বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

এ জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা নওয়াব সলিমুল্লাহ

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইবরাহিম রহমান : নওয়াব সলিমুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গত ১৬ জানুয়ারি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো আলাপ-আলোচনা চোখে পড়ল না। এ জাতির মূল স্বপ্নদ্রষ্টা নওয়াব সলিমুল্লাহকে আজ জাতি ভুলতে বসেছে। ইতিহাস না পড়লে বোঝা যায় না তিনি এ জাতির বিনির্মাণে কী অবদান রেখে গেছেন।
যুগ¯্রষ্টারা বা নওয়াব সলিমুল্লাহরা যুগে যুগে জন্মায় না। শতবর্ষে একবার জন্মায়। আমেরিকার স্বাধীনতার জনক জর্জ ওয়াশিংটন, গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ আব্রাহাম লিংকন, মানবাধিকারের জন্য জীবন উৎসর্গকারী মার্টিন লুথার কিং, আল্লামা ইকবাল, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শওকত আলী এরা যুগ¯্রষ্টা ইতিহাসের বরপুত্র।
আমাদের ভাগ্যবান পূর্বপুরুষগণ নওয়াব সলিমুল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে দেখেন, আমাদের প্রজন্ম তার অবদানের সুৃবিধাভোগী হয়েও তাকে নিয়ে একবারও ভাবি না, চিন্তাও করি না। বিশেষ করে বর্তমান জমানায় তার কথা চিন্তা করাও যেন একটা অপরাধ।
উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটিশ ভারতে পিছিয়ে পড়া পূর্ববাংলার অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নওয়াব সলিমুল্লাহর অবদানের ব্যাপ্তি ও গভীরতা এ প্রজন্মের অজানা। ইতিহাসবিমুখ এ প্রজন্ম সুবিধাভোগী হয়েও আজ আমরা আধুনিক বাংলাদেশ ও তার বিনির্মাণে নওয়াব সলিমুল্লাহর অমূল্য অবদানের কথা জানারও চেষ্টা করি না। আমরা এক আত্মভোলা অকৃতজ্ঞ প্রজন্ম। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (যা বর্তমানে বুয়েট নামে খ্যাত), সলিমুল্লাহ এতিমখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ইঞ্জিনিয়ারিং হোস্টেল, ঢাকা শহরের পানি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ছাড়াও বাংলার অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে তার নাম জড়িয়ে আছে। তিনি ঢাকাসহ পূর্ববাংলার বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, মাদরাসা, হোটেল, হাসপাতাল ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। পূর্ববাংলার কৃষি উৎপাদন, হস্তশিল্প সম্প্রসারণে নিজ খরচে ঢাকায় কৃষিপণ্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করে গেছেন।
নওয়াব সলিমুল্লাহর পূর্ব পুরুষ খাজা আব্দুল হাকিম মোগল স¤্রাট মোহাম্মদ শাহর আমলে কাশ্মীরের গভর্নর ছিলেন। ১৭৩৯ সালে নাদির শাহ যখন ভারত আক্রমণ করেন তখন খাজা আবদুল হাকিম সিলেট অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। নওয়াব সলিমুল্লাহর নিকটতম পূর্বপুরুষ খাজা আলিমুল্লাহ ঢাকায় বসবাস করতেন। নিজের শ্রম ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি ব্যবসায় প্রচুর সাফল্য লাভ করেন। ঢাকা তাদের ব্যবসার অনুকূল বিধায় তারা ঢাকায় স্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু ও ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। খাজা আলিমুল্লাহ সুন্নি মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতি তার দরদি নজর ছিল। তিনি হোসেনি দালানের ব্যবস্থাপনা ও পবিত্র মোহররমের অনুষ্ঠানাদিতে অর্থ সাহায্য করতেন। খাজা আবদুল গণি ছিলেন খাজা আলিমুল্লাহর সুযোগ্য সন্তান। তিনি পাশাপাশি সুন্নি মুসলিমদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বস্তুতপক্ষে সুন্নি মুসলিমদের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন।
১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সরকার খাজা আবদুল গণিকে নওয়াব খেতাবে ভূষিত করেন। দুই বছর পর অর্থাৎ ১৮৭৭ সালে পরিবারের প্রথম সন্তানের জন্য নওয়াব খেতাব নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ১৮৬৪ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠার পর নওয়াব আবদুল গণি ও তার ছেলে নওয়াব আহসান উল্লাহ মিউনিসিপ্যালিটির সাথে জড়িত হন। তারা উভয়েই ঢাকা শহরের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন।
ঢাকা শহরে পঞ্চায়েত প্রথা নওয়াব পরিবারের উদ্ভাবন। ছোটখাটো বিচার সালিশ ছিল পঞ্চায়েতের কাজ, যা আজও বহাল। নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৮৭১ সালের ৭ জুন আহসান মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নওয়াব খাজা আহসান উল্লাহ ও মাতা ছিলেন বেগম ওয়াহিদুন্নেসা। তার দাদা নওয়াব খাজা আবদুল গণির নামেই ঢাকা সচিবালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী সলিমুল্লাহ ছোটবেলায় ঘরোয়া পরিবেশে উর্দু, আরবি, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষা শেখেন।
১৮৯৩ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি গ্রহণ করলেও দুই বছরের মাথায় তা ছেড়ে দিয়ে তিনি ময়মনসিংহে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯০১ সালে পিতা খাজা আহসান উল্লাহর মৃত্যুর পর আহসান মঞ্জিলে ফিরে এসে পুরো জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কলকাতাকে রাজধানী করে পূর্ববাংলা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা মিলে গঠিত ছিল তখন বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি প্রদেশ। এর মধ্যে পূর্ববাংলা ছিল সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া উপেক্ষিত এলাকা। এই অঞ্চলের মুসলিমদের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে পূর্ববাংলা ও আসাম সমবায়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠনের জন্য ১৯০৩ সালে শুরু হয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। ওই সময় তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সহযোগীদের নিয়ে সারা পূর্ববাংলা চষে বেড়ান। তার ডাকে ১৯০৪ সালের ১১ জানুয়ারি আহসান মঞ্জিলে পূর্ববাংলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এক সভা হয়।
ওই সভায় তিনি বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার কিছু বিষয়ে বিরোধিতা করে তার দৃঢ় মতামত ব্যক্ত করেন। এক মাস পর বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকা এসে নওয়াব সলিমুল্লাহর আতিথ্য গ্রহণ করেন। সেখানে বড় লাট বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার সকল বিষয় আলোচনা করে এক সমঝোতায় পৌঁছান। সেই সমঝোতা অনুযায়ী ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। পূর্ববাংলার পিছিয়ে পড়া জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। দীর্ঘদিন পর ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা ফিরে পায়। ঢাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়। ১৯০৫-১১ সময়ের মধ্যে স্কুল-কলেজে ভর্তির হার ৩৫% শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নতুন প্রদেশে ব্যবসায়ীরা নতুন উদ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯০৬ সালে আঞ্চলিক সওদাগররা চট্টগ্রাম বেঙ্গল জাহাজ সার্ভিস চালু করেন। ওই সময় পূর্ববাংলার জনগণের জন্য প্রত্যেকটি সফলতা ছিল একেকটি মাইলফলক।
বঙ্গভঙ্গ আদেশ কার্যকরের দিনই নওয়াব সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বে ঢাকার নর্থব্রুক হলে মুসলিম নেতাদের সভায় ‘মোহামেডান প্রভিন্সিয়াল ইউনিয়ন’ নামে মুসলমানদের একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম সৃষ্টি হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ১৯০৬ সালের ২৭-৩০ ডিসেম্বর নওয়াবের শাহবাগের বাগানবাড়িতে সর্ব ভারতীয় মুসলিম নেতাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সারা ভারত থেকে ৮০০০ ডেলিগেট যোগদান করেন। নওয়াব সলিমুল্লাহ ওই সম্মেলনের অভ্যর্থনা ও প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। জাস্টিস শরীপ উদ্দিন (কলকাতা হাইকোর্ট) সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। নওয়াব ভিকারুল মুলকের সভাপতিত্বে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক অধিবেশন। নওয়াব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে এবং হাকিম আফজাল খানের সমর্থনে মহামান্য আগাখানকে মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নওয়াব মোহসিন উল মুলক ও নওয়াব ভিকারুল মুলক যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনে মোট ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। সকল খরচ বহন করেন নওয়াব সলিমুল্লাহ নিজে। ১৯০৯ সালের ২১ মার্চ হিন্দু-মুসলিম নেতাদের একত্র করে ‘ইম্পেরিয়েল লীগ অব ইস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম’ নামে একটি শক্তিশালী সামরিক সংস্থা গঠন করেন তিনি।
নতুন প্রদেশ ঘোষণার পর পূর্ববাংলার অবহেলিত ও উপেক্ষিত মুসলিম জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে জোতদার, জমিদার, মহাজন, কলকাতাবাসী ডাক্তার, উকিল, মোক্তারসহ আত্মকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগে। এসব ক্ষমতাশালী এলিট শ্রেণীর লোকজন বঙ্গভঙ্গকে মেনে নিতে পারেননি। তাদের প্ররোচনায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রদেশজুড়ে সন্ত্রাসী আন্দোলন শুরু হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহকে শত্রু ঘোষণা করে কুমিল্লায় গুলি করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ঢাকার পথে ট্রেন লাইনচ্যুত করা হয়। অবহেলিত মুসলিম স্বার্থবিরোধী গোষ্ঠী বঙ্গভঙ্গ আদেশ বাতিলের জন্য প্রচ- আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যোগ দেন।
প্রবল আন্দোলনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯১১ সালের ডিসেম্বরে রাজা পঞ্চম জর্জ দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা প্রদান করেন। এই ঘোষণা কার্যকর হয় ১৯১২ সালের ১ এপ্রিল। এই সুযোগে ভারতের রাজধানীও কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে নওয়াব সলিমুল্লাহ আশাহত হয়ে পড়েন। প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া জিসিআইই ব্যাজ ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং পূর্ববাংলার অবহেলিত মুসলিমদের উন্নয়নে আট দফা দাবি পেশ করেন। এসব দাবির মধ্যে ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট, কেন্দ্রীয় সরকারের একজন শিক্ষা অফিসার। বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্টের জন্য তিনি রমনা এলাকায় জমি প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দেন। এই দাবিসমূহ পূরণের জন্য তিনি বড় লাটের উদ্দেশ্যে ১৭ ও ২০ ডিসেম্বর দুটি চিঠি লেখেন। চিঠি দুটির কপি এখনও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। মূলত নওয়াব সলিমুল্লার চাপেই ব্রিটিশ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়।
দুঃখের বিষয় এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর টাঙ্গাইলের জমিদার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীসহ কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির উদ্যোগে বহু বিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালের ২১ জুলাই। নওয়াব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে পূর্ববাংলার মুসলিমদের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি তার কলকাতার বাড়িতে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন তার বয়স ছিল ৪৪ বছর। ধারণা করা হয় বঙ্গভঙ্গবিরোধী অথবা ব্রিটিশ সরকার তাকে গুলি অথবা বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। তার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সিলগালা করা কফিনে ব্রিটিশ সৈন্যদের কড়া প্রহরায় নদীপথে ঢাকায় এনে বেগম বাজারে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সড়ক বা রেলযোগে লাশ আনতে সাহস পায়নি ব্রিটিশ সরকার।
তার লাশের কফিন ঢাকায় আনা হলে হাজার হাজার লোক নেতার লাশ দেখতে চাইলেও দেখতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তার নিকটাত্মীয়দের শেষ দেখার জন্যও লাশ খোলা হয়নি। দাফনের পরও ৬ মাস কবর স্থানে সৈন্যদের প্রহরা ছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল পরবর্তী কোনো সরকারই তার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে কোনো প্রকার তদন্তের ব্যবস্থা করেনি। নওয়াব সলিমুল্লাহর স্বপ্নের পূরণ ১৯৪৭ সালের পূর্ব পাকিস্তান অবশেষে আজকের বাংলাদেশ।
লেখক : নওয়াব সলিমুল্লাহ মেমোরিয়েল কমিটির উপদেষ্টা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন