ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বের গতিধারা নির্ধারণের অঙ্গীকারের মধ্যদিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। শুরু হলো ট্রাম্প যুগ। এর মাধ্যমে দেশটির একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামার আট বছরের শাসনামলের অবসান ঘটলো। গতকাল স্থানীয়সময় বেলা ১২টায় শপথ পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। শপথের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির উদ্দেশে অভিষেক ভাষণ দেন দেশটির নতুন কমান্ডার ইন চিফ।
ভাষণে ডোনাল্ড জে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টায় এক হয়েছে। তিনি বিশ্বের ক্ষমতা আমেরিকার জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দিনে দিনে আমেরিকার কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে, শ্রমিকরা হয়েছে বেকার, আর আমেরিকার অর্থে শক্তিশালী হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। তিনি বলেন, এটা অতীতের কথা। কিন্তু এখন আমরা আমেরিকাকে গড়ে তুলব নিজেদের মতো করে। এখানে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান, আমেরিকার শ্রমিকরা কাজ পাবে, আমরা সীমান্তকে শক্তিশালী করবো। তিনি দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমেরিকানরা এক জাতি। তাদের কারো কষ্ট সমগ্র জাতির কষ্ট এবং কারো সাফল্য সমগ্র জাতির সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইসলামী জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি জঙ্গিবাদী তৎপরতার মূলোৎপাটনে সর্বশক্তি বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের চমৎকার দেশে আমাদের মতো করে নির্মাণ করবো সেতু, বিমানবন্দর, ট্যানেল, রেলওয়ে। আমরা আমেরিকান হাতে আমেরিকান শ্রমিকদের দিয়ে গড়ে তুলব সবকিছু। তিনি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমেরিকার জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে বলেন, আমি কখনো আপনাদের ভুলবো না। তিনি আমেরিকার জনগণের বিজয়যাত্রা শুরু হলো বলেও উল্লেখ করেন।
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা দায়িত্ব হস্তান্তরে তাদের মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, আমরা আমেরিকার জনগণরা দেশকে পুনর্গঠনে এক মহান জাতীয় প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছি। আমরা আমেরিকা ও বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী পথচলা নির্ধারণ করব।
তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, আজ তোমাদের দিন। এই উৎসব তোমাদেরই। এই আমেরিকা তোমাদের, এই দেশ তোমাদের। আমরা জনগণের হাতে সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেব, যে ক্ষমতা এতদিন ওয়াশিংটন ডিসির হাতে ছিল।
সামনে বাধা-বিপত্তি মোকাবেলায় প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা হয়তো বাধার সম্মুখীন হবো, বন্ধুর পথে পড়তে হবে, কিন্তু আমরা লক্ষ্যে পৌঁছবোই।
এই অনুষ্ঠানে শপথ পড়েন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও।
ঘড়ির কাটায় তখন ওয়াশিংটনে ঠিক দুপুর ১২টা। ইংরেজিতে মাত্র ৩৫ শব্দে হয় শপথ। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের হাতে থাকা বাইবেলের কপির ওপর বাম হাত রেখে শপথবাক্য উচ্চারণ সম্পন্ন করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বললেন-
(আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে শপথ করছি যে, আমি বিশ্বস্ততার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দফতর পরিচালনা করব এবং সাধ্যের সবটুকু দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রতিপালনে সচেষ্ট থাকবো।)
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে এক জাঁকজঁমকপূর্ণ শপথ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ শপথ বাক্য পাঠ করান দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রবার্টস। আর এই শপথ বাক্য পাঠের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্টের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার পদে স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। আর এরপরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঠিক আগে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে শপথ পাঠ করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তাকে শপথ পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি চার্লস থমাস।
তার আগে বক্তব্য রাখেন ডেজিগনেটেড সার্ভাইভর হোমল্যান্স সিকিউরিটি মন্ত্রী জেহ জনসন। তার আগে নাউ উই বিলং গানটি পরিবেশন করে ওয়াশিংটনের একটি সঙ্গীত দল। এর আগে বক্তব্য রাখেন নিউ ইয়র্কের সেনেটর চাক সুমার।
বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির হন। তার আগে সেখানে পৌঁছান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একসঙ্গে প্রবেশ করেন সাড়ে ১১টার পরপরই। আর তার প্রায় ১৫ মিনিট আগে মিসেস মেলানিয়া ট্রাম্প ও মিসেস পেন্স অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। তাদের আগেই এক সঙ্গে পৌঁছান মিশেল ওবামা ও জিল বাইডেন। তারও আগে অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছান ট্রাম্পের ছেলেমেয়েরা।
স্থানীয় সময় ঠিক ১১টায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একই মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ক্যাপিটল হিলে এসে পৌঁছান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে ছয়টি প্রার্থনা কর্মসূচি ছিল। এর তিনটি ছিল ঈশ্বর বন্দনার আর তিনটি ছিলো আশীর্বাদমূলক।
গানের মধ্য দিয়ে শপথ পর্ব শুরু হয়। ‘মবট্যাব কয়ার’ দলের সঙ্গে মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত গান ১৬ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের গট ট্যালেন্টসের জ্যাকি ইভানকা। ওয়াশিংটনের বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ার মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দেন লাখো মানুষ। সপরিবারে ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টদের অনেকে। এ সময় তাদের পরিবার, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরিবার, কংগ্রেসের সদস্যরা ও যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোটের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠান শেষ হতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স মিলে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামা ও তার পরিবার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানান। ওবামা পরিবারের সদস্যরা এ সময় ক্যাপিটলের ওয়েস্ট লন থেকে এক্সিকিউটিভ ওয়ানে উঠেন। এক্সিকিউটিভ ওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসামরিক এয়ারক্র্যাফট। দেশটির প্রেসিডেন্ট যখন এতে ওঠেন তখন এর নাম হয় এক্সিকিউটিভ ওয়ান। তিনি সস্ত্রীক সেখান থেকে অ্যান্ড্রু বিমান ঘাঁটিতে গিয়ে হোয়াইট হাউসের স্টাফদের সাথে মিলিত হন এবং সংক্ষিপ্ত বক্ততা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর এক্সিকিউটিভ ওয়ানে করে অ্যান্ড্রু বিমান ঘাঁটি ত্যাগ করেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সঙ্গে প্রাত:রাশ গ্রহণে হোয়াইট হাউসে যান নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ট্রাম্প ও তার স্ত্রী হোয়াইট হাউসে গেলে তাদের সাদরে গ্রহণ করেন ওবামা-মিশেল। হোয়াইট হাউসে আসেন সস্ত্রীক নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। তাদের সাদরে গ্রহণ করেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী।
হোয়াইট হাউসে প্রাত:রাশের পর নব একই মোটরকেডে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যান ইউএস ক্যাপিটলে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে।
আরো আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রার্থনার জন্য চার্চে যান। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এতে যোগ দেন। এ ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গও সকালের প্রার্থনায় অংশ নেন। প্রার্থনা হয় হোয়াইট হাউজের উল্টোদিকের সেইন্ট জন্স চার্চে।
এদিনের কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিল, বেলা ১টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স, মেলানিয়া ট্রাম্প ও ক্যারেন পেন্স যৌথ কংগ্রেসনাল ইনঅগুরাল কমিটির দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ গ্রহণ। এটিও আয়োজন করা হয় ইউএস ক্যাপিটলে। বেলা ২টা ৩০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট একটি সামরিক রিভিউতে অংশ নেন। ইউএস ক্যাপিটলের ইস্ট ফ্রন্টে তা আয়োজন করা হয়। বেলা ৩টায় ট্রাম্প ও পেন্স হোয়াইট হাউজের বাইরে বিশেষ উদ্বোধনী প্যারেড অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সন্ধ্যা ৭টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স, মেলানিয়া ট্রাম্প ও ক্যারেন পেন্স লিবার্টি অ্যান্ড ফ্রিডম বলে অংশ নেন। মাউন্ট ভেরন এভিনিউতে ওয়াশিংটন কনভেনশন সেন্টারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফ্রিডম বলের পরপরই তারা যান মিলিটারি বল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। এটি আয়োজন করা হয় জাতীয় ভবন জাদুঘরে।
এদিকে বিশাল এই আয়োজন ঘিরে নিরাপত্তায় কোনো কমতি রাখেনি মার্কিন প্রশাসন। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতেই মোতায়েন ছিল ২৮ হাজার পুলিশসহ নিরাপত্তাকর্মী।
সুদীর্ঘ ছয় দশকের রীতি ভেঙে চার্লি ব্রোটম্যানকে বাদ দিয়ে স্টিভ রে-কে অভিষেক অনুষ্ঠানের ঘোষক বানান ট্রাম্প। প্যারেডে যোগ দেন আলাবামার ঐতিহ্যবাহী তালাডেগা কলেজ। পারফর্ম করেন মর্মন কয়ার, দ্য রকেটস, টর্নেডো ম্যাচিং ব্র্যান্ড, দ্য পিয়ানো গাইসসহ প্রায় ৪০টি দল।
ট্রাম্পের শপথ এবং ক্ষমতা গ্রহণের মুহূর্ত দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল পুরো বিশ্ব। গত বছরের নভেম্বরের ৮ তারিখে মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওবামার জমানার ৫০ বিশ্বস্ত আধিকারিকের ওপরই আপাতত ভরসা ট্রাম্পের!
বারাক ওবামা সময়ে সময়ে কর্মরত ৫০ জন আধিকারিককেই নিজের সময়ে কাজে বহাল রাখলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের আগের সিদ্ধান্ত থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি সরে এসেই এমন কাজ করলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার পরই ট্রাম্প ও দলের সদস্যরা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, তৎকালীন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে রাজনৈতিকভাবে যতজনকে সরকারি পদে নেয়া হয়েছিল, তাদেরকে প্রয়োজনে সরে যেতে হবে। এমনকি রাষ্ট্রদূতরাও বাদ পড়তে পারেন। সেই হিসেব অনুসারে কোপ পড়ার কথা ছিল ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মার ওপরও। কিন্তু এবার নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে ট্রাম্পের অফিস জানিয়েছে, ৫০টির বেশি পদে বহাল থাকছেন ওবামার জমানার বিশ্বস্ত অফিসাররা। কারণ, তাদের ওপরই আপাতত ভরসা রাখতে চাইছেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিদায় বেলায় ওবামাকে জড়িয়ে কাঁদলেন কর্মীরা
ইতিহাস গড়ে এসেছিলেন, গেলেনও ইতিহাস গড়েই! যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিদায়টা যেন একটু বেশিই করুণ মনে হল! চোখের পানিতে তাকে বিদায় জানালেন কর্মীরা। এতদিন যেখানে ছিল তার বাস, যেখানে কাটিয়েছেন স্মৃতির সোনালী অনেকটা সময় সেই প্রিয় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল ওয়াইট হাউসই এখন আর তার নয়! এক জীবনে কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না, সেই অনুপাত মেনে সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হল তাকে। গত বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসে প্রিয় প্রেসিডেন্টকে জড়িয়ে ধরেন তার প্রশাসন কর্মীরা; এমন কিছু ছবি এসেছে হোয়াইট হাউসের ব্লগে।
এর আগে, সাংবাদিকদের সঙ্গে শেষবার সংবাদ সম্মেলন করে বিদায় জানান ওবামা। দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তব্যে শোনান গণতন্ত্র রক্ষায় সংবাদমাধ্যমের অপরিহার্য ভূমিকার কথা। এ সময় হাউসের প্রেস কর্পসকেও আন্তরিক ধন্যবাদ দেন তিনি।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে একে একে হাত মেলান, দেখান ‘বিজয়’ চিহ্নও। নতুন দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উপদেশ দিতেও ছাড়েননি তিনি।
ট্রাম্প মসনদ বুঝে নেবার পর সাবেক কমান্ডার ইন চিফ স্ত্রী মিশেল এবং দুই মেয়ে সাশা ও মালিয়াকে নিয়ে পাম স্প্রিংয়ের সাগর সৈকতে ঘুরবেন, সময় কাটাবেন। পাশাপাশি ওবামা লিখতে চান বইও। এর মধ্যে স্মৃতি কথামূলক বই থাকতে পারে বলে গুঞ্জন প্রবল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস রচনা করেছিলেন বারাক ওবামা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন। এরপর ২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায়ও বিজয়ী হন। শুরু থেকেই বিভিন্ন বিরোধিতা ও সমালোচনার মধ্যে দিয়ে তাকে কাজ করে যেতে হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন স্মরণ রাখার মতো একজন রাষ্ট্রনায়ক হয়তো হতে পেরেছেন বটে!
ট্রাম্পের শপথ : বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ
ওয়াশিংটনে এক ব্যাপক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনুষ্ঠানে তার ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টায় এক হয়েছে। তবে তার শপথ গ্রহণের দিনে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ক্যাপিটল বিল্ডিং এ এসে পৌঁছান তখন তাকে বেশি গুরুগম্ভীর দেখাচ্ছিল। হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটনের বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ার মধ্যে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাষণে বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন জনগণের কাছে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ওবামা দম্পতির সঙ্গে এক চা চক্রে যোগ দেন।
ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ: ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের জন্য যখন সবকিছু চূড়ান্ত, তখন ওয়াশিংটনের রাস্তায় দেখা গেছে এক বিশাল ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল। বিক্ষোভকারীদের মুখ ঢাকা ছিল মুখোশ এবং স্কার্ফে। তারা ট্রাম্পবিরোধী সেøাগান দিতে দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় গাড়ি এবং দোকানের জানালা ভাঙচুর করে। অনেককে হুইসেল বাজাতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। বিশ্বের আরও অনেক শহরেও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিরাট বিক্ষোভে যোগ দেয় বহু মানুষ
বিশ্ব জুড়ে বিক্ষোভ : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিনটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।
তবে রাশিয়া ছিল ব্যতিক্রম। সেখানে দ্বিতীয় দিনের জন্য আনন্দ উৎসব করেছেন তার একদল সমর্থক। তাদের আশা ট্রাম্পের শাসনামলে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে।
লন্ডনে টাওয়ার ব্রিজের ওপর ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়, যাতে লেখা ছিল, "বিল্ড ব্রিজেস, নট ওয়ালস।" অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্ত দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেবেন বলে যে হুমকি দিয়েছিলেন তার প্রতি ইঙ্গিত করে এতে বলা হচ্ছে, দেয়াল তৈরি না করে সেতু নির্মাণ করুন। বিক্ষোভকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বের জন্য এক বড় হুমকি বলে বর্ণনা করেন। ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেও।
ম্যানিলার মার্কিন দূতাবাসে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ : নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের প্রতিবাদে এবং ফিলিপিন্স থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার দাবিতে ম্যানিলায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছে ২শ’রও বেশি ফিলিপিনো। কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবারের এ বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে ট্রাম্পবিরোধী সেøাগান দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। প্রায় ২শ’ পুলিশ কর্মকর্তার কড়া নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ হয়। এক বিক্ষোভকারী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন পরিবর্তন হলেও তাদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি চলতেই থাকবে কিংবা বর্তমানের চেয়ে তা আরও খারাপ আকার ধারণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এখন তাদের সেনা সরিয়ে নেয়ার সময়।”
গতবছর অক্টোবরে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি বাতিলের অঙ্গীকার করেন। আগামী দু’বছরের মধ্যে ফিলিপিন্সে মার্কিন সেনা উপস্থিতি অবসানের লক্ষ্যে তিনি এ চুক্তি বাতিল করে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিক্ষোভকারীরাও সেটিই চাইছে। তাছাড়া, ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ ফিলিপিনো এবং দেশটির অভিবাসী হতে ইচ্ছুক ফিলিপিনোরা সমস্যায় পড়তে পারে বলেও তারা উদ্বিগ্ন। ট্রাম্প তার অভিবাসনবিরোধী নীতির আওতায় ফিলিপিনোসহ বহু মানুষকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করতে পারেন। -বিবিসি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন