহই বুঝতে পারবেন না। তার একটা কথা হয়ত অনেকেই ভুলে গেছেন আমি মনে করিয়ে দিতে চাই তিনি বলেছিলেন নির্বাচন সুষ্ট হলে “আমি আবশ্যই জীতব” ঠিক তাই হয়েছে। এখান থেকেই আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে ওনার সম্পর্কে, নয়ত হোঁচট খেতে হবে। তবে এটা ঠিক বাংলাদেশের কূটনৈতিকরা যদি ........ এজেন্ডা পুরনে ব্যস্ত না থাকেন তবে আমেরিকার সাথে এবার বাংলাদেশের একটা ভাল সম্পর্ক হবার সম্ভবনা রয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন